ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে ॥ নজরুল

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জঙ্গীবাদের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে ॥ নজরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদবিরোধী অভিযানের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। দলকে নির্মূল করতেই সরকার নিজ দলের নেতাকর্মীকে দিয়ে জঙ্গীবাদবিরোধী প্রশাসনিক কমিটি গঠন করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, সরকার আসলে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন করতে চায় না। তারা এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমন করতে চায়। সোমবার পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। বলেন, জঙ্গীবিরোধী অভিযানের নামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে গঠিত কমিটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাজ করছে। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা কাল্পনিক অভিযোগ করে নানাভাবে হয়রানি করছে। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের তালিকা করে গ্রেফতার ও হয়রানির মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। এ কাজে তারা জঙ্গীবাদে আরও উৎসাহিত করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে এসব নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলে আন্তরিক হলে সকলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনে বিএনপি আহ্বানে সাড়া দিত। সন্ত্রাস নির্মূল সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া প্রদান না করে বলেছে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় দাঁড় করে যদি বলা হয় জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে তাহলে তা হবে একটা বড় ভুল। সেজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে জঙ্গী কর্মকা-ের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। দেশে আরও বিভিন্ন যে রাজনৈতিক দল আছে, তাদের নিয়ে সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সেটা যখন হবে তখন তা সবাইকে জানানো হবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদের নামে কাল্পনিক অভিযোগে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। ঈদ শুভেচ্ছা পালনকালেও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কতজনকে এ অভিযোগে আটক করা হয়েছে তা জানাতে না পারলেও দলের আটককৃত নেতাকর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। বলেন এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। ঈদের ছুটির কারণে এ সংখ্যা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি সব সময়ই উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। অতীতেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে জঙ্গীদের গ্রেফতার করে বিচারের ব্যবস্থা করেছে। ২০০৪ সালে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গড ফাদারসহ অন্যদের সফলভাবে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। অন্য সময়ও বিএনপির সরকার সচেষ্ট ছিল উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস দমনে। কারণ বিএনপি আদর্শিকভাবেও উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদবিরোধী। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশে সাম্প্রতিক উগ্রবাদী হামলার পরপরই এর বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো বিএনপিসহ বিরোধী দলকে হীন উদ্দেশ্যে দোষারোপ করে ইচ্ছকৃতভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা নস্যাৎ করেছে। তিনি বলেন, দেশে জনগণের মৌলিক অধিকার না থাকায় উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকারকে ভোটার বিহীন সরকার উল্লেখ করে বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু সরকার আসলেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন করতে চায় না। তারা এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমন করতে চায়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটের কারণে লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চামড়া ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু সরকার নির্বিকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন। সরকারদলীয় লোকদের চাঁদাবাজির কারণে এবারের ঈদ কেটেছে নিরানন্দে। নারী ও শিশু নির্যাতন আজ দেশের নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নারী ধর্ষণের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। সোমবারেও গণমাধ্যমে ধর্ষিতা নারীর আত্মহত্যার মর্মান্তিক খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার মতিঝিল এলাকায় আধিপত্য ও চাঁদাবাজির ভাগাভাগি নিয়ে গোলাগুলিতে যুবলীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বনানীতে দরিদ্র রিক্সা চালককে ভাড়া চাওয়ার কারণে এক যুবলীগ নেতা গুলি করে তাকে আহত করে। অথচ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অজানা সুতার টানে জামিনে সে বেরিয়ে আসে। আর বিএনপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে একের পর এক রিমান্ডে এনে হয়রানি করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তকদির হোসেন মোঃ জসিম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×