ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিলীনের মুখে পর্যটন এলাকা, ঝুঁকির মুখে কুয়াকাটার বসতি

সাগর মোহনায় চলছে বালু লুট

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সাগর মোহনায় চলছে বালু লুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৮ সেপ্টেম্বর ॥ দেখার কেউ নেই। সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গনকবলিত কুয়াকাটার সাগর মোহনা খাজুরার সংরক্ষিত বনাঞ্চলসংলগ্ন ডুবো এবং জেগে ওঠা চর থেকে ড্রেজার লাগিয়ে দেদার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে সাগরে আরও দ্রুত বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে পর্যটন এলাকাসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। জনবসতিও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। আলীপুরের মোশাররফ মোল্লা এবং মহিপুরের সেরাজের নেতৃত্বে একটি মহল এ বালু উত্তোলনের কাজ করছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছে। সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গনের কবল থেকে কুয়াকাটাসহ তৎসংলগ্ন এলাকা রক্ষার জন্য সরকার বহুমুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কিন্তু ডুবো এবং জেগে ওঠা চর থেকে বালু কাটার ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে পর্যটন এলাকা। সাগরের জোয়ারের ঝাপটা এসে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভাঙ্গনরোধে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন লিজ নেই ওই বালুমহালের। অথচ সরকারী দলের কুয়াকাটা-আলীপুর-মহিপুরের ওই চিহ্নিত মহলের নেতৃত্বে সব নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে বালু উত্তোলনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে কুয়াকাটাসহ কলাপাড়া উপজেলা পর্যায়ের সরকারী দলের কয়েক নেতাকর্মী, বন বিভাগের লোকজন এবং মহিপুর ভূমি প্রশাসন প্রত্যক্ষভাবে জড়িতের এন্তার অভিযোগ রয়েছে। বিনিময়ে বালুদস্যু চিহ্নিত ওই চক্রটি কোটি টাকার ফায়দা লুটছে। আর সর্বনাশের কবলে পড়ছে কুয়াকাটার খাজুরাসহ মোহনা এলাকার বনাঞ্চলসহ জনপদ। কুয়াকাটা বীচ কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের চরম উদাসীনতায় বালুখেকো ওই চক্রটি দিন-রাতে ড্রেজার লাগিয়ে ট্রলার-কার্গো বোঝাই করে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্পটে বিক্রি করছে। চালাচ্ছে বিভিন্ন স্পট ভরাটের কাজ। একদিকে জাতীয় সম্পদ প্রকৃতির লীলাভূমি কুয়াকাটার সর্বনাশ করা হচ্ছে, অপরদিকে কুয়াকাটাকে রক্ষায় ভাঙ্গন রোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ভেস্তে যাচ্ছে। খাজুরার আবাসনপল্লীর বাসিন্দারা বলেছেন, এখান থেকে বালু তোলা হলে সবকিছু সাগরের মোহনায় বিলীন হয়ে যাবে। আলীপুরের মোশাররফ মোল্লার সঙ্গে মহিপুরের সেরাজসহ কয়েক প্রভাবশালী ড্রেজার এবং ট্রলারযোগে এভাবে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। প্রতিনিয়ত সাগর মোহনার আন্ধারমানিক নদীর শেষপ্রান্তের খাজুরার বালুমহাল থেকে বালু কাটা হচ্ছে। সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেছে, ড্রেজার (কায়েদ সাহেব-২) দিয়ে বালু তোলার কাজ চলছে। প্রতি সিএফটি বালু ভরাটের জন্য সাড়ে পাঁচ টাকা থেকে সাত টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। যাদের জমি ভরাট করা চলছে তাদের কাছ থেকে জানা গেছে এ তথ্য। ইতোমধ্যে মৎস্যবন্দর আলীপুরের বাজারসংলগ্ন শেখ কামাল সেতুর পশ্চিম পাশের একটি এলাকা ভরাট করা হয়েছে। তাহেরপুর প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হোসেন মোল্লা, রত্তন মিয়া, কাশেম আলী ও মোশাররফ মোল্লা এ জমি ভরাট করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একে তো পাউবো কিংবা সওজের খাস জমি দখল করা হচ্ছে, তা আবার সরকারী বালু উত্তোলন করে ভরাট চলছে। বর্তমানে চলছে আলীপুরের পূর্বদিকে আলী আহম্মেদের বাড়ির কাছে এবং মহিপুর সিনেমা হলের অদূরে এ বালু ভরাটের কাজ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এসব অরাজকতা দেখার কেউ নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার সিএফটি বালু ড্রেজারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হলেও মহিপুর ভূমি প্রশাসন কিংবা বন বিভাগ কারও নেই কোন উদ্যোগ। অভিযুক্ত মোশাররফ মোল্লা জানান, আমি এখন বালু তুলি না। তবে কুয়াকাটা পৌরসভার রাস্তার কাজ করতে বালু তুলেছিলেন। ভূমি অফিস বন্ধ করে দেয়ায় আর তোলেননি। তিনি এও বলেন, এখন মহিপুরের লোকজন বালু তুলছে। কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার রায় জানান, বালু উত্তোলন করা কয়েক দফা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন। এ ব্যাপারে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, তিনি কুয়াকাটার স্বার্থ ক্ষুণœ করে কাউকে এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকা- করতে দেবেন না।
×