ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্পত্তি ৩১৪টি ;###;আস্থা বাড়ছে রিভিউ প্যানেলে ;###;৫৭ শতাংশ রায় সরকারী সংস্থার পক্ষে, ঠিকাদারের পক্ষে ৪৩ শতাংশ

সরকারী কেনাকাটায় ১১ বছরে অভিযোগ ৩২১

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সরকারী কেনাকাটায় ১১ বছরে অভিযোগ ৩২১

আনোয়ার রোজেন ॥ সরকারী কেনাকাটায় বিরোধ বা আপত্তি মীমাংসায় রিভিউ প্যানেলের প্রতি সংশ্লিষ্টদের আস্থা বাড়ছে। ঠিকাদার ও সরকারী সংস্থার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে এই প্যানেল। সরকারী কেনাকাটায় ঠিকাদারদের অভিযোগ বহু পুরনো। এর মধ্যে অন্যতম অভিযোগই হচ্ছে যোগ্য হওয়ার পরও কাজ না পাওয়া কিংবা পক্ষপাতিত্বের। ২০০৫ সালে এ রকম একটি অভিযোগ দিয়ে শুরু হয়েছিল রিভিউ প্যানেলের যাত্রা। প্যানেলের প্রথম রায় গিয়েছিল অভিযোগকারী ঠিকাদারের পক্ষে। দিনে দিনে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২১টিতে। অভিযোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নিষ্পত্তিও। গত আগস্ট পর্যন্ত ৩১৪টি অভিযোগের চূড়ান্ত নিষ্পত্তিও করেছে প্যানেল। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ রায় গেছে সরকারী সংস্থার পক্ষে। আর ঠিকাদারের পক্ষে গেছে ৪৩ শতাংশ রায়। এ চিত্র রিভিউ প্যানেলের প্রতি উভয়পক্ষের আস্থার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) রিভিউ প্যানেল পরিচালনায় সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে। সূত্র জানায়, ইলেকট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপির) নীতিমালার ৫৬-৬০ ধারায় ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেই প্রশাসনের কাছে ঠিকাদারের টেন্ডার সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিলের নিয়ম রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সাত কর্মদিবসের মধ্যে অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে না পারলে কিংবা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হলে অভিযোগকারী রিভিউ প্যানেলের দ্বারস্থ হবেন। এই নিয়ম মেনেই ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রিভিউ প্যানেল। বর্তমানে ৫টি প্যানেল রয়েছে। এসব প্যানেলে ৩ জন করে মোট ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। প্রত্যেক প্যানেলপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক সচিব বা অতিরিক্ত সচিব, একজন আছেন সর্বোচ্চ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ। বর্তমান প্যানেল-১-এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন নুরুজ্জামান ভূঁইয়া। সদস্য হিসেবে আছেন বেলায়েত হোসেন ও দেওয়ান সুলতান আহমদ। প্যানেল-২ এর প্রধান হলেন এনামুল কবীর। সদস্য এনায়েতুল্লাহ ও সামছুল আলম। প্যানেল-৩-এর প্রধান এম শামসুল হক। সদস্য আওলাদ হোসেন ও আবু আলম চৌধুরী। প্যানেল-৪-এর প্রধান রণজিৎ কুমার চক্রবর্তী। সদস্য বুরহান উদ্দিন আহমেদ ও মনোয়ারা হাকিম আলী। আর প্যানেল-৫-এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল মালেক। সদস্য হিসেবে আছেন জগদীশ চন্দ্র বর্মণ এবং ওবায়দুর রহমান। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, দরপত্র সংক্রান্ত যে কোন অভিযোগ, আপত্তি বা অনুযোগ থাকলে ঠিকাদাররা রিভিউ প্যানেলের শরণাপন্ন হতে পারেন। তবে এর আগে রয়েছে কয়েকটি ধাপ। এগুলো হচ্ছেÑ কোন ঠিকাদার সংক্ষুব্ধ হলে প্রথমে ওই প্রকল্পের পরিচালককে (পিডি) অভিযোগ করবেন। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তিনি অভিযোগের নিষ্পত্তি করবেন। এতে সন্তুষ্ট না হলে অভিযোগকারী ঠিকাদার সরকারের যে সংস্থা টেন্ডার আহ্বান করেছে সেটির প্রধানের কাছে অভিযোগ করবেন। সেখানেও যদি সন্তুষজনক সমাধান না পান তাহলে ওই মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের কাছে অভিযোগ করবেন। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তার জবাবেও সন্তুষ্ট না হলে সেক্ষেত্রে তিনি সিপিটিইউর মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করবেন। মহাপরিচালক তখন অভিযোগটি রিভিউ প্যানেলে পাঠাবেন। রিভিউ প্যানেল শুনানি করে ১২ কার্যদিবসের মধ্যেই তাদের সিদ্ধান্ত বা রায় দেবেন। প্যানেলের রায় বাধ্যতামূলক। রায় প্রত্যাখ্যানের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু যদি কেউ মানতে না চায় তাহলে তাকে এর বাইরে গিয়ে বিচারিক আদালতে যেতে হয়। এ বিষয়ে সিপিটিইউ মহাপরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, উন্নত দেশের সব প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জিং সিস্টেম হিসেবে এটি চালু আছে। এর মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। থ্যাইল্যান্ডে আছে, সিঙ্গাপুরে আছে এমনকি ফিলিপিন্সেও আছে। এটি প্রচলিত বিচারিক ব্যবস্থা এবং নির্বাহী ব্যবস্থার মাঝামাঝি একটি বিচার ব্যবস্থা। সরকার যদি কোন অনিয়ম করে, পক্ষপাতিত্ব করে বা উপযুক্ত কাউকে কাজ না দেয় তখন এই রিভিউ প্যানেলের আশ্রয় নেন তারা। সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর ডিপোটের (সিএমএসডি) আহ্বান করা একটি টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করে টেন্ডারার ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রেনেটা। শুনানি শেষে রিভিউ প্যানেল রেনেটার পক্ষে রায় দেন। এ বিষয়ে রেনেটার পক্ষে অভিযোগকারী মেহেদী আনোয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, সিএমএসডির একটি টেন্ডারে উল্লেখিত নিয়ম যথাযথভাবে মানা হয়নি। অভিযোগের সপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও কাগজপত্র রিভিউ প্যানেলে দাখিল করি। প্যানেলের রায় আমাদের পক্ষেই এসেছে। প্রথমবার অভিযোগ করেই সুফল পেয়েছি। এটি বিডারদের জন্য খুবই ভাল ব্যবস্থা। সূত্র জানায়, ২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩২১টি অভিযোগ জমা পড়েছে রিভিউ প্যানেলে। প্রতিবছরই অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে ২০০৫ সালে একটি, ২০০৬ সালে ১০টি, ২০০৭ সালে সাতটি, ২০০৮ সালে ১১টি, ২০০৯ সালে ২৬টি, ২০১০ সালে ২৫টি, ২০১১ সালে ২৮টি, ২০১২ সালে ৪১টি, ২০১৩ সালে ৩৩টি, ২০১৪ সালে ৪৫টি, ২০১৫ সালে ৫৭টি এবং চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩৭টি অভিযোগ এসেছে। ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১৪টি অভিযোগ। এর মধ্যে ঠিকাদারের পক্ষে রায় হয়েছে ১২১টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে রায় হয়েছে ১৬৩টি অভিযোগের। আগস্ট মাসে নিষ্পত্তিকৃত ৩০টি অভিযোগের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০০৫ সালে একটি অভিযোগের রায় যায় ঠিকাদারের পক্ষে। ২০০৬ সালে ঠিকাদারের পক্ষে যায় চারটি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে যায় ৬টি রায়। ২০০৭ সালে ঠিকাদারের পক্ষে যায় চারটি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে যায় তিনটি। ২০০৮ সালে ঠিকাদারের পক্ষে চারটি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে যায় সাতটি রায়। ২০০৯ সালে ঠিকাদারের পক্ষে ১৩টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে যায় ১৩টি রায়। ২০১০ সালে ঠিকাদারের পক্ষে যায় ১২টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে যায় ১৩টি রায়। ২০১১ সালে ঠিকাদারের পক্ষে ১৪টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে ১৪টি। ২০১২ সালে ঠিকাদারের পক্ষে ২১টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে ২০টি রায়। ২০১৩ সালে ঠিকাদারের পক্ষে ১০টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে ২৩টি রায়। ২০১৪ সালে ঠিকাদারের পক্ষে ১৮টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে ২৭টি রায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ঠিকাদারের পক্ষে যায় ২০টি এবং সরকারী সংস্থার পক্ষে যায় ৩৭টি রায়।
×