ছোটবেলায় নোবেল পুরস্কারের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু বেশি কিছু বুঝতাম না তখন, তবে জেনেছি বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরাদের দেয়া হয় এই পুরস্কার। এই পুরস্কারের অর্থমূল্যও যেমন বেশি, তেমনি সম্মানের বেলায়ও। তখন প্রশ্ন জাগতকে, কেন এত টাকা পুরস্কার দেন? তখন বড়রা বলতেন নোবেল নামক এক বিজ্ঞানীর গল্প, যিনি কিনা বানিয়েছিলেন এক অদ্ভুত জিনিস ‘ডিনামাইট’, যা তার আগে বানাতে পারেনি আর কেউ। তখন জিজ্ঞেস করতাম ডিনামাইট কী? বড়রা বলতেন বোমা। আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল। যার নামে পুরস্কৃত হয়ে খ্যাতিমান হয়েছেন অনেকেই। একজন সুইডিশ রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক ও অস্ত্র নির্মাতা তিনি। ডিনামাইটের আবিষ্কারকও। ১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি উইল করে সব অর্থসম্পত্তি নোবেল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য রেখে যান। উইলে আরও উল্লেখ করেন, ওই ইনস্টিটিউটের কাজ হবে প্রতিবছর কয়েকটি মাধ্যমে নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে অর্থ প্রদান করা। আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল একজন সুইডিশ রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক এবং অস্ত্র নির্মাতা। তিনি ডিনামাইট আবিষ্কার করেন। ব্যবসায়েও বিশেষ প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন। বিখ্যাত ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোফোর্সের মালিক ছিলেন অনেকদিন, প্রতিষ্ঠানটিকে এক সময় অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। তার নামে ৩৫০টি ভিন্ন ভিন্ন পেটেন্ট ছিল যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ডিনামাইট। মৃত্যুর আগে উইল করে তিনি তার সুবিশাল অর্থসম্পত্তি নোবেল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য রেখে যান। উইলে আরও বলে যান, নোবেল ইনস্টিটিউটের কাজ হবে প্রতিবছর নোবেল পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা। আলফ্রেড নোবেল ১৮৩৩ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জন্মগ্রহণ করেন। সে বছরই তার বাবা ইমানুয়েল নোবেল দেউলিয়া হন। ১৮৩৭ সালে ইমানুয়েল নোবেল স্টকহোমে তার পরিবার রেখে প্রথমে ফিনল্যান্ড এবং পরে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে যান ভাগ্যের সন্ধানে। সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪২ সালে পরিবারের সবাইকে সেন্ট পিটার্সবার্গে নিয়ে আসেন ইমানুয়েল। ১৮৭২ সালে আলফ্রেড নোবেলের বাবা ইমানুয়েল মারা করেন। ১৮৮৯ সালে নোবেলের মা আন্দ্রিয়েতি মারা যান। ১৮৫০-১৮৫২ সাল পর্যন্ত আলফ্রেড নোবেল ফ্রান্সের পারিতে গিয়ে টি. জুলস পিলৌজ গবেষণাগারে কাজ করেন কিছুদিন। জার্মানি, ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্রেও ভ্রমণ করেন। ১৮৫৩-১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা। যুদ্ধের প্রথম দিকে নোবেল কোম্পানি অনেক সমৃদ্ধি অর্জন করে কিন্তু যুদ্ধ শেষে যখন রুশ সামরিক বাহিনীর অর্ডার উঠিয়ে নেয়া হলে তখন দেউলিয়া হয়ে যায়। আলফ্রেড নোবেল মরিয়া হয়ে নতুন পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করতে থাকেন। তার রসায়ন শিক্ষক নিকোলাই এন জিনিন তাকে নাইট্রোগ্লিসারিনের কথা মনে করিয়ে দেন। ১৮৬২ সালে নোবেল নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ১৮৬৩ সালে নোবেল তার প্রথম নাইট্রোগ্লিসারিন-জাত পণ্যের পেটেন্ট করেন। একে ইংরেজীতে বলা হচ্ছিল ‘ব্লাস্টিং অয়েল’, এটি এক ধরনের বিস্ফোরক। এরপর ‘ব্লাস্টিং ক্যাপ’ নামক একটি ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন যা নাইট্রোগ্লিসারিন বিস্ফোরণের ট্রিগার হিসেবে কাজ করবে। এ সময়ই তিনি স্টকহোমে চলে আসেন এবং এখানেই গবেষণা চালিয়ে যান। ১৮৬৭ সালে ডিনামাইট আবিষ্কার করেন। তিনি ডিনামাইট বিক্রি শুরু“করেন যা, নোবেল ব্লাস্টিং পাউডার হিসেবে পরিচিত। ডিনামাইট ক্রমেই একটি নিরাপদ গানপাউডার এবং নাইট্রোগ্লিসারিন হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। নোবেলের পেটেন্ট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। লাইসেন্সবিহীনদের এর ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এই ডিনামাইট আলফ্রেড নোবেলের জীবনে এক বিরাট সৌভাগ্য এনে দেয়। তিনি প্রচুর অর্থ-বৈভবের অধিকারী হন। নোবেল পুরস্কার প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটা বেশ মজার। আলফ্রেড নোবেলের অধিকাংশ আবিষ্কারই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। ডিনামাইট বা অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র যেমন মানুষের কল্যাণের কাজে ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ধ্বংসাত্মক কাজেও।
সে কারনে অনেক নিন্দা জোটে আলফ্রেড নোবেলের কপালে। ১৮৮৮ সালে আলফ্রেডের ভাই লুডভিগ ফ্রান্সে ঘুরতে গিয়ে মারা যান।
এক ফ্রেঞ্চ পত্রিকা ভুলে ধরে নেয় আলফ্রেড নোবেলই মারা গেছেন। সেই পত্রিকা তখন আলফ্রেডের মৃত্যুর সংবাদ ছাপে। সেখানে তারা আলফ্রেডেকে বর্ণনা করে ‘মৃত্যুর সওদাগর’ বলে। আলফ্রেড মানুষ হত্যার বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করেছেন, কিন্তু সেই টাকা পুরো মানব জাতির কল্যাণের কোন কাজে ব্যয় করেননি বলে তার প্রচ- নিন্দা করে। পত্রিকার এই লেখাটি আলফ্রেড নোবেল নিজে পড়েন। পড়া শেষে তিনি বেশ কষ্ট পান। অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন তাঁর উপার্জিত অর্থ মানবকল্যাণের কাজে ব্যয় করবেন। তিনি ভাবলেন, এমন একটি ভাল কাজ করে যাবেন, যা দিয়ে পৃথিবীর মানুষের চোখে চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকতে পারেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮৯৫ সালে তার করে যাওয়া একটি উইলের মর্মানুসারে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। নোবেল মৃত্যুর আগে উইলের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করে যান। শুধু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়, নরওয়ে থেকে। বাকি ক্ষেত্রে স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, তার উইলের শর্ত অনুযায়ী তার মোট সম্পত্তির ৯৪ শতাংশই তিনি এই পুরস্কার প্রদানের কাজে ব্যয়ের নির্দেশ দেন। ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। সে বছর থেকেই সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফলতা এবং অনন্য সাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। মোট ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার দেয়া হয়। এগুলো হলো- পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি। নোবেল পুরস্কারকে এসব ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শীর্ষ সংবাদ: