ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত বরিশাল নগরীর ৫ লাখ বাসিন্দা

বিদ্যুত সংযোগে আটকা পড়েছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিদ্যুত সংযোগে আটকা পড়েছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে ॥ বিদ্যুতের তারে আটকা পড়েছে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল মহানগরীর দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাওনা বকেয়া বিদ্যুত বিল পরিশোধ না করায় এ প্লান্ট দুটিতে নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়নি। সূত্রমতে, গত ২ মাস পূর্বে ঠিকাদার এই দুটি স্থাপনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করলেও এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। কবেনাগাদ চালু হবে তা বলতে পারছে না কোন দফতরই। ফলে সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৫ লাখ নগরবাসী। ইতোমধ্যে প্লান্টের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টির পানি জমে মরিচা ও শ্যাওলা জমেছে। তার পরেও সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বিদ্যুতের অভাবে নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না নবনির্মিত এই প্লান্ট দুটি। এ বিষয়ে বিসিসি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দায়সারা বক্তব্য ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরিশাল বিদ্যুত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পূর্বের প্রায় ১২ কোটি টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে। ওই টাকা পরিশোধ করা না হলে কোনভাবেই নতুন করে এ প্লান্টে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হবে না। বরিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের দাবি, মাত্র ৬ মাস এ প্রকল্পটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ সময়ের বিদ্যুত বিলসহ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিচালনার সব খরচ তারা বহন করবে। বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, সিটির আওতাধীন ৫ লাখ নগরবাসীর জন্য ৪ কোটি ৫০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। বর্তমানে উৎপাদন করা হচ্ছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি। কিন্তু ধারণক্ষমতা না থাকায় নগরীর বর্ধিত এলাকার বিশাল অংশ বাদ দিয়ে বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ কোটি ৫৭ লাখ লিটার পানি। ফলে নগরবাসীর বাকি পানির চাহিদা মেটাতে কীর্তনখোলা নদী তীরে বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং নগরীর রূপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ শুরু করা হয়। ওই প্লান্ট চালুর মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ করে ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বরিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ও বরিশাল নগরীতে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় নগরীর বেলতলা ও রূপাতলীতে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটির কাজ শেষে গত দুই মাস পূর্বে তা ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেয়া হয়েছে। সরেজমিনে প্লান্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি চালু না হওয়ায় ভেতরের হাউসে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন অংশে মরিচা ও শ্যাওলা জমেছে। প্লেটে শ্যাওলার আস্তর পড়েছে। সীমানা প্রাচীরের দেয়াল ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কীর্তনখোলা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের গাইড ওয়ালের ৩০০ ফুট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনরোধে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী কর্মী প্রশিক্ষণসহ ৬ মাস প্লান্টটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর পরিচালনা করবে। কিন্তু বিদ্যুত বিভাগকে বিষয়টি বলা হলেও তারা কোন কর্ণপাত করছেন না। তিনি আরও জানান, বেলতলার প্লান্টটি কীর্তনখোলা ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় জিও ব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু কাজ করেছিল। তবে স্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধের প্রয়োজন রয়েছে। নতুবা প্লান্টটি ঝুঁকির মধ্যে পরবে। এ ব্যাপারে বিদ্যুত বিভাগ ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেন জানান, বিসিসির কাছে তাদের ১২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই টাকা পরিশোধ না করলে নতুন সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়। প্রকল্পটি এখন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের থাকলেও ৬ মাস পরে সেটি সিটি কর্পোরেশনেরই হবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিসির পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপন বলেন, বকেয়া বিদ্যুত বিল পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে বিদ্যুত বিভাগের নগরবাসীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×