ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যস্ত সময় পার করছে হাজারীবাগের ট্যানারি পল্লী

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ব্যস্ত সময় পার করছে হাজারীবাগের ট্যানারি পল্লী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো। রবিবার হাজারীবাগের ট্যানারি পল্লীতে গেলে ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়েছে। সারাবছর যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তার অর্ধেকই সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সব ট্যানারি কারখানায় লবণ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কোথাও কাঁচা চামড়ায় লবণ মাখিয়ে রাখা হয়েছে, কোথাও ড্রামভর্তি রাসায়নিক দ্রব্য। ট্রাক ও ঠেলাগাড়ি থেকে কাঁচা চামড়া নামাচ্ছেন শ্রমিকরা। ইব্রাহিম লেদার লিমিটেডের মালিক ইব্রাহিম বলেন, কোরবানির ঈদেই বছরের সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এ কারণে সময়টা ব্যস্ত কাটে। অল্প সময়ের মধ্যে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। তা না হলে চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, ‘এবারে আমি ৫০ হাজার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছি। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করার কাজ চলছে। সরকারের কাছ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিতে তিন মাস সময় নিয়েছি। আশা করি, এর মধ্যে নতুন চামড়ার কাজ শেষ করতে পারব।’ এবারের ঈদে ট্যানারি সরানোর দোটানায় চামড়ার ব্যবসা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী। গত ২০ বছর ধরে ট্যানারিতে ঠেলাগাড়ি দিয়ে চামড়া আনা-নেয়া করেন মল্লিক হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদ-উল-আযহা এলে খাটুনি বাইরা যায়। এমনি সময়ে ৭-৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এখন দিন-রাত পোস্তা থেকে কাঁচা চামড়া আনার কাজ করছি। কোরবানির সময়ে তো চামড়ার মৌসুম।’ ট্যানারি শ্রমিক আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা এখন চামড়ায় লবণ দিয়ে রাখছি। ভাল করে লবণ দিয়ে রাখলে এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত চামড়া এ অবস্থায় রাখা যায়। এরপর ধোলাই, সোডিয়াম, বেড সালফার লাগানো হবে। অন্য সব প্রক্রিয়া বাকি।’ এছাড়া লবণে একটু হেরফের হলে চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন বৃষ্টির সময়, তাই লবণ দিয়ে চামড়া ঢেকে রাখতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ট্যানারি মালিক আমিনুর হক বলেন, ‘কাঁচা চামড়ায় ৭-৮ ঘণ্টা লবণ না দিলে নষ্ট হয়ে যায়। এবার লবণের অনেক বেশি দাম। আমাদের মতো ছোট কারখানার মালিকরা লবণ কিনতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। ৬০ কেজির বস্তা ১ হাজার ৫শ’ টাকা করে কিনতে হচ্ছে।’ কোরবানির পশুর চামড়া পোস্তা থেকে হাজারীবাগে নেয়া শুরু হয়েছে। ঈদের সময় ট্যানারি মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রচুর চামড়া কিনে আড়ত বোঝাই করেছিলেন। লবণ মিশ্রিত সেই কাঁচা চামড়া এবার পোস্তা থেকে হাজারীবাগের ট্যানারি পল্লীতে নেয়া হ?চ্ছে। সেখানে প্রসেসিং করেই দেশের গ-ি পেরিয়ে চামড়া যাবে বহির্বিশ্বে। এবার কাঁচা চামড়ার দাম কম হওয়ায় প্রচুর চামড়া কিনেছেন ট্যানারি মালিকরা। পোস্তার চামড়া প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত লেবারদের সর্দার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবার আমাদের জন্য ভাল হয়েছে। প্রচুর চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আমরা বেশি কাজ পাব।’ পোস্তা মোড়ে প্রগতি ট্যানারির চামড়া মিনি ট্রাক ভর্তি করছিলেন রাজ্জাকের লেবাররা। রাজ্জাক জানান, প্রগতি ট্যানারি এবার ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার পিচ কাঁচা চামড়া কিনেছে। ট্রাক লোড-আনলোড করে চামড়াপ্রতি ১০ টাকা করে পান একজন লেবার। প্রগতি ট্যানারির মিনি ট্রাকচালক মোঃ আলম জানান, ‘পোস্তা থেকে হাজারীবাগের প্রগতি ট্যানারিতে নেয়া হচ্ছে কাঁচা চামড়া। একটি মিনি ট্রাকে ৪০০ থেকে ৫০০ পিচ চামড়া নেয়া যায়। সারাদিনে ৪-৫ ট্রিপ দিতে পারব।’ তবে ট্যানারি মালিকরা এখনও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনা শুরু করেননি। এখন শুধু নিজেদের সংগৃহীত চামড়াই ট্যানারিতে স্থানান্তর করছেন। এই চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পর পোস্তা থেকে চামড়া কেনা হবে জানা গেছে।
×