ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মদিনে ভালবাসায় সিক্ত অরূপ রতন চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জন্মদিনে ভালবাসায় সিক্ত অরূপ রতন চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক এক ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। কালের স্রোতে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ৬৪টি বছর। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণীজন একাধারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও মাদকবিরোধী আন্দোলনের অগ্রপথিক। সোমবার উদ্্যাপিত হলো এই শিল্পী ও চিকিৎসকের ৬৪তম জন্মদিন। বক্তার কথা, ফুলেল শুভেচ্ছা ও গানের সুরে শিল্পীকে জানানো হলো শুভেচ্ছা। শরতের বিকেলে সেগুনবাগিচার আখতার ইমাম মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সঙ্গীতবিষয়ক পত্রিকা সরগম। জন্মদিনের এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ফুল দিয়ে অরূপরতনকে শুভেচ্ছা জানান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, খুরশীদ আলম, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, চলচ্চিত্র শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন, অরুনা বিশ্বাস, সরগম সম্পাদক কাজী রওনক হাসান প্রমুখ। আয়োজনের শুরুতেই সরগম সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীরা ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সুরে স্বাগত জানায় অরূপরতন চৌধুরীকে। এরপর খুরশীদ আলমের কণ্ঠে গীত হয় ‘জন্মদিনে বলতে এলাম, শুভ তোমার জয়ন্তী’ । গান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা হয়। হাসানুল হক ইনু বলেন, দুষ্কৃতকারীদের বলতে চাই, তোমরা যাই করো না কেন, জীবনের চাকা চলবে। ঈদ উৎসব, দুর্গাপূজাসহ সকল ধরনের সামাজিক আয়োজন বন্ধ হবে না, চলবে। এটাও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধের একটি অংশ। অরূপ রতন চৌধুরী পাকিস্তানী ও সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে নিজেকে খাপ না খাইয়ে, যেমন যুদ্ধ করেছিলেন, ঠিক তেমনি জঙ্গী-সন্ত্রাসের বিপক্ষে দাঁড়িয়েও যুদ্ধ করছেন। এতেই তার জন্ম সার্থক। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা একটি অপ্রত্যাশিত সময় পার করছি। যেখানে একাত্তরের সকল মূল্যবোধ আক্রান্ত। সেই মূল্যবোধকে তুলে ধরা প্রয়োজন। আমি আশা করব, অরূপ রতন এতে নেতৃত্ব দেবেন। আমি তার দীর্ঘ সফল কর্মময় জীবন কামনা করছি। ভালবাসায় সিক্ত অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে আমাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। সমাজের বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে। আমি দেশের জন্য কাজ করেছি, দেশকে ভালবেসেছি। এভাবেই পথ চলতে চাই। সমাজের জন্য কাজ করতে চাই, এটাই আমার প্রত্যাশা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সরগমের নির্বাহী সম্পাদক উল্কা হোসেন। গেয়ে শোনান ‘ওই ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায়’। অলিখিত উপাখ্যান নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক অনালোচিত চরিত্র রহিমউল্লাহ। নীল বিদ্রোহপরবর্তী সময়ে খুলনা অঞ্চলের সারলীয়া নামক স্থানে অত্যাচারী বেনিয়াদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন প্রতিরোধ। চাষীদের দিয়ে জোর করে জঙ্গল কেটে আবাদ করানোর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল তাঁর কণ্ঠস্বর। সেই প্রতিবাদের পরিণতিতে প্রাণ হারাতে হয় সাহসীপ্রাণ এই বিপ্লবীকে। কথাসাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরির পাতায় লেখা হয়েছিল তাঁর বীরত্বাগাথার কথা। সেখানে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে রিজিয়া রহমান লিখেছিলেন অলিখিত উপাখ্যান নামের উপন্যাস। আর উপন্যাসটিকে আশ্রয় করে ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হয়েছে আরেকটি নতুন নাটক। নাট্যদল বাতিঘর নিয়ে আসছে তাদের দ্বিতীয় প্রযোজনা। অলিখিত উপাখ্যান নামের নাটকটিতে উঠে এসেছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অজানা এক দৃশ্যপট। অলিখিত উপাখ্যান উপন্যাসকে গবেষণার ভিত্তিতে নাট্যরূপ দিয়েছেন মুক্তনীল। নাট্যরূপ দেয়ার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। প্রযোজনাটিতে কত্থকের ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। নাটকটির নির্দেশনা প্রসঙ্গে নির্দেশক মুক্তনীল জনকণ্ঠকে বলেন, অলিখিত উপখ্যান উপন্যাসটি পড়ার পর মনে হয়েছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি যেন ঢাকা পড়ে আছে অন্ধকারে। ব্রিটিশ বেনিয়াদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন রহিমউল্লাহ। অথচ এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি কোথাও উঠে আসেনি। রহিমউল্লাকে নিয়ে তেমনভাবে কোন কাজ হয়নি। শোষক ও শোষিতের মাঝের অবস্থানে অবহেলিত রয়ে গেলেন এই বিপ্লবী চাষী। নীল বিদ্রোহের পর ওই ঘটনার মধ্যেও ছিল স্বাধীনতার বার্তা। কিন্তু কোন এক কারণে অজানা রয়ে গেছে দ্রোহের আগুনমাখা অনালোচিত অধ্যায়টি। অজানা সেই বীরত্বগাথাকে তুলে ধরতেই নাটকটি নির্দেশনা দেয়ার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে। প্রযোজনাটিতে রহিমউল্লাহ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রূপ দেবেন স্মরণ বিশ্বাস। বঙ্কিম চন্দ্র চরিত্রে রূপ দিয়েছেন পান্থ আফজাল। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারানা তাবাসসুম চেরি, মনিরুজ্জামান ফিরোজ, সাফিন আহম্মেদ, সাবরিনা শারমিন, সাদ্দাম রহমান, খাদিয়া ইউসুফ বৃতা, সঞ্জয় গোস্বামী, শিশির সরকার প্রমুখ।
×