ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গণশিক্ষার নয়া পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন ইবাদ আলী

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গণশিক্ষার নয়া পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন ইবাদ আলী

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ গণশিক্ষার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন কৃষিবিদ ইবাদ আলী। তার এ পদ্ধতি বিভিন্ন সচেতন মহলে ব্যপকভাবে সাড়া ফেলেছে। সদর উপজেলাধীন ১২নং ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে ইবাদ আলীর বাড়ি। তার বয়স এখন ৩০। তিনি স্বপ্ন দেখেন এ দেশকে এক দিন নিরক্ষরমুক্ত করবেন। সেই স্বপ্ন ধারণ করে দেশকে নিরক্ষর ও দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছেন ইবাদ আলী। চালু করেছেন জ্ঞানের মেলা স্কুল। ইবাদ আলীর স্কুলের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। নির্ধারিত জায়গাও নেই। ছাত্রছাত্রীদের কোন বয়স-সীমাও নেই। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের যোগ্যতারও কোন মাপকাঠি নেই। আর এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হলো একটি বই। ইবাদ আলী অক্ষর পরিচয়ের নতুন একটি মডেল উদ্ভাবন করেছেন, নাম গণশিক্ষা উন্নয়ন মডেল। এ মডেলে একটি বইও লিখেছেন, নাম গণশিক্ষার প্রথম পাঠ। যৌতুক প্রথা, বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করেন তিনি। কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের বিরুদ্ধেও প্রচার চালাচ্ছেন। ইবাদ আলী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাদ্য প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর। ২০১১ সালে লেখাপড়া শেষ করে রাজবাড়ী এলাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন তিনি। ইবাদ আলী বলেন, কাজ করার সময় দেখেছি যেসব মহিলা স্বাক্ষর করতে পারেন না, তারাই বেশি গরিব। বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে গবেষণা করি। জানতে পারি, লেখাপড়া বিষয়ে কুসংস্কার আছে মহিলাদের। তাছাড়া তারা গৃহস্থালি কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে কোথাও গিয়ে পড়ার মতো সময় তাদের হাতে থাকে না। আমি ভাবতে থাকি, উপায় খুঁজতে থাকি। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বড়দাসপাড়া গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে মডেলটি চালু করি। অল্প সময়ের মধ্যে বড়দাসপাড়াসহ কুমারগাতি, কালিয়ানিকান্দা, দক্ষিণ ভাটপাড়া দিপচর গ্রামের ৮০০ মানুষকে এই মডেলে যুক্ত করি এবং তারা নিরক্ষরতা থেকে রেহাই পায়। তিনি বলেন, তার উদ্ভাবিত গণশিক্ষা উন্নয়ন মডেলে কাজ করার জন্য প্রথমে একটি গ্রাম বেছে নেয়া হয়। এরপর একটি পরিবার থেকে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যসহ পাঁচজনকে ‘গণশিক্ষার প্রথম পাঠ’ বইটি পড়ান তিনি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যখনই সময় হয় তখনই ক্লাস হয়। পুরো গ্রামে দুজন পর্যবেক্ষক থাকেন। তারা সপ্তাহে সপ্তাহে ইবাদের কাছে রিপোর্ট করেন। প্রতিদিন দুটি অক্ষর পড়া ও লেখা শেখানো হয়। পরীক্ষা হয় প্রতি মাসে। পাঁচ মাস পর সনদ দেয়া হয়। গ্রামে একটি সেন্টার থাকে। সেখানে শিক্ষকদের ১৫ দিন পর পর একটি সমাবেশ হয়। তাদের সঙ্গে বাল্যবিয়ে, যৌতুক প্রথা ইত্যাদি বিষয়ের কুফল সম্পর্কেও আলোচনা করা হয় এবং শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের সেসব বিষয়ে জ্ঞানদান করেন। ইবাদের বাবা ছিলেন দিনমজুর। নিজেও বাবার সঙ্গে দিনমজুরি করতেন। এখন যশোরের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার গণশিক্ষা উন্নয়ন মডেল এগিয়ে নিতে বন্ধুরা ৪৪ হাজার টাকা দিয়েছে কয়েক দফায়। ইবাদ বলেন, ‘আমার মডেলে প্রতি ১০০ জন ছাত্রের নিরক্ষরতা দূর করার জন্য ৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন।’ তাছাড়া এই মডেলের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে পুরো দেশকে নিরক্ষরতা মুক্ত করা যাবে। এছাড়া বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান এবং অসহায় দরিদ্রদের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
×