ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়া ফিরলে;###;অনেকেই আগে থেকে নির্বাহী কমিটি ছাড়ছেন

বিএনপির তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠন জোরদার হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিএনপির তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠন জোরদার হবে

শরীফুল ইসলাম ॥ তৃণমূলে দল গুছিয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে চায় বিএনপি। এ জন্য দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরলে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন জোরদার করবে বিএনপি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই সৌদি আরবে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করেছেন। জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর ৬ আগস্ট বিএনপির ৫৯১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এ কমিটি ঘোষণার আগেই ৭৫টি সাংগঠনিক জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের সব কমিটি পুনর্গঠনের কথা থাকলেও এখনও শতকরা ৯০ভাগ কমিটিই পুনর্গঠন করা হয়নি। এ কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে আছে। যদিও জাতীয় কাউন্সিলের বেশ কিছুদিন আগেই বিএনপি হাইকমান্ড সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়। কিন্তু গ্রুপিং-কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে এ কাজে পুরোপুরি সফলতা অর্জন করতে পারেনি। তাই তৃণমূলে দল পুনর্গঠন স্থগিত রেখেই এ বছর ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। সূত্র জানায়, জেলা কমিটিসহ বিভিন্ন তৃণমূল কমিটিতে শীর্ষ পদ ধরে রাখতে ইতোমধ্যেই বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রায় অর্ধশত নেতা। তারা এখন দ্রুত তৃণমূলের কমিটি পুনর্গঠন করতে দলীয় হাইকমান্ডকে অনুরোধ করছেন। এ পরিস্থিতিতে শীঘ্রই তৃণমূলে দল পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হবে। বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তাঁর দেশে ফেরার পরই এ কাজ শুরু হবে। প্রতি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা তৃণমূলে দল পুনর্গঠনের কাজ তদারকির দায়িত্ব পালন করবেন। আর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ সমন্বয় করবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। সূত্র মতে, তৃণমূলে দল পুনর্গঠনের পর নতুন কমিটির নেতাদের মাধ্যমে কেন্দ্রের নির্দেশনায় সারাদেশে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার কৌশল নেয়া হবে। বিএনপি হাইকমান্ড মনে করছে সর্বস্তরে দল পুনর্গঠন করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে না পারলে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সুবিধা করা যাবে না। বিশেষ করে এ সরকারের বিরুদ্ধে আগের ২ দফা আন্দোলন কর্মসূচীতে ব্যর্থতার পর পরবর্তীতে হিসাব নিকাশ করেই মাঠে নামতে চায় বিএনপি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করে বিএনপি প্রথমেই জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে চায়। তারপর আস্তে আস্তে জনমত তৈরি করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের দিকে যেতে চায়। তবে আন্দোলন শুরুর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা সারাদেশে জনসংযোগ কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। কোথাও কোথাও জনসভা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাতে অংশ নেবেন। প্রসঙ্গত: জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে গতবছর ৯ আগস্ট কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিএনপির ৭৫ সাংগঠনিক জেলা ও প্রতিটি জেলার বিভিন্ন ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন করতে বলা হয়। কমিটি পুনর্গঠনের চিঠি পাঠানোর মাসখানেক পর ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার আগে গুলশান কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৈঠককালে তিনি দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই মিলে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজে সহযোগিতা করবেন। তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ হলেই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার কথাও জানান তিনি। খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে গিয়ে ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ২ মাস অবস্থান করে গতবছর ২১ নবেম্বর দেশে ফেরার পরও তৃণমূলে কমিটি পুনর্গঠন করতে না পারায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা তোপের মুখে পড়েন। দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় কমিটি পুনর্গঠন করা সম্বব হয়নি জানতে পেরে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া যেসব এলাকায় কমিটি পুনর্গঠন হয়নি সেসব এলাকা থেকে মনোনীত প্রতিনিধিদের কাউন্সিলর করার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে দল পুনর্গঠন কাজ স্থগিত রেখেই এ বছর ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয়। এর আগে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের আগে ৬ মাস চেষ্টা করেও সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন করতে পারেনি বিএনপি। পরে কেন্দ্র থেকে কাউন্সিলর ঠিক করে তাদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করা হয়। বিএনপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এ যাবত মাত্র দশটি কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাকি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কোন কোনটির কমিটি হওয়ার পর এক যুগেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। আর প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ ইউনিট কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়নি। বার বার তাগিদ দেয়ার পরও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা যাচ্ছে না। মূলত: ওয়ান-ইলভেনের পর থেকেই বিএনপির দুর্দশা শুরু হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলটির অবস্থা আরও নড়বড়ে হয়। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার পর সর্বস্তরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি হাইকমান্ড। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে গতবছর ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচী পালন করে নাশকতার মামলায় জড়িয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অনেকেই চরম দুরাবস্থার শিকার হন। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন করতে খালেদা জিয়া জাতীয় কাউন্সিলের আগে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে দেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় তিনি কাউন্সিলের পর তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করার কৌশল নেন। তবে জাতীয় কাউন্সিলের পর কোথাও কোথাও কমিটি পুনর্গঠন করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ এলাকায়ই তা করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের আগে থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন কাজ শুরু করা হয়। কোন কোন এলাকায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ কমিটিই পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় কাউন্সিলের বেশ কিছুদিন পরে হলেও কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো হয়ে গেলেই সর্বস্তরে দলীয় কার্যক্রম চাঙ্গা হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পর আবার পুরোদমে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন কাজ শুরু হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, হজ করতে সৌদি আরব যাওয়ার আগেই চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সৌদি আরবে অবস্থানকালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। এক সময় তারেক রহমান সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে প্রতিনিধি সম্মেলন করেছেন। তাই তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সম্পর্কে তার ভাল ধারণা রয়েছে। এ কারণেই তৃণমূলে দল পুনর্গঠনের বিষয়ে খালেদা জিয়া তারেক রহমানের মতামত নিয়েছেন। খালেদা জিয়া নিজেও এখন সারা দেশের তৃলমূল নেতাদের খোঁজখবর রাখেন। তবে তৃণমূলের কমিটিতে থাকতে বিএনপির নির্বাহী কমিটি থেকে বেশ ক’জন নেতা পদত্যাগ করায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাদের রেখে কিভাবে কমিটি পুনর্গঠন করা যায় এ বিষয়টি নিয়েও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ভাবতে হচ্ছে।
×