ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হানিফ বললেন বিদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী ফিরলেই দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে

আওয়ামী লীগ অবশেষে জাতীয় কমিটির বৈঠক ডাকতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগ অবশেষে জাতীয় কমিটির বৈঠক ডাকতে যাচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সম্মেলনের আগেই জাতীয় কমিটির বৈঠক ডাকছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কার্যত দলটির গুরুত্বহীন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ বৈঠকেই নতুন নেতৃত্ব গঠনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ ছাড়াও গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী জাতীয় কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে দলের বিগত কয়েক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও বাজেটের অনুমোদন নেয়া হবে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পরই জাতীয় কমিটির বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ‘জাতীয় কমিটি’-কে। কিন্তু গত প্রায় পৌনে চার বছরে জাতীয় কমিটির কোন বৈঠক হয়নি। গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক আহ্বানের বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। অধিকাংশ সদস্যই জানেন না সর্বশেষ কবে বৈঠক হয়েছিল জাতীয় কমিটির। দলের সাংগঠনিক সব সিদ্ধান্তই হয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। ফলে অন্য ফোরামের বৈঠকের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগের থিঙ্ক ট্রাঙ্ক নামে পরিচিত এ ফোরামটি কার্যত গুরুত্বহীন। তবে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গত দুই বৈঠকেই দলের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের আগেই জাতীয় কমিটির বৈঠক আহ্বানের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জানান, সম্মেলনের আগেই জাতীয় কমিটির বৈঠক হবে। ওই বৈঠকেই দলের আয়-ব্যয় ও বাজেটের অনুমোদন গ্রহণ ছাড়াও দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে জাতীয় কমিটির সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় সম্মেলনের আগেই জাতীয় কমিটিসহ দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফোরামের বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই জাতীয় কমিটির বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। সম্মেলন সফল করতে দলের গুরুত্বপূর্ণ সব ফোরামের নেতারই প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় কমিটি। ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও পৌনে চার বছর তা আহ্বানই করা হয়নি। সর্বশেষ জাতীয় কমিটির বৈঠক হয়েছিল ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর। দীর্ঘদিন আনুষ্ঠানিক কোন বৈঠক না হওয়ার জন্য বিগত দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন দলের নেতারা। জাতীয় কমিটির সদস্যদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন বৈঠক ডাকা হয় না। আমরা কমিটিতে আছি কি-না তাও জানি না।’ আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির মোট সদস্য হবেন ১৬৬। এর মধ্যে প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন করে মোট ৭৩, দলীয় সভানেত্রীর মনোনীত ২১ ও অন্যান্য ৬। ১৭(খ) অনুযায়ী, জাতীয় কমিটি দলের কাউন্সিল ও কার্যনির্বাহী সংসদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। অনুচ্ছেদ ১৭(ঝ) অনুযায়ী, প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক হবে। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে উপেক্ষিত। গঠনতন্ত্রের ১৭(ঙ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের হিসাব-নিকাশ ও বাজেটের অনুমোদন দেবেন জাতীয় কমিটির সদস্যরা। কিন্তু ২০১২ সালের পর আর কোন বৈঠক ডাকা হয়নি। নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব ঠিকই জমা দিয়েছে। জাতীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়া কিভাবে এ হিসাব জমা দেয়া হলো তা কেউ বলতে পারেননি। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্র মেনেই সবকিছু করে। নির্বাচন কমিশনের কাছে দলের হিসাব দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের অনুমোদন নিয়েই দেয়া হয়েছে। বিগত তিনটি বছর আওয়ামী লীগকে অনেক বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। এ কারণেই সময়মতো জাতীয় কমিটির বৈঠক ডাকা সম্ভব হয়নি। তবে সম্মেলনের আগেই জাতীয় কমিটির বৈঠক ডেকে দলের হিসাব-নিকাশ ও বাজেটের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় কমিটির দু’জন প্রবীণ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গঠনতন্ত্রে জাতীয় কমিটির সদস্যদের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। দল ক্ষমতায় থাকলে কেউ-ই সংগঠনের প্রতি বেশি মনোযোগী থাকে না। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
×