ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর;###;সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আজ চুক্তি

জাপানীদের নিরাপত্তা দেবে সিভিল এ্যাভিয়েশন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জাপানীদের নিরাপত্তা দেবে সিভিল এ্যাভিয়েশন

আজাদ সুলায়মান ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজে নিয়োজিত জাপানী নির্মাণ সংস্থার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরাপত্তা দেবে সিভিল এ্যাভিয়েশন। ইতোমধ্যে জাপানের শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থা নিপ্পন কোই কোং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ (বুধবার) এ চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই মঙ্গলবার সিভিল এ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের দফতরে নিপ্পন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। নিপ্পন ও জাইকার প্রতিনিধিদের সন্তোষজনক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কৌশল নিয়েও উভয়পক্ষের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিভিল এ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গণি জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। জাপানীরা সিভিল এ্যাভিয়েশনের নেয়া নিরাপত্তা পদক্ষেপের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল বলেও জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের স্বার্থে জাপানীদের বাংলাদেশের যে কোন স্থানে নিরাপদে চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার নিপ্পন কোম্পানির ৬ প্রতিনিধি সিভিল এ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে নিরাপত্তার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকার চাপের মুখে পড়ে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। এর পরই বিদেশীদের আস্থা বাড়তে থাকে। গত পরশু দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকদের চলাচলের ওপর জারিকৃত সতর্কাবস্থা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিরাপদ পরিবেশ ফিরে আসার পরও বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর ও থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাপানী কোম্পানি ও জাইকার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ইস্যুটি সামনে আনা হয়। এ দুটো প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল জাপানীর নিরাপত্তার বিষয়ে সিভিল এ্যাভিয়েশনের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (বুধবার) সিভিল এ্যাভিয়েশন সদর দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের নিপ্পনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে নিরাপত্তার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সিভিল এ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে নিশ্চিত হন নিপ্পন কোম্পানির ৬ সদস্যের প্রতিনিধিরা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়- সিভিল এ্যাভিয়েশন জাপানী প্রতিনিধিদলকে নিশ্চিত করেছে -প্রকল্প কাজ চলাকালীন সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা টহল থাকবে। আর্মড পুলিশ ও আনসার ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি থাকবে। এ সম্পর্কে এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গণি বলেন, নিরাপত্তা সার্বিক বিষয়টি শুধু সিভিল এ্যাভিয়েশনই দেখবে না; যখন তারা প্রকল্পে থাকবেন তখন সেখানকার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন একটা গুরুদায়িত্ব পালন করবে। সিভিল এ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী জনকণ্ঠকে বলেন- ঐতিহাসিক এ প্রকল্পটির জন্য ১২০ কোটি টাকায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে জাপানের নিপ্পন কোই কোং লিমিটেডকে। যুগের চাহিদা পূরণ এবং আকাশপথে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে সরকার প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বিশ্বের অন্যতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরের সাফল্যের একটি সুফল হলো এ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য জাপানী পরামর্শক নিয়োগ। তিনি জানান- পদ্মার ওপারে বঙ্গবন্ধুর নামে দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্য স্থানের জায়গাজমি, যাচাই-বাছাই করতে জাপানের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে চারটি স্থানে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। স্থানগুলো হচ্ছে -মাদারীপুরের শিবচরের চরজানাজাত, ঢাকার দোহারের চরবিলাসপুর, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের কেয়াইন ও লতব্দি। এর মধ্যে যে কোন একটিকে চূড়ান্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে জাপানের পরামর্শকদের প্রতিবেদন ও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদ্মা নদীর দক্ষিণপারের কোন স্থানই প্রাধান্য পাবে। এক প্রশ্নের জবাবে সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী বলেন, এটি বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। দ্রুততম সময়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেয়া হচ্ছে জাপানের নিপ্পন কোম্পানিকে। সিভিল এ্যাভিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির কার্যাদেশে বলা হয়েছে -ঢাকার সঙ্গে উত্তম যোগাযোগ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়টি সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনপূর্বক স্থান নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের লক্ষ্যে মোট ৯টি স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করে ঢাকা থেকে দূরত্ব, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জমির পর্যাপ্ততা, আন্তর্জাতিক রুট, সড়ক, রেল ও নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা, পুনর্বাসন, যাতায়াত খরচ বিবেচনা করে উপরোক্ত চারটি স্থান নির্বাচন করা হয়। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যত আন্তর্জাতিক রুট রয়েছে তার সবই দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। দূরত্বের বিবেচনায়ও আন্তর্জাতিক বিমানসমূহের অবতরণের জন্য পদ্মার দক্ষিণপ্রান্ত উপযুক্ত স্থান। এখানে বিমানবন্দর স্থাপিত হলে এর পাশে এক লাখ একর খাস জমিতে একটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণ সম্ভব হবে এবং এর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে নরিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক নৌ-কন্টেনার টার্মিনাল স্থাপন করার সুযোগ থাকবে। মূলত এসব সুবিধা বিবেচনায় নেয়ার বিষয়েও ইতোমধ্যে ব্রিফিং দেয়া হয়েছে নিপ্পনকে।
×