ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালকে জরিমানা

ভুল অস্ত্রোপচারে পঙ্গু হতে চলেছেন এক ব্যক্তি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভুল অস্ত্রোপচারে পঙ্গু হতে চলেছেন এক ব্যক্তি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ সফল অস্ত্রোপচার না করার ফলে পঙ্গু হতে বসেছেন এক রোগী। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই রোগীকে দ্রুত আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। রোগীর পরিবারের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করেন র‌্যাবের গোয়েন্দারা। তদন্তে ওই অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার ট্রমা সেন্টার এ্যান্ড অর্থোপেডিক হসপিটাল লিমিটেড থেকে এক চিকিৎসকসহ চারজনকে আটক করে ৮ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদ- প্রদান করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরবর্তী সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরও যতœশীল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার র‌্যাব-২ এর উপপরিচালক মোঃ মাহবুব আলম ও এএসপি মোঃ শাহিদার রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডাঃ মোঃ শাহজাহান ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ড্রাগ সুপার মোঃ রাজিবুল হাবিব এবং র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সরওয়ার আলমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা ট্রমা সেন্টার এ্যান্ড স্পেশালাইজড অর্থোপেডিক হসপিটাল লিমিটেডে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্টের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার, নোংরা পরিবেশে ল্যাব, অপারেশন থিয়েটার পরিচালনা, ওষুধ রাখার ফ্রিজে তেলাপোকাসহ মৃত পোকামাকড় থাকা, ফ্রিজের টেম্পারেচার সঠিক না থাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান না থাকার দায়ে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), ব্যবস্থাপক মোঃ আলী জিন্নাহ (৪০), ফার্মাসিস্ট মোঃ পাপ্পু ইসলাম (২৩) এবং রিসিপশনিস্ট আফরোজা আক্তারকে (২৩) আটক করা হয়। আটককৃতরা দোষ স্বীকার করলে বিচারক তাদের ৮ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে তিন মাসের কারাদ- প্রদান করেন। র‌্যাবের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ঈদের আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি আহত হন। তিনি ভর্তি হন ঢাকা ট্রমা সেন্টার এ্যান্ড স্পেশালাইজড অর্থোপেডিক হসপিটাল লিমিটেডে। হাসপাতালে তার ৩-৪ দিন চিকিৎসা হয়। আহত ব্যক্তির পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রায় ৭০ হাজার টাকা বিল আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দশ হাজার টাকা কমে ওই ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বুঝে নেয়। অস্ত্রোপচারটি জটিল ছিল। অস্ত্রোপচারের পর রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরে রোগীর পরিবারকে ভুল বোঝায়। চিকিৎসকরা রোগীকে সেখানে রেখে চিকিৎসা করলে অনেক খরচ হবে বলে জানায়। পাশাপাশি এও জানায়, রোগীর অবস্থা দিন দিন উন্নতির দিকে। বেসরকারী হাসপাতালে না রেখে, রোগীকে আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা করালে, অনায়াসে রোগ সেরে যাবে। সেই সঙ্গে অনেক টাকাও বাঁচবে। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করেন। রোগীর পরিবারও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন পরামর্শে খুশি। রোগীকে যথারীতি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। অস্ত্রোপচার সফল না হওয়ায় রোগীর দুইটি পা অচল হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকরা রোগীর পরিবারকে বিষয়টি খুলে বলেন। এমন কথা শোনার পর রোগীর স্ত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তিনি নিরুপায় হয়ে অভিযানের সপ্তাহখানেক আগে র‌্যাব-২ কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই র‌্যাবের গোয়েন্দারা তদন্ত করেন। তদন্তে বিষয়টির সত্যতা মিলে। তারই ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত ট্রমা সেন্টারে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাব কর্তৃপক্ষ অভিযোগকারিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, ট্রমা সেন্টারের ওপর তাদের নজরদারি আছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়মের তথ্য জানা গেলে আবারও অভিযান চালানো হবে। বিষয়টি সম্পর্কে আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
×