ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টুটুল মাহফুজ

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

প্রতিদিন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নতুন দিনের শুরু। আর সেই রাত অবধি আমাদের সবাইকে অনেক কাজ করতে হয়। আর এ কাজ করতে হয় আমরা চাইলেও এবং না চাইলেও। কারণ আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে আমরা নিজেদের কাজ করতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের প্রতিদিনকার কাজ একেবারে পারফেক্ট করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই দরকার হয়ে পড়ে। এর মধ্যে সুস্বাস্থ্য, সচল মস্তিষ্ক, ভাল স্মৃতিশক্তি ইত্যাদি। এসব কিছুর জন্যই আমাদের প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের। যা আমরা অনেকেই করি না। কিন্তু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন না করার ফলে আমরা প্রতিনিয়তই ক্ষতি করছি আমাদের নিজেদেরই। আমরা আমাদের কাজে-কর্মে নিজের সম্পূর্ণটা দিয়ে মন বসাতে পারি না। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যকর জীবনের শুরু করা। আর এজন্য নিয়মিত কিছু কাজ করতে পারেন। যা আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যকর খাবার ভাল খাবার আমাদের দেহকে সুস্থ রাখার জন্য সব চাইতে বড় ভূমিকা পালন করে। খাবার থেকে আমরা শক্তি পাই এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও স্বাস্থ্যকর খাবার থেকেই আসে। কিন্তু এ ব্যাপারেও আমরা একটি ভুল করে থাকি। স্বাস্থ্যকর খাবার এখন টিনজাত হিসেবেও পাওয়া যায়। যা সময় বাঁচাতে আমরা কিনে খেয়ে থাকি। এতে কিন্তু ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই খেয়াল রাখবেন স্বাস্থ্যকর খাবারটি যেন প্রাকৃতিক হয়। শারীরিক শ্রম আজ থেকেই জীবনযাপনের স্টাইলে সামান্য পরিবর্তন আনুন। খানিকটা সময় বের করে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ শুরু করুন। হাঁটাচলা করা, জগিং করা, শারীরিক ব্যায়াম করা দিয়ে শুরু করতে পারেন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের যাত্রা। মোটকথা, বসা কাজকে আক্ষরিক অর্থেই না বলুন। টানা ২০-২৫ মিনিট বসে কাজ করলে ৫ মিনিট উঠে হাঁটাচলা করে আবার কাজে বসুন। শারীরিক ব্যায়ামের জন্য ১০টি মিনিট সময় বের করে নিন। যদি না পারেন তবে ১০-১৫ মিনিট হেঁটে আসুন। এতে শরীরে রোগ বাসা বাধবে না। পর্যাপ্ত পানি খান আমাদের দেহের ৬৫% পর্যন্ত পানি দিয়ে তৈরি। আমাদের দেহে যখনই পানির ঘাটতি হয় তখনই আমরা নানা রকম রোগে-শোকে পড়ে থাকি। তাই আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনের শুরুতে আরও যে কাজটি করতে হবে তা হলো পানি পানের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। দেহটাকে হাইড্রেট রাখতে হবে। প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস পানি পানের পাশাপাশি ফলের রস, ডাবের পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজ ইত্যাদি পান করা উচিত। সকালের সূর্যের আলো কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে অনেকেরই তাজা হাওয়া এবং সূর্যের আলো উপভোগ করতে পারেন না একেবারেই। সকালের তাজা হাওয়া আমাদের মনের জন্য অনেক প্রশান্তিকর এবং সূর্যের আলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। সূর্যের আলো আমাদের দেহে ভিটামিন ডি তৈরি করে, যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভিটামিন ডি এর অভাবে ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস এবং বিষণœতার সৃষ্টি হয়। তাই সুস্থ জীবনের শুরু করতে চাইলে সকালের সূর্যের আলো এবং তাজা হাওয়া নেয়ার চেষ্টা করুন। পরিমিত বিশ্রাম আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক পরিশ্রমের যেমন প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন পরিমিত বিশ্রামের। আপনি শারীরিক পরিশ্রমের পর যদি পরিমিত না ঘুমাতে পারেন তবে আপনার দেহ দুর্বলতায় পড়বে, বিষণœতা ও উদ্বেগে মনমানসিকতা একেবারেই ভেঙে পড়বে। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, মস্তিষ্কের অচলতা সবই পরিমিত বিশ্রাম না নেয়ার কারণে হয়ে থাকে। তাই একজন পূর্ণবয়স্ক হিসেবে প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। সাদা চাল সাদা চালের ভাত যত বেশি খাওয়া হয় তত বেশি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের ওপর গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিন সাদা চালের ভাত নিয়মিত খাওয়ার ফলে প্রায় ১১% টাইপ-২ ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই রোগীরা কতটুকু ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যকর তা জানতে নিজের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। চাইনিজ খাবার চাইনিজ খাবারে রয়েছে অনেক বেশি ফ্যাট, ক্যালরি, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রেট যা হুট করেই দেহের সুগারের মাত্রা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে অরেঞ্জ, সুইট এ্যান্ড সাওয়ার ধরনের খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। বোতলজাত ফলের জুস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে সোডা বাদ দিয়ে ফলের জুস পান করেন? কিন্তু জেনে রাখুন বোতলজাত ফলের জুস পান করা এবং সোডা পান করার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। কারণ ফলের জুসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও ক্যালরি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কলা ও তরমুজ সবাই জানেন তাজা ফলমূল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর, কিন্তু ডায়বেটিস রোগীদের জন্য তাজা সব ফল স্বাস্থ্যকর নয়। কলা এবং তরমুজের মতো ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ায়। তাই এই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকাই ভাল। রিফাইন্ড সিরিয়াল সুইটেন্ড ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল ধরনের খাবারগুলো ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়াও ইনস্ট্যান্ট ধরনের স্বাস্থ্যকর ওটমিলও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঘন দুধের তৈরি কোন খাবার দুধ খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল। কিন্তু কোন খাবার যাতে দুধের পরিমাণ খুব বেশি যেমন দই, দুধের তৈরি ক্রিম, চিজ এই খাবারগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের না খাওয়াই উত্তম।
×