ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট ও দৌলতদিয়ায় আট শতাধিক যান আটকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট ও দৌলতদিয়ায় আট শতাধিক যান আটকা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঈদ শেষে রাজধানীমুখী যাত্রীদের চাপে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে এখনও আটকে আছে অন্তত পাঁচ শতাধিক যানবাহন। এছাড়া কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে স্পীডবোট চলাচল গত তিনদিন ধরে বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। পাশাপাশি দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পদ্মায় অনবরত ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার পাঠানো। জানা গেছে, রবিবার সকাল থেকে রাজধানীমুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে মাদারীপুরের শিবচর কাওড়াকান্দি ঘাটে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। শুধু তাই নয় অচল হয়ে পড়েছে যানবাহন পারাপার। রবিবার বিকেল ৩টার পর থেকে মানুষ ও যানবাহনের ভিড় আরও বেড়েছে। এছাড়া শনিবার থেকে পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকে আছে ৫ শতাধিক যানবাহন। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী ও যানবাহনের লাইন ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের কাছে কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুট এখন দুর্ভোগ-দুর্দশার নাম। যাত্রী ও যানবাহনের ভিড়ের সঙ্গে অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এখানে কোরবানির ঈদ শেষে রাজধানী ফেরত মানুষদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই রুটে চলাচলকারী ১৭টি ফেরির মধ্যে ২টি ফেরি নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। এদিকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি হয়রানির অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, সঠিক নিয়মে যানবাহন পারাপার করছেন তারা। অবশ্য, জেলা পুলিশের দাবি এসব বিষয়ে সর্বত্রই তাদের নজরদারি রয়েছে। শিবচরের বন্দরখোলা থেকে ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের যাত্রীদের বর্তমানে গড়ে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভিআইপিদের গাড়ি পারাপারের নামে সিরিয়াল না মেনে গাড়ি চলা, অবৈধ অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ছোট-বড় যানবাহনকে কৌশলে ফেরিতে উঠিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে যানজট বৃদ্ধি পায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এদিকে দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষায় থেকে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চ ও স্পীডবোটে উঠতে দেখা গেছে অনেকেই। বিআইডব্লিউটিসি’র কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটের টার্মিনাল সুপারইনটেন্ড (টিএস) মোঃ রুহুল আমিন বলেন, যানজটের কারণে ফেরিতে গাড়ি উঠানামায় বিঘœ ঘটলেও স্বাভাবিক হারেই যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি যানবাহান পারাপার করা হচ্ছে। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনছার উদ্দিন বলেন, প্রতি ঈদে এই নৌরুট দিয়ে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করেন। এ সময় যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ বেড়েই চলে। যানজট নিরসনসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। পাবনা ॥ বেড়া উপজেলার কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে মালিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত ৩ দিন ধরে প্রায় ২০টি স্পীডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় ঈদফেরত কর্মমুখী যাত্রীদের অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। জানা গেছে, এ রুটে এক বছর আগে যাত্রী পারাপারের লক্ষ্যে স্পীডবোট সার্ভিস চালু হলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এ সার্ভিসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ বলে ওঠে। স্পীডবোট চলাচলের বৈধ কাগজপত্র তৈরি নিয়ে কাজীরহাট ও আরিচা ঘাটের মালিকদের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। এতে উভয় ঘাটে প্রতিপক্ষের হাতে স্পীডবোট আটকের ভয়ে শুক্রবার সকাল থেকে তা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজীরহাট ঘাটের স্পীডবোট মালিকরা জানান, নিয়মানুযায়ী বৈধ কাগজপত্র তৈরির তাগিদ দেয়ায় ওপারের মালিকরা দ্বিমত প্রকাশ করায় আপাতত স্পীডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদফেরত ঢাকাগামী কয়েক যাত্রী জানান, ২০টি স্পীডবোট প্রতিদিন কমপক্ষে তিন হাজার যাত্রী পারাপার হতো। তিন দিন ধরে চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদফেরত যাত্রীদের। রাজবাড়ী ॥ দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে ফেরিঘাট রক্ষার জন্য সাড়ে ৩ হাজার জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলেও ঘাট রক্ষা করা যাচ্ছে না। শনিবার মধ্যরাতে ৪ নম্বর ফেরিঘাটে যানবাহন ওঠানামার সংযোগ সড়কটির কিছু অংশ আবারও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ঘাটটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে ১ এবং ৩ নম্বর ফেরিঘাট দুটি চালু রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংযোগ সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করলেও ঘাটটি কখন চালু হতে পারে সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌরপদ সূত্রধর জানান, প্রাথমিকভাবে ঘাট রক্ষার জন্য ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহনমন্ত্রী দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শনের পর তার নির্দেশ মতে জরুরীভিত্তিতে ঘাটগুলো রক্ষার জন্য জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তিনি জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘাট রক্ষার জন্য সাড়ে ৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হেকিম ঘাট এলাকা পরির্দশন করেছেন। সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ইতিমধ্যেই রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংসদ সদস্যের ২ জন প্রতিনিধি এবং স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী। নতুন করে ফেরিঘাট এলাকা ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় চলমান দুটি ফেরিঘাটও হুমকির সম্মুখীন। প্রশাসনিকভাবে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক জিনাত আরা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ঘাটগুলো সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। এদিকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে অধিকাংশ মানুষ গতকালই ঢাকামুখী হওয়ায় আজ দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে তেমন যানজট দেখা যায়নি। তবে রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মডেল হাইস্কুল পর্যন্ত সড়কে যাত্রীবাহী পরিবহন, পণ্যবাহী ট্রাকসহ ৩ শতাধিক বিভিন্ন যানবাহন নদী পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
×