ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসনজিৎ হালদার

ফুটপাথের রাজ্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফুটপাথের রাজ্য

শহরে বাস আমাদের। নিত্যনতুন প্রয়োজনে অবিরাম ছুটে চলা। হ্যাঁ, ঢাকা নামক শহরটির কথাই বলছি। কখনও চার দেয়ালের মাঝে, কখনও রাস্তায়-ফুটপাথে। কয়েক কোটি লোকের আবাসন এবং কর্মসংস্থান এখানে। রয়েছে হাজার রকমের ব্যবসা। এত ব্যবসার মধ্যেও ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা অনেক জমজমাট এখানে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যসহ অনেক বাহারি জিনিসের সমাহার এই ফুটপাথ। শহরের মানুষগুলোর হেঁটে চলার জন্য ফুটপাথ তৈরি করা হলেও, এমন কোন ফুটপাথ পাওয়া যায় না যেখানে দখলবাজির মাধ্যমে ব্যবসায় চলছে না। খাবার, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, মনিহারি, এমনকি ভাড়াটে লোকবলও টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় এই ফুটপাথে। এত দীর্ঘ ব্যবসায়ের বর্ণনা এত অল্পতে দেয়া সম্ভব নয়। যে বিষয়টি নিয়ে বলতে চাই, সেটি ফুটপাথের খাবার। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যে কিনা রাস্তার খাবার খায়নি অথচ ঢাকার বাসিন্দা। রাস্তার খাবারের ছোট একটি তালিকা দেয়া যেতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে শরবত, ঝালমুড়ি, চা, বাদাম-বুট, ডালপুরি, চটপটি-ফুচকা, সিঙ্গাড়া-সমুচা, মিষ্টি খাবার, হোটেলের খাবার, ওষুধ, ফলমূল। রাস্তায় বের হলে চোখে পরবেই কোন একটা ফুটপাথের দোকান। অল্প খরচের মধ্যে খাবার পাওয়া যায় সেখানে। গুণ আর মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে সেই খাবারের পিছনে। পকেটে যাদের অল্প টাকা থাকে তাদের ভরসাই সেই দোকানগুলো। কোথাও চার পায়া ভ্রাম্যমাণ ঘর, কোথাও চৌকি, কোথাও ভ্যানগাড়ি, কোথাও আবার ফুটপাথই হয় দোকান। এবার খাবার তৈরি এবং এর মান নিয়ে কিছুটা গুণকীর্তন না করলেই নয়। এটুকু তো সবাই জানেন, ফুটপাথের খোলা খাবারের সঙ্গে সর্বপ্রথম যে জিনিসটি আপনাকে ফ্রি তে দেয়া হবে তা হচ্ছে ধুলাবালি। কিছু কিছু খাবার তৈরি হয় ফুটপাথেই। আবার কিছু খাবার তৈরি হয় বাসাবাড়ি অথবা খাবার হোটেলে। একটু বেশি মুনাফা লাভের আশায় খাবার প্রস্তুতকারী বাজার থেকে কম মূল্যের দ্রব্যসামগ্রী কেনে। চাল-ডাল, তেল-নুন, আটা-ময়দা-সুজি, সে যাই হোক না কেন, তা চতুর্থ অথবা তৃতীয় শ্রেণীর পণ্য। নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবারটি তৈরি করা হলে তার মান গিয়ে দাঁড়ায় পঞ্চম শ্রেণীতে। অথচ মানুষের প্রথম এবং প্রধান জৈবিক চাহিদাই হলো খাওয়া। গরমকালে ফুটপাথে নোংড়া পানির শরবত, ফরমালিনযুক্ত ফলের জুস, শীতকালে ধুলাসমেত গরম পিঠা। এ আর নতুন কি! একটি ছোট গল্প বলছি, শুনুন। কয়েক বছর আগের কথা। সে আমার খুব ঘনিষ্ঠ ভাই। একদিন গভীর রাতে হঠাৎ করেই শুনি তার পেটে ব্যথা। সেই ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা যে, তার প্রায় প্রাণ যায় যায়। মুহুর্মুহু চিৎকার, ভয়ঙ্কর আর্তনাদ। ভোর রাতে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার জানান ফুড পয়জনিং মানে খাদ্যে বিষক্রিয়া। এরপর জানা গেল আসল কাহিনী। সেই ভাই আগের দিন সন্ধ্যায় খেয়েছিলেন ফুটপাথের ঝালমুড়ি, তেলে ভাজা পুরি আর চা। এগুলো খেয়েই তার বিপত্তি। মাথা থাকলে যেমন মাথা ব্যথা থাকবে, পেটেও কিছু সমস্যা হতেই পারে। তাই বলে তাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে সুস্থ করতে হবে! ভাবতে পারছেন? কি ভয়াবহ হতে পারে এই ফুটপাথের খাবার! দীর্ঘদিন ফুটপাতের অপরিষ্কার-নোংড়া খাবার খেলে আপনার পেটেও বাসা বাঁধতে পারে মরণব্যাধির। ডাক্তারি ভাষায় যার নাম আলসার বা পাকস্থলীতে ঘা পর্যায়ক্রমে যা রূপ নেয় ক্যান্সারে। ফুটপাথের খাবারের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অল্প পুঁজিতে ভাল মুনাফা। ব্যবসায় মানেই মুনাফা। ফুটপাথে শুধুই মুনাফা। খাবারের মান নিয়ে ভাবার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা এখানে ভোক্তা বা ক্রেতার পরিমাণ যথেষ্ট। বিক্রেতা ভাবে লাভ নিয়ে, ক্রেতার তো খাওয়া বলে কথা। কিন্তু যে মানুষটি দিনমজুর অথবা কুলি অথবা রিক্সাচাকল, সে কি করবে? পকেটেও টাকা কম, সেখান থেকেও সাশ্রয় করতে হবে। তাদের জন্য সচেতনতা শব্দটিকে না হয় বাদ দিলাম। তারা খাবে কি? এই প্রশ্নের সোজা উত্তর, ফুটপাথের খাবার। তবুও থেমে থাকে না জীবন। কিছু তো খেতেই হবে। হয় বাড়ির রান্না করা খাবার, অথবা হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আর না হয় ফুটপাথের খাবার।
×