ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাচ্ছে আদানী

এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় রিলায়েন্স

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় রিলায়েন্স

রশিদ মামুন ॥ ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড কুতুবদিয়ায় একটি এলএনজি টার্মিনাল এবং ৭৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বাণিজ্যিক প্রস্তাব দিয়েছে সরকারকে। ভারতের বেসরকারী খাত গত বছরের জুনে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের জন্য যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছিল সেই ধারাবাহিকতায় এই বাণিজ্যিক প্রস্তাব দিল কোম্পানিটি। এছাড়াও ভারতীয় কোম্পানি আদানী পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশে বিনাদরপত্রে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাচ্ছে। বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইনে কোম্পানি দুটিকে কাজ দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর রিলায়েন্স পাওয়ার সরকারের কাছে বাণিজ্যিক প্রস্তাব দিয়েছে। এতে একটি এলএনজি টার্মিনালসহ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এলএনজি টার্মিনালটি হবে কুতুবদিয়াতে। ভাসমান টার্মিনালটি দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। এছাড়া তারা একটি ৭৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রও নির্মাণের বণিজ্যিক প্রস্তাব দিয়েছে। কেন্দ্রটি থেকে ৭৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, কেন্দ্রটি চালাতে সব মিলিয়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হবে। বাকি গ্যাস বাংলাদেশ কিনে নেবে। রিলায়েন্সের গ্যাস ক্রয় নিয়ে সম্প্রতি পেট্রোবাংলা আপত্তি তোলে। পরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। এলএনজি বেশি দরে কিনে কমদামে বিক্রি করলে পেট্রোবাংলা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। রিলায়েন্স বলছে, তাদের কেন্দ্রটি অর্থসংস্থানের ৩০ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন এ বিষয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের কমিটি আলোচনা শুরু করবে। দরদাম ঠিক হলে রিলায়েন্সের সঙ্গে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। গত বছরের জুনে ভারতের খ্যাতনামা শিল্প গ্রুপ রিলায়েন্স এবং আদানী পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশে চার হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য পিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে। এর মাধ্যমে দেশে অন্তত পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করার কথা জানায় তারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়। এরমধ্যে রিলায়েন্স পাওয়ার খানিকটা এগিয়ে রয়েছে আদানীর চেয়ে। তবে ভারতে রিলায়েন্স পাওয়ারের একটি পড়ে থাকা বিদ্যুত কেন্দ্র বাংলাদেশে বসানো হচ্ছে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। ভারত অতিরিক্ত দরের কারণে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুত নেয়া বন্ধ করেছিল বলেও মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান। বাংলাদেশে কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ভারতে কেন্দ্র স্থাপন করে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করতে চায় ভারতীয় এই দুই কোম্পানি। রিলায়েন্স পাওয়ার কোম্পানি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থাপিত এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কালাই-২ জলবিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ৯৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে রফতানির প্রস্তাব দিয়েছিল। এছাড়া আদানী ভারতে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত রফতানি করতে চায়। সরকারী সূত্র বলছে, ভারতের বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আদানী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড সুবিধাজনক স্থানে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৮০০ মেগাওয়াট করে। আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালানো হবে। সরকার বলছে মহেশখালীতে পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। সেখানেই কেন্দ্রগুলো করতে দেয়ার পক্ষে তারা। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতের সরকারী খাত অনেক আগে থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে। এখন ভারতের জাতীয় কোম্পানি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে ভারতের হেবি ইলেক্ট্রিক লিমিটেডের (ভেল) সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানি। এখানেও ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশ এখন ভারত থেকে দৈনিক ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। এর মধ্যে ৩৫০ মেগাওয়াট সরকারী খাত থেকে আর ২৫০ মেগাওয়াট বেসরকারী খাত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। দেশটির বেসরকারী খাত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির আলোচনা চলছে। ভারতের ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রিড সংযোগ রয়েছে।
×