ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে এমপি রানার আত্মসমর্পণ, জেলে প্রেরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অবশেষে এমপি রানার আত্মসমর্পণ, জেলে প্রেরণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৮ সেপ্টেম্বর ॥ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তিনি দীর্ঘদিন পুলিশের খাতায় পলাতক ছিলেন। সূত্র জানায়, রবিবার সকাল ৭টার দিকে টাঙ্গাইল জেলা আদালতে হাজির হন এমপি আমানুর রহমান খান রানা। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই তিনি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেন। পরে এমপি রানার আইনজীবীরা আদালতে তার জামিন আবেদন করেন। রানার পক্ষে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা জামিন ও মামলা পুনঃতদন্তের জন্য আদালতে দুটি আবেদনপত্র জমা দেন। এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা আদালতে রানার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক আবুল মনসুর আহমেদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এমপি আমানুর রহমান খান রানাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীর দায়ের করা পুনঃতদন্তের আবেদনটি মামলার পরবর্তী তারিখে শুনানির জন্য স্থগিত রেখেছে আদালত। মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর। সেদিন চার্জ গঠনের কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি মনিরুল ইসলাম খান, এ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, এ্যাডভোকেট এস আকবর খানসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী এবং এমপি আমানুর রহমান খান রানার পক্ষে আদালতে এ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী মিয়া, এ্যাডভোকেট ফায়জুর রহমান, এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন, এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিপন, এ্যাডভোকেট ফায়কুজ্জামান নাজিবসহ বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন। রবিবার সকাল ৯টার পর থেকেই আদালতে উভয়পক্ষের আইনজীবী ছাড়াও অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আদালতে মামলার বাদী নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ, আসামির পিতা আতাউর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আদালত চত্বরে বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আদালত রায় ঘোষণার পরপরই আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রানাসহ সকল আসামির ফাঁসি দাবি করে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহার আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনি, সহপ্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মারুফ প্রমুখ। মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহার আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই মামলা নিজে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। কোন অপরাধীকে তিনি ছাড় দেননি। আসামিপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী মিয়া জানান, বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে এমপি রানাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেব। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি আব্দুস সালাম পিন্টু ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা এমপি রানার পক্ষে আদালতে হাজির হয়ে জামিন চেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোন আইনজীবী খুনী পরিবারের সঙ্গে নেই। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ শহরে তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানার পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত শুরু করে। বিগত ২০১৪ সালের আগস্টে এই মামলার আসামি আনিছুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেফতার হন। আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিতে এমপি রানা ও তার তিন সহোদর টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার এ হত্যাকা-ে জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর থেকেই এমপি রানা ও তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে আছেন। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি এমপি রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট জমা দেয়া হয়। গত ৬ এপ্রিল আদালত মামলার চার্জশীট গ্রহণ করে পলাতক এমপি রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ১৭ মে এই ১০ জনের বিরুদ্ধে হুলিয়া ও মালামাল জব্দ করার নির্দেশ দেয় আদালত। গত ২০ মে পুলিশ এমপি রানা ও তার তিন ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মালামাল জব্দ করে। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। সর্বশেষ গত ১৬ জুন আদালত আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়। এমপি রানার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি চিঠি দিয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকারকে জানানো হয়। ফাঁসির দাবিতে মিছিল ॥ এদিকে আত্মসমর্পণের পর জেলহাজতে প্রেরণের খবরে আনন্দিত হয়ে উঠেছে এমপি রানার নির্বাচনী এলাকা ঘাটাইলের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ। স্থানীয় এমপি আমানুর রহমান খান রানাসহ চার ভাইয়ের ফাঁসির দাবিতে রবিবার বিকেলে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটি টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘাটাইল উপজেলা বাসস্ট্যান্ড চত্বর থেকে শুরু হয়ে ঘাটাইল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় রাস্তায় উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে মিছিলটি স্থানীয় পারুল প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঘাটাইল পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান খান ভিপি শহিদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান আজাদ, আব্দুর রহিম মিয়া, ধলাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার, এ্যাডভোকেট শাহানশাহ সিদ্দিকী ও আবু সাইদ রুবেল প্রমুখ। বক্তারা এমপি রানাসহ অন্য আসামীদের ফাঁসির দাবি জানান।
×