ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ আর ফেরারি আসামির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ইজারাদার

গফরগাঁওয়ে অবাধে বালু লুট

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গফরগাঁওয়ে অবাধে বালু লুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ১৯ সেপ্টেম্বর ॥ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, হত্যা মামলার ফেরারি আসামিরা খুঁজে বেড়াচ্ছে বানার নদীর বালুমহালের ইজারাদার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য উপজেলার পাতলাশী গ্রামের বালু ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিনকে। বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে না পেয়ে স্বজনদের বলা হচ্ছে, বালুমহাল নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তার ও তার সন্তানের লাশ বানার নদীতে ফেলে দেয়া হবে। পাগলা থানার ওসি মোবাইলে হুমকি দিচ্ছেন বালুমহালে না আসার জন্য। দারোগা বলছেন ছিনতাই মামলা নয়, বালুমহালে এলে এবার ক্রসফায়ার দেয়া হবে। আফাজ উদ্দিন বানার নদীর বালুমহালের ইজারা নিলেও পাগলা থানা পুলিশের সহযোগিতায় বেলদিয়া গ্রামের বালু ব্যবসায়ী শাহ আলম ঢালী, হত্যা মামলার ফেরারি আসামি তললী গ্রামের হারুন মোল্লা ওরফে হারুন মেকার, কুরচাই গ্রামের জামালের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ইজারার দ্বিতীয় দিন থেকেই বালুমহাল দখল করে নিয়েছে। জীবন বাঁচাতে গত দু’মাস ধরে পরিবার-পরিজনসহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বালুমহালের ইজারাদার। ইউএনও সিদ্ধার্থ শংকর কু-ু বলেন, ইজারাদার আফাজ উদ্দিনকে বালুমহাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। শুনেছি বেদখল হয়েছে। এখন বেদখল হয়ে থাকলে আমাদের কিছু করার নেই। জেলা প্রশাসন এটা ইজারা দিয়েছিল, তারাই দেখবে এ বিষয়ে কী করা যায়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার বলেন, আফাজ উদ্দিন বৈধ ইজারাদার, তাকে সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব। থানা-পুলিশের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইজারাদার এ ব্যাপারে পুলিশের উর্ধতন মহলে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন, আশা করি এ বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নেবে। গফরগাঁও সার্কেলের এএসপি আলমগীর বলেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। পাগলা থানা পুলিশকে কোন পক্ষ না নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র, অভিযোগ এবং আদালতে দায়ের মামলা সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এসএ শাখা গত ৯ জানুয়ারি গফরগাঁও উপজেলার বানার (টাংগাব, চাকুয়া, কুরচাই, পাতলাশী মৌজার) ৭৫.৯০ একর বালুমহালের ১৪২৩ বাংলা সনের এক বছর মেয়াদের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আফাজ উদ্দিন ৪১ লাখ ২০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ ডাকধারী ও হারুন মোল্লা ১৬ লাখ টাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডাকধারী নির্বাচিত হন। আফাজ উদ্দিন সর্বোচ্চ ডাকধারী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই হারুন মেকার, তার লোকজন ও পাগলা থানা পুলিশ তার ওপর চড়াও হয়। তারা আফাজ উদ্দিনকে ইজারার টাকা জমা না দেয়ার জন্য হুমকি দেয়, যাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডাকধারী হারুন মেকার এ বালুমহালের ইজারা নিতে পারে। গত ৩০ মে পাগলা থানার ওসি চান মিয়া ইজারাদার আফাজ উদ্দিনকে থানায় ডেকে নিয়ে নির্ধারিত সময়ে বালুমহালের ইজারার টাকা জমা না দিতে বলেন। আফাজ উদ্দিন রাজি না হওয়ায় সারারাত তাকে নির্যাতন করে পরদিন ৩১ মে সকালে ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের মাধ্যমে ৯ জানুয়ারি পাগলা থানায় দায়ের ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ময়মনসিংহ আদালতে প্রেরণ করে। ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর না করে জামিন দেন। ২৭ জুন আফাজ উদ্দিন ইজারামূল্য, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সর্বমোট ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যাংক চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সঙ্গে বালুমহালের দাখিলা চুক্তি সম্পাদন করেন। ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের পক্ষে গফরগাঁওয়ের এসিল্যান্ড শেখ শামছুল আরেফিন ইজারাদার আফাজ উদ্দিনকে বালুমহাল বুঝিয়ে দেন। ইজারাদার আফাজ উদ্দিন জানান, বালুমহালটি বুঝে নেয়ার পরদিনই ২০ জুলাই পাগলা থানার ওসি চান মিয়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে তাকে বালুমহালের ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেন। পাগলা থানার এসআই রেজাউল করিম ও থানার ৪-৫ কনস্টেবলের উপস্থিতিতে হারুন মেকারের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বালুমহাল দখল করে নেয়। এ সময় এসআই রেজাউল করিম ইজারাদার আফাজ উদ্দিনকে হুমকি দিয়ে বলেন, বালুমহালে এলে আগে ছিনতাই মামলা দেয়া হয়েছিল, এবার ক্রসফায়ার দেয়া হবে। এসব ঘটনায় গত ৮ আগস্ট ইজারাদার আফাজ উদ্দিন ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাগলা থানার এসআই রেজাউল করিম, হারুন মেকার ও জামালসহ ৩২ জনের নামে অনধিকার প্রবেশ, বেদখল, ভাংচুর, চুরি, হুমকি, চাঁদাবাজির ধারায় মামলা দায়ের করেন। আদালত ময়মনসিংহের ডিবিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। হারুন মোল্লা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। পাগলা থানার এসআই রেজাউল করিম জানান, এসব ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত করতে ওই এলাকায় যাই বলে আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হযেছে। পাগলা থানার ওসি চান মিয়া বলেন, হারুন মোল্লা বালু উত্তোলন করলেও আফাজ উদ্দিনের ইজারাকৃত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করছেন না।
×