ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপজ্জনক গ্যাস সিলিন্ডার

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিপজ্জনক গ্যাস সিলিন্ডার

সরকার রাজধানীসহ সারাদেশে বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় এলপিজি সিলিন্ডারের কদর বাড়ছে দিন দিন। ইদানীং পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপ কম থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন গ্যাস সিলিন্ডারের। দেশের যেসব এলাকায় গ্যাস পৌঁছেনি সেসব স্থানের বাসাবাড়িতেও এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। এর বাইরেও হোটেল-রেস্তরাঁ, শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি প্রাইভেট কারসহ প্রায় সবরকম যানবাহনে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। যেহেতু এটা ব্যয়সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য। তবে এর ঝুঁকির দিকটিও অবহেলা করা যায় না কোন অবস্থাতেই। ২৩ আগস্ট বিপিসির উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান ডিপো বগুড়ায় ট্রাক থেকে নামানোর সময় ৮শ’ সিলিন্ডার বোমার মতো বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এক কিলোমিটারের মধ্যে। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জের বাজারে জ্বালানি তেলের ডিপোতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ আগুন লেগে যায়। বাসাবাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডারে একাধিক দুর্ঘটনাসহ মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরও আছে। ইদানীং গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাত্রা বেড়েছে বিপজ্জনকহারে। যানবাহনে সংযোজিত সিলিন্ডার এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার, উভয় ক্ষেত্রেই কথাটি প্রযোজ্য। গত বাংলা নববর্ষের দিন বৃহস্পতিবার অপরাহ্ণে সাভারের আশুলিয়ায় ডেলটা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেয়ার সময় একটি গাড়ি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত ও তিনজন আহত হন। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই সঙ্গে উড়ে যায় ফিলিং স্টেশনের কিয়দংশ। এর দুদিন আগে চট্টগ্রামে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চুরমার হয়ে যায় দুটো গাড়ি এবং আহত হন তিনজন। শুক্রবার পল্লবীতে বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণজনিত অগ্নিকা-ে দগ্ধ হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী ও শিশুকন্যা। এ রকম ঘটছে হামেশাই। এ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য-পরিসংখ্যান নেই। তবে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে, গত তিন বছরে প্রায় ২০০টি গাড়িতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে ৫৮৭টির বেশি সিএনজি কনভার্সন সেন্টার স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয় সারাদেশে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সোয়া দুই লাখ। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে কয়েক লাখ গ্যাস সিলিন্ডার। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ গ্যাস সিলিন্ডারই মানসম্মত নয়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয় ও হচ্ছে। আমদানিকৃত সিলিন্ডারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত সিলিন্ডারও রয়েছে। একটি সিএনজি সিলিন্ডারের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই নিয়ম আদৌ মানা হয় না। নিম্নমানের সিলিন্ডারের কথা বাদ দিলেও ভাল মানেরগুলোও নিয়মিত দেখভাল তথা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ২৮ বছরের পুরনো সিলিন্ডারও ব্যবহৃত হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্টিং করা অবশ্য কর্তব্য হলেও অনেকেই এ বিষয়ে তীব্র অনাগ্রহ দেখান। গাড়িতে লাগানো গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করিয়ে বিস্ফোরক অধিদফতরে রিপোর্ট জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে কোন আইনী বাধ্যবাধকতা নেই। তদুপরি সারাদেশে ৫৮৭টি কনভার্সন সেন্টারের বিপরীতে রিটেস্টিং সেন্টার আছে মাত্র ১৩/১৪টি। এর ফলেও গাড়ির মালিক বা চালক কেউই তা করাতে আগ্রহ বোধ করেন না। বাসাবাড়ির ক্ষেত্রেও তাই। পাঁচ বছরের বেশি শতকরা ৮০ ভাগ গ্যাস সিলিন্ডারই পুনঃপরীক্ষিত হয়নি। ফলে এগুলো প্রায় ভয়ঙ্কর ‘বোমাতুল্য’ হয়ে উঠেছে। ফলে যে কোন সময় যে কোন স্থানে তা বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণ ও সম্পদহানির কারণ হতে পারে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বিআরটিএ থেকে যানবাহনের ফিটনেস নেয়ার সময় সিলিন্ডার রিটেস্টিং রিপোর্ট জমা দেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও তা অত্যাবশ্যক। যতদিন পর্যন্ত তা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের বিষয়টি ‘বোমাতুল্য’ অতীব ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাবে।
×