ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি ব্যবস্থা আধুনিকায়নে দঃ কোরিয়া ২৮০ কোটি টাকা ঋণ দেবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভূমি ব্যবস্থা আধুনিকায়নে দঃ কোরিয়া ২৮০ কোটি টাকা ঋণ দেবে

ফিরোজ মান্না ॥ সারাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য এবার দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ সহযোগিতায় প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পে সহজ শর্তে কোরিয়া ২৮০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫৬ কোটি টাকা। মোট ৩শ’ ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে দুই বছর। গত জুনে এ বিষয়ে কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ইআরডির একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয়া হবে। তবে পুরো প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের একটি টিম। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে এই প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগ করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিক করার জন্য সরকার এর আগে বেশ কয়েক দফা প্রকল্প হাতে নিয়েও সফল হতে পারেনি। এবার ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে দক্ষিণ কোরিয়া এগিয়ে এসেছে। তারা দশমিক শূন্য ১ ভাগ সুদে ঋণ সুবিধা দেবে। তারা সারাদেশের সব ধরনের জমির অবস্থা একটা ডেটাবেজের মধ্যে নিয়ে আসবে। উন্নতমানের সফওয়্যার ব্যবহার করা হবে এই প্রকল্পে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন ‘টেন্ডার ডকুমেন্টের’ কাজ চলছে। টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রক্রিয়া শেষ হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্র মূল্যায়ন করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে কোরিয়ার সরকারের প্রতিনিধিদল। তারা বিভাগ থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত নেটওয়ার্কিংয়ে আওতায় কিভাবে নিয়ে আসা যায় এ বিষয়েও পরামর্শ দেবে। যে প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তাদের পুরো কাজও মনিটর করবে কোরিয়ার সরকার। শুধু ডেটাবেজের কাজটি করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পে মন্ত্রণালয়ের কিছু জনবল থাকবে। কাজ পাবে যে প্রতিষ্ঠান ওই প্রতিষ্ঠান বাকি জনবল নিয়োগ করবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভূমির মালিক সহজেই তার ভূমির অবস্থান জানতে পারবেন। তখন ভূমি বিরোধ অনেক ক্ষেত্রে কমে যাবে। সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য সরকারের হতে নেয়া প্রকল্পগুলো মুখথুবড়ে পড়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আড়াই বছরের প্রকল্প পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। ঢাকা মহানগরের ভূমি কমপিউটারাইজড করার জন্য হাতে নেয়া প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে আবার তা বন্ধ হয়ে গেছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা কমপিউটারাইজড হলে জমির মালিকরা লাভবান হবেন। তখন তাদের আর ভূমি অফিসে দৌড়াতে হবে না। নিজের জমির তথ্য নিজেই দেখতে পারবেন। এ কারণেই দেশের ৭টি সিটি কর্পোরেশনে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনা কমপিউটারাইজড করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্প দু’টি সফলভাবে বাস্তবায়ন করার পর পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও কমপিউটারাইজড করার প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা ছিল। ঢাকা মহানগরের জমি কমপিউরাইজড করার কাজ শুরু করা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। একই সঙ্গে দেশের সাত বিভাগের সাতটি সিটি কর্পোরেশনের জমিও কমপিউরাইজড করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গত পাঁচ বছরে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তেমন একটা হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি বিষয়টি জটিল। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কিছুটা সময় বেশি লাগবে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে-প্রকল্প বাস্তবায়নের সব কিছু চূড়ান্ত হলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়নে হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জালে আটকে গেছে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নানা সুপারিশ। উপেক্ষিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও। ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং আধুনিকায়নের দু’টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আড়াই বছর মেয়াদের দু’টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ভূমি বিরোধ এবং মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, ভূমি ব্যবস্থা আধুনিকায়ন না করতে পারলে সমাজে বিরোধ বাড়তেই থাকবে। আদালতে যে পরিমাণ মামলা হচ্ছে তার অর্ধেকেরও বেশি জমি জমা নিয়ে। এই ব্যবস্থা আধুনিকায়ন হলে কার কতটুকু জমি সহজেই জানতে পারবেন। তখন আর ভূমি অফিসের কারও দ্বারস্থ হতে হবে না। নিজের জমির অবস্থা নিজেই বুঝে নিতে পারবেন। দীর্ঘদিনের নানা প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় সরকার দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি প্রশাসন আধুনকায়নের লক্ষ্যে বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রেজিস্ট্রেশন অফিস ও সেটেলমেন্ট অফিসের সমন্বয়ে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, গতানুগতিক জরিপ ব্যবস্থার পরিবর্তে ‘কন্টিনিউয়াস আপডেটিং অব ম্যাপস এ্যান্ড রেকর্ডস’ পদ্ধতি প্রবর্তন, বিভিন্ন ধরনের জমির শ্রেণীবিন্যাসকরণ, সরকারী খাস ও বন বিভাগের জমি এবং নদী ও খাল চিহ্নিতকরণ, সীমানা বিরোধ ও ভূমিদস্যুতা প্রতিরোধে জনগণের প্রয়োজন মতো নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে জমির আইল-সীমানা পরিমাপের ব্যবস্থা চালুকরণ ইত্যাদি।
×