ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বস্ত্র খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে জার্মানি

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বস্ত্র খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে জার্মানি

এম শাহজাহান ॥ দেশের বস্ত্র খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহযোগিতা দেবে জার্মানি। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে ৫০ মিলিয়ন ইউরো বা ৫০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটি। এ লক্ষ্যে ‘সোশ্যাল এ্যান্ড লেবার স্ট্যান্ডার্ড নই দ্য টেক্সটাইল গার্মেন্ট সেক্টর ইন এশিয়া’ শীর্ষক একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর থেকে আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চুক্তির আওতায় দেশের তৈরি পোশাক খাতে দক্ষ মানবসম্পদের যে ঘাটতি রয়েছে তা দূর হবে। পাশাপাশি বাড়বে পোশাকের উৎপাদন। একই সঙ্গে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে জার্মান সরকারের এ সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। জানা গেছে, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জার্মান সরকারের এ সহযোগিতায় শ্রমিকদের কী ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া কমপ্লায়েন্স কারখানা তৈরিতে এ সহায়তা ব্যবহারের ওপরও আলোচনা করা হয়েছে। এদিকে, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে জার্মানি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীতে জার্মানি হবে রফতানির প্রধান বাজার। বর্তমানে জার্মানিতে ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রচারের জন্য একটি ওয়েবসাইটও খুলবে জার্মানি। সেখানে তৈরি পোশাক খাতে উন্নয়ন, পোশাকের মানের বিবরণ তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, ইতোপূর্বে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপারের সঙ্গে আলাদা একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে জার্মান সরকার। এ চুক্তিতে বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতকে সামাজিক, পরিবেশগত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে সহায়তা করবে। আর বাংলাদেশ চুক্তির আলোকে সেসব দিক অনুসরণ করবে। ওই চুক্তির ভিত্তিতে দেশের টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জার্মান সরকার পর্যায়ক্রমে এ সহায়তা দেবে। সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানিকে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়ে তুলতে বাংলাদেশের পোশাকের দাম বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেবে জার্মান সরকার। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জার্মানি বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের উন্নয়নের জন্য তারা অনেক সহযোগিতা করেছে। বর্তমানে তারা তৈরি পোশাক রফতানির জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে। ভবিষ্যতে রফতানি যাতে আরও বৃদ্ধি পায় সেজন্য জার্মান সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের কথা জানিয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং চীনের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে জার্মান আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। এতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ মিলিয়ন ইউরো। মূলত শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে জার্মানের এ সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর বাংলাদেশ ও জার্মানির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো। জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। আশা করা হচ্ছে, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
×