ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উরি হামলার পর পাক ভূখণ্ডে আঘাত হানার কথা বিবেচনা করতে দিল্লীর প্রতি অনুরোধ

বদলা নিতে চায় ভারতীয় সৈন্যরা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বদলা নিতে চায় ভারতীয় সৈন্যরা

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পাকিস্তান সীমান্তবর্তী উরি বিমান ঘাঁটিতে এক সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ সৈন্য নিহত হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানী ভূখ-ে হামলা চালানোর কথা বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কমান্ডার তাদের সৈন্য হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছেন। উরি হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, পিটিআই ও ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরকে বিভক্তকারী ৭৭৮ কিলোমিটারের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর সমন্বিত গোলাবর্ষণ, চোরাগোপ্তা গুলিবর্ষণ ও অন্যান্য তৎপরতার মাধ্যমে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। একই সময়ে ভারতের নিরাপত্তা এস্টাব্লিশমেন্টের একাংশ চায়, সরকার পাকিস্তানের উদ্দেশে এক দ্ব্যর্থহীন বার্তা পাঠাতে সীমান্তের ওপারে সীমিত কিন্তু শাস্তিমূলক আঘাত আনার কথা বিবেচনা করুক। এলওসি বরাবর সামরিক চাপ বাড়ানো জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে মদদ দিয়ে যাওয়ার দায়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে কিছু মাসুল দিতে বাধ্য করার লক্ষ্যে এক কৌশলগত পদক্ষেপ। কিন্তু সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ শিবিরের ওপর প্রচলিত কায়দায় আঘাত আনা প্রশ্নে সরকারকে সুবিবেচিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে; কারণ এতে পূর্ণাঙ্গ সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলওসি বরাবর সেনা ব্যাটালিয়ন এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর পশ্চিম ফ্রন্টের ঘাঁটিগুলোকে যে কোন সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় পূর্ণ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। সরকারী সূত্রে এ কথা বলা হয়। একই সূত্রে বলা হয়, রবিবারের উরি হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় নিরাপত্তা এস্টাব্লিশমেন্ট সব বিকল্প উপায়ের কথাই বিচার বিবেচনা করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এলওসি বরাবর জিহাদীদের সামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা চালানো এবং অনুপ্রবেশকারীদের ভারতীয় ভূখ-ে ঢুকতে মদদ যুগিয়েছিল এমন অভিযুক্ত পাকিস্তানী সেনা অবস্থানগুলোয় হামলা চালানো। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রবিবার সকালে শীর্ষ গোয়েন্দা ও সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে এমন প্রস্তাবগুলো তৈরির আহ্বান জানান। বিভিন্ন সূত্রে এ কথা বলা হয়। নর্দার্ন কমান্ড বিশেষ বাহিনী বা গোলন্দাজ বাহিনীকে ব্যবহার করে এলওসির মধ্য দিয়ে জিহাদী গ্রুপগুলোর অনুপ্রবেশে সাহায্য করেছিল বলে সন্দেহভাজন পাক সেনা অবস্থানগুলোকে আঘাত করার পরিকল্পনার মূল্যায়ন করছে। তাছাড়া নয়াদিল্লী এলওসি বরাবর সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোকে লক্ষ্য করে আরও গভীরে হামলা চালানো এবং উরি হামলার জন্য দায়ী কমান্ডারদের ওপর হামলা চালাতে গোয়েন্দা তথ্যকে কাজে লাগানোর কথাও বিবেচনা করছে। এক শীর্ষ কমান্ডার বলেন, আমরা আমাদের সৈন্যদের হত্যার প্রতিশোধ নেব। কিন্তু আমরা ঠা-া মাথায় পেশাগত সামরিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে এবং আমাদের পছন্দসই সময়েই তা করব, রাজনৈতিক প্রয়োজন বা প্রচারিত খবরে প্রভাবিত হয়ে নয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে হামলা, গুপ্ত সামরিক তৎপরতা বা পাকিস্তানী ভূখ-ের ভেতর সন্দেহভাজনদের পিছু ধাওয়া করা এখনও বিবেচনায় নাও এসে থাকতে পারে। কিন্তু তবুও ভারতীয় সৈন্যরা এলওসি অতিক্রম না করেও পাকিস্তানী সৈন্যদের ‘রক্তপাত’ ঘটাতে পারে। পাকিস্তানের সেনা ফাঁড়ি ও বাঙ্কার লক্ষ্য করে কামানের গোলাবর্ষণ ও ভারি মর্টারের গুলিবর্ষণ এবং তাদের টহল দলের চলাচল বিঘিœত করতে চোরাগোপ্তা হামলা অতীতে ব্যবহৃত কয়েকটি কৌশলের অন্যতম। এক সূত্রে বলা হয়Ñ ‘হ্যাঁ, অন্যপক্ষ থেকে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে এর মোকাবেলা করা যাবে।’ সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালানোর বিষয়ে নিরাপত্তা এস্টাব্লিশমেন্টের কোন কোন কর্মকর্তা বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে আর নয়’ বলে পাকিস্তানের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিতে হবে।
×