ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা

চার লেনে উন্নীত হবে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চার লেনে উন্নীত হবে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক

সমুদ্র হক ॥ রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের মহাসড়ক এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত বিদ্যমান মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকার মিরপুর থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত আরেকটি সংযোগ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ের লিংক হিসেবে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি বগুড়া থেকে গাইবান্ধার একাংশে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করে ঝুঁকি কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের রংপুর পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়ককে দুটি প্রকল্পের আওতায় চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম প্রকল্প টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১শ’ ৯০ কিলোমিটার বিদ্যমান পথ চার লেনে রূপান্তর করার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার আলাদা আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেনের কাজ শুরু হওয়ায় ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছতে কিছুটা বেশি সময় লাগছে। এই কাজ যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে গিয়ে শেষ হয়ে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে দ্বিতীয় অংশের কাজ শুরু হবে (উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু সেতু চার লেনের)। পশ্চিম প্রান্তের সড়ক সিরাজগঞ্জ শহরের বাইরে দিয়ে বিদ্যমান বাইপাস হয়ে চান্দাইকোনা বগুড়ার বাইপাস গাইবান্ধার পলাশবাড়ি হয়ে রংপুর জেলা শহরে গিয়ে ঠেকবে। বিদ্যমান এই মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরের পর্যায়ে বাড়তি কিছু নতুন কাজ করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে তিনটি ফ্লাইওভার (উড়াল সড়ক), একটি ওভারপাস রেলপথ, ৩৯টি আন্ডারপাস, ১১টি পথচারী সেতু ও ১শ’ ৯৩ টি ছোটবড় সেতু ও কালভার্ট নির্মিত হবে। এ ছাড়াও ধীরগতির যানবাহনের জন্য সড়কের দুই ধার দিয়ে পৃথক লেন থাকবে। চার লেন মহাসড়ক ও বাড়তি নতুন কাজ করার জন্য প্রায় ২শ’ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। চার লেনের এই কাজ শেষ হতে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। এই সময়ের পর ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তবে সড়কপথে দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হবে না। জ্যাম যাতে না হয় সে জন্য উড়াল সড়ক নির্মিত হচ্ছে। সূত্র জানায়, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চার লেনের এই মহাসড়ককে যাতে আট লেনে উন্নীত করা যায় সে ব্যবস্থা থাকছে। কারণ, কোন মহাসড়ক বেশি লেনের হওয়ার সঙ্গেই যানবাহনের চাপও বেড়ে যায়। এর বাইরে বাংলাবান্ধা ট্রানজিট পয়েন্ট ঘিরে পঞ্চগড় থেকে ঢাকার মিরপুর এবং পঞ্চগড় থেকে খুলনার মংলা বন্দর পর্যন্ত পূর্বের পরিকল্পনার এশিয়ান হাইওয়ের লিংকের সড়কগুলোকে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ এই সড়কটির সঙ্গে চার লেনের মহাসড়কের সংযোগ স্থাপন করা হবে। এদিকে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে বগুড়ার চান্দাইকোনা থেকে গাইবান্ধার ধাপেরহাট পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার পথে যে ইন্টারসেকশনগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি সেই ব্ল্যাক স্পটগুলোকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রিত রাখার বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই পথে ১৫টি ব্ল্যাক স্পট চিহ্নিত হয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি গত বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দীর্ঘ এই সড়কের বগুড়ার ৬৫ কিলোমিটার অংশে ব্ল্যাক স্পটগুলো হলো শেরপুরের ঘোগা ব্রিজ, ঘোগা বাসস্ট্যান্ড, ছোনকা বাজার, মির্জাপুর বাজার, নয়মাইল হাট, নাসিরুন্নেছা স্কুল ইন্টারসেকশন, বাঘোপাড়া বাজার ফাঁসিতলা। গাইবান্ধার ৩১ কিলোমিটার অংশের ব্ল্যাকস্পটগুলো গোবিন্দগঞ্জ বাজার, বাজারের মোড় ইন্টারসেকশন, কাকরী বালুয়াহাট বাজার, কালীতলা বাজার, পলাশবাড়ি ইন্টারসেকশন, কালীতলা বাসস্ট্যান্ড, কোমরপুর বাজার ও ধাপেরহাট। সূত্র জানায়, পরবর্তীতে ৯৬ কিলোমিটার এই সড়ক চার লেনে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।
×