ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় খুন হলেন টুম্পা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় খুন হলেন টুম্পা

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ওয়ার্ড কাউন্সিলর স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় নুসরাত জাহান টুম্পাকে (২৭) খুন হতে হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গাজীপুর সদরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ সোলায়মান মিয়ার সঙ্গে একাধিক মেয়ের সম্পর্ক ছিল। এতে বাধা দেয়ায় টুম্পাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর লাশ বেডরুমে ফেলে দরজায় তালা লাগিয়ে সে পালিয়ে যায়। এদিকে পুলিশ জানায়, ঘটনার পর নিহতের স্বামী ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোলায়মানকে খোঁজা হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিহত টুম্পার বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সোলায়মান মিয়াকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অন্যদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে টুম্পার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ একেএম শফিউজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, টুম্পাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুর আগে তাকে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়। এতে তার সারা শরীরে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্তের আগে টুম্পার লাশের সুরতহাল রিপোর্টে পুলিশ উল্লেখ করে, টুম্পার ডান কান, থুতনির নিচে এবং হাতের বিভিন্ন জায়গায় গোল লালচে দাগ পাওয়া গেছে। সুরতহাল প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই শাহেদ পারভেজ জানান, সোমবার রাতে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ৪ নম্বর ভবনের বি-২ নম্বর ফ্ল্যাটের বেডরুমে নুসরাত জাহান টুম্পাকে (২৭) অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মা সেলিনা বেগম প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় জানালার গ্রিল কেটে টুম্পাকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক টুম্পাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসআই শাহেদ পারভেজ জানান, টুম্পা ওই বাসাতেই থাকতেন। দুপুরে তার মা সেলিনা বেগম টুম্পাকে ফোন দেন। ফোনে সাড়া না পেয়ে তার মা টুম্পার বাসায় আসেন। তিনি বাসায় এসে দেখেন ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করেও কোন সাড়াশব্দ পাননি। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তিনি জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করেন। বাসার ভেতরে টুম্পাকে অচেতন অবস্থায় দেখে প্রথমে তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সেখান থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে বোর্ডের প্রধান ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক একেএম শফিউজ্জামান জানান, টুম্পাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে খুন করার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নিহতের মা সেলিমা বেগম জানান, টুম্পার স্বামী মোঃ সোলায়মান মিয়া গাজীপুর সদরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার ভবানীপুর গ্রামে তার বাড়ি। টুম্পার বাবা নজরুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি একই জেলার কোনাবাড়ি কাশেমপুরে। ১ ভাই ১ বোনের মধ্যে টুম্পা সবার বড় ছিল। নিহত টুম্পার চাচা জহিরুল ইসলাম জানান, ১২ বছর আগে জয়দেবপুর থানাধীন ভবানী গ্রামের নূরু মিয়ার ছেলে সোলায়মানের সঙ্গে টুম্পার বিয়ে হয়। তাদের নাসি নামে আট বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। নাসি উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। তিনি জানান, চার-পাঁচ বছর ধরেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। সোলায়মানের সঙ্গে একাধিক মেয়ের সম্পর্ক ছিল। সর্বশেষ বুবলি নামের এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সোলায়মান। গত ঈদে ওই মেয়ের সঙ্গে সোলায়মান দার্জিলিং ঘুরতে যান। এই নারী ঘটিত দ্বন্দ্বের কারণে সোলায়মানই টুম্পাকে খুন করে। নিহতের মামা মোঃ আল মামুন জনকণ্ঠকে জানান, টুম্পাকে উত্তরা নিজ বাসায় পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে সোলায়মান পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডাঃ একেএম শফিউজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, টুম্পাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। বিকেলে টুম্পার লাশ মর্গ থেকে গ্রহণ করা হয়। পরে গাজীপুর কোনাবাড়ি কাশেমপুর ডাঃ শফিক জেনারেল হাসপাতালের পাশে পৈত্রিক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টুম্পা যে কলেজে পড়াশুনা করতেন সেই সিএইচ খান কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কোনাবাড়িতে রাস্তায় মানববন্ধন করেছেন। তারা টুম্পার হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও তার স্বামী কাউন্সিলর সোলায়মানকে গ্রেফতার দাবি করেন। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় জানাজা শেষে টুম্পাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
×