ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষকদের দায়িত্বহীনতা

পুনঃনিরীক্ষণে ফেল থেকে পাস

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পুনঃনিরীক্ষণে ফেল থেকে পাস

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চরম অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার কারণে দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় যারা রয়েছেন তারা চরম দায়িত্বহীনতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৮ আগস্ট প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের পেছনে বোর্ড কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদের ফলাফলে বিপর্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন কলেজে কর্তব্যরত পর্যবেক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আশার আলো নিভিয়ে দিচ্ছেন। ভুলভাবে খাতা পর্যবেক্ষণের বিপরীতে সরকারী অর্থ লোপাটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত এসব অসাধু শিক্ষক। এসব তথ্যের প্রমাণ মিলেছে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশে। সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পর্যবেক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অসাধু শিক্ষকরা প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। ফলে জিপিএ-৫ পাওয়ার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা ফেল যেমন করছে, তেমনি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের পর জিপিএ-৫ পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রশ্ন উঠেছে, ফল প্রকাশে চরম অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে এ ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গণে এমনকি প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে ও অসাধু পর্যবেক্ষকদের দায়িত্বহীনতা শিক্ষার্থীদের ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে যারা খেলছেন তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, লাভবান হচ্ছে সরকার। কারণ, প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়। কিন্তু ফল প্রকাশের পর সরকার বা শিক্ষা বোর্ড ওই অর্থ আর ফেরত দেয় না। অথচ চ্যালেঞ্জে হেরে যাচ্ছে শিক্ষা বোর্ড, পর্যবেক্ষক বা পরীক্ষক। তবে শিক্ষার্থীরা ফল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণার দিন থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য মোবাইলে এসএমএস প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে আর্থিক খেসারত দিতে হয়েছে। এমন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যারা দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত খেসারত দিয়ে অকৃতকার্যের স্থলে জিপিএ-৫ পাওয়ার মতো নজিরও সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর ৫৬ হাজার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন মোবাইলে জমা পড়ে। সে অনুযায়ী শতাধিক পর্যবেক্ষক একদিনে এসব খাতা পুনঃনিরীক্ষণের কাজে নিয়োজিত হন। প্রশ্ন উঠেছে, শতাধিক পর্যবেক্ষকও সঠিকভাবে খাতা পর্যবেক্ষণ করেছেন কি-না? কারণ কয়েক ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে ৫৬ হাজার খাতা পুনঃনিরীক্ষা আদৌ সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের পুনঃনিরীক্ষণ অনেকটা আইওয়াশ। কারণ এক থেকে দেড় লাখ শিক্ষার্থীর খাতা পর্যবেক্ষণ করতে যদি এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে সেক্ষেত্রে ৫৬ হাজার খাতা কিভাবে কয়েক ঘণ্টায় পুনঃনিরীক্ষণ সম্ভব। তবে পুনঃনিরীক্ষণের বিষয়টি অনেক অভিভাবকই জানেন না। এ পুনঃনিরীক্ষণের মাধ্যমে শুধু খাতার ওপর প্রদত্ত নম্বরের সঙ্গে ভেতরে প্রশ্নোত্তরে প্রদত্ত নম্বরের মিল রয়েছে কি-না তা-ই পরীক্ষা করা হয়। কোন প্রশ্নের বিপরীতে উত্তরের মানদ- অনুযায়ী নম্বর প্রদান সঠিক রয়েছে কি-না তা দেখা হয় না। প্রশ্ন উঠেছে, মানসম্মত নম্বর যেমন শিক্ষার্থী পাচ্ছে না, তেমনি খাতা পুনঃপর্যবেক্ষণ না করে পুনঃনিরীক্ষণের নামে বোর্ড শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। শুক্রবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ১৮ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদনকৃত ১৫ হাজার ৯২৩ শিক্ষার্থীর ৫৫ হাজার ৮৭৯টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়। এ পুনঃনিরীক্ষণের মাধ্যমে ৩২৯ শিক্ষার্থীর ফলাফলে পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে পূর্বের ফলাফলে ভুল থাকায় ৩৯ শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আবার একেবারে ফেল করা শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৬ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়াও এক হাজার ১২৯ শিক্ষার্থীর ফলাফলে পরিবর্তন এসেছে। কুমিল্লা বোর্ড নিজস্ব সংবাদদাতা কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে ২৪৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ জন। শনিবার দুপুরে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর পুনঃনিরীক্ষণের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে ৩২ হাজার ৪৯৩ জন আবেদন করেছিল। এদের মধ্যে ২৪৬ জনের ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে এবং নতুন করে ২৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ নিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মোট ১ হাজার ৯৩৬ জন জিপিএ-৫ অর্জন করল। যশোর বোর্ড স্টাফ রিপোর্টার যশোর থেকে জানান, এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ১৪৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ জন ও অকৃতকার্য ৩৯ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। শনিবার দুপুরে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, এ বছর ৩১ হাজার ৯৫৬ জন পরীক্ষার্থী খাতা পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিল। খাতা পুনঃনিরীক্ষায় ১৪৩ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ জন ও অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছেন ৩৯ জন পরীক্ষার্থী। উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফলাফলে চমক সৃষ্টি করে যশোর বোর্ড।
×