ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুরি হওয়া অর্থের দেড় কোটি ডলার দুই এক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চুরি হওয়া অর্থের দেড় কোটি ডলার দুই এক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের উদ্ধার হওয়া দেড় কোটি ডলার ‘দুই-এক দিনের মধ্যে’ হাতে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সচিবালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা বোধহয় আমরা পেয়ে গেছি, অথবা পাচ্ছি আজকে-কালকের মধ্যে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় আমরা পেয়েই গেছি। এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেয়া হবে বলে গত রবিবার জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। আদালতের রায়ে ফেরত পাওয়া টাকা বাংলাদেশে আসতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা বোধ হয় আইদার আমরা পেয়ে গেছি, আজকে কালকের মধ্যেই পাচ্ছি। আমরা মনে হয় পেয়েই গেছি। টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোমবারই তাকে জানানো হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। বাকি টাকার কি পরিমাণ ব্যাংকিং চ্যানেলে আছে- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘না না, সেটা তো আমরা বলতে পারব না। বাকিটা কেইসের ব্যাপার, সুতরাং ওটা বলা মুশকিল। জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। এরমধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতেই আটকে দেয় এবং পরে তা ফেরত দিয়েছে। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের জুপিটার শাখার কয়েকটি হিসাব থেকে চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে। ফিলিপিন্সের বিভিন্ন সংস্থা চুরি যাওয়া অর্থের কিছু অংশ নানাভাবে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া সেই অর্থের মধ্য থেকে ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফেরত পেতে ফিলিপিন্সের আদালতে বাংলাদেশের একটি আবেদন বিচারাধীন ছিল। বাংলাদেশের হয়ে আবেদনটি করে ফিলিপিন্সের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) ও ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। সোমবার দেশটির রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট এক শুনানি শেষে অর্থ ফিরিয়ে দিতে এক আদেশ জারি করে। ওই আদেশে বলা হয়, এই অর্থের আইনসম্মত মালিক এখন বাংলাদেশ। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আদালতের এ রায়ের মধ্য দিয়ে ফিলিপিন্সে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের যে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার মালিকানা নিয়ে আর কোন বিতর্ক থাকল না। এখন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেয়া হবে বলেও জানায়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ওই সময় সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গবর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। গত ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন-বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার বরাবরে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সস্ট্রাকশন পাঠানো হয়েছিল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রায় এক মাস গোপন রাখা যৌক্তিক ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল কি না এবং অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা ও পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কমিটিকে। বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে দেয়া হয় পুরো প্রতিবেদন। কাল তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই দিন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেয়া হবে। জানা গেছে, আগামী তিন সপ্তাহের সফরে ২৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন অর্থমন্ত্রী। তার আগেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই সফরে তিনি নেদারল্যান্ডস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন। সফর শেষে ১২ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
×