ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে রাজধানীতে

ফেরার পথে সড়ক ও রেলে স্বস্তি, ফেরিঘাটে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফেরার পথে সড়ক ও রেলে স্বস্তি, ফেরিঘাটে ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীমুখী মানুষের ভিড় বেড়েছে কমলাপুর রেলস্টেশন এবং বিভিন্ন বাস টার্মিনালে। বাড়ছে নগরীর ব্যস্ততা। নীরবতা কাটিয়ে ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে শহরজুড়ে। তবে রাজধানীতে ফেরা যাত্রীরা বলছেন, ঈদের আগে যে যানজট ছিল তা নেই। যাত্রীদের চাপও তুলনামূলক কম। তবে কোন কোন বাস বাড়তি ভাড়া নিয়েছে। সব মিলে ফিরতি এই যাত্রায় তুলনামূলক কম ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ফের ভোগান্তি শুরু হয়েছে। শনিবার ঘাটে যানজট হয়েছে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ। কমলাপুর রেলস্টেশনে শনিবার সকাল থেকেই কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫টি ট্রেন এসেছে। এগুলোর দুয়েকটি বাদে বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌঁছায়। জামালপুরের তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন পৌঁছায় সকাল সাড়ে ৮টায়। ট্রেনটিতে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও তা ‘উপচে পড়া’ ছিল না। ঈদের ছুটি জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে কাটিয়ে ওই ট্রেনে ঢাকা ফিরেছেন সাদেকুল ইসলাম। পথে কোন ভোগান্তিতে পড়েননি জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদের সময়টা বাড়িতে খুব ভালভাবে কাটিয়েছি। ব্যাপক আনন্দ করেছি। ট্রেনও ঠিক সময়ে ছেড়েছে। ঢাকা ফেরার পথে কোন ঝামেলা হয়নি। এবারের ঈদযাত্রা ‘গতবারের চেয়ে ভাল’ মনে হয়েছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোখলেসুর রহমানেরও। জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে যমুনা এক্সপ্রেসে চড়ে সকালে কমলাপুর পৌঁছান তিনি। যাওয়ার সময় এবার তেমন ভিড় ছিল না। আসার পথে সামান্য ভিড় ছিল। তাও গতবারের চেয়ে অনেক কম, বলেন মোখলেসুর। আবুল খায়ের গ্রুপের কর্মকর্তা তৌহিদুল আলম চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসে। এবারের ঈদযাত্রা আগে-পরে ভালই ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ট্রেন টাইমলি গেছে, টাইমলি এসেছে। তবে দুপুরে জামালপুর থেকে আসা জামালপুর কমিউটার ট্রেনে ভিড় ছিল অনেক বেশি; ট্রেনটির ছাদে চড়ে আসতে দেখা গেছে অনেককে। ট্রেনটি দুই ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায় কম-বেশি ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। শনিবার বেশিরভাগ ট্রেন সময়মতো এসেছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৫টি ট্রেন কমলাপুরে এসেছে, ছেড়ে গেছে ২৮টি। যাত্রীদের চাপ মোটামুটি মন্তব্য করে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু বলেন, ঈদের আগে ঢাকা থেকে সবাই প্রায় একসঙ্গে যায় বলে ভিড় বেশি থাকে। কিন্তু আসার পথে ধীরে-সুস্থে আলাদাভাবে আসে। এজন্য ভিড় তেমন থাকে না। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসা বিভিন্ন রুটের বাসেও তেমন ভিড় দেখা যায়নি। কয়েক যাত্রী জানান, সড়কের কোথাও যানজট না থাকায় আসতে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে ফিরতি যাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন তাদের কেউ কেউ। ঈদ শেষে পরিবারের সঙ্গে চাঁদপুরের কচুয়া থেকে ঢাকা এসেছেন ব্যবসায়ী ইউনুস খান। পথে কোন ভোগান্তি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, গাড়ি ঠিক সময়ে ছেড়েছে। পথেও কোন যানজট ছিল না। খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। তবে ভাড়া পঞ্চাশ টাকা বেশি নিয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন নেত্রকোনা থেকে শাহজালাল পরিবহনে আসা যাত্রী কাদির। তিনি জানান, টিকেট প্রতি ৩০০ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। শেরপুর থেকে সাদিকা পরিবহনে আসা এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি রাখার কথা। হবিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দিগন্ত পরিবহনের বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা এহসানুল হক লিপু। অন্য সময় এই বাসে ৩০০ টাকা করে ভাড়া নেয়। আজ নিল ৪০০ টাকা করে। এদিকে বেশিরভাগ বাসে নিয়ম ভঙ্গ করে ছাদে যাত্রী পরিবহন করা হয়। যাত্রীরা জানিয়েছেন, ছাদে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত কম নেয়া হয়েছে। যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তারাই মূলত ছাদের যাত্রী। এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা কর্মস্থলে ফিরছেন সমানতালে। ভোর থেকে সদরঘাট নদী বন্দরে বিভিন্ন এলাকা থেকে একে একে লঞ্চ ভিড়তে থাকে। বেশিরভাগ লঞ্চেই যাত্রী ছিল প্রচুর। এদিকে সময়ে সময়ে রাজধানীতে মানুষের চাপ বাড়লেও এখনও যানজট সৃষ্টি হয়নি। সিগন্যালগুলোতে বাড়েনি ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা।
×