ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় ৪ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কলাপাড়ায় ৪ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৭ সেপ্টেম্বর ॥ খান-খন্দক কিংবা এবড়োথেবড়ো কাদামাটি ঘেঁটে হাঁটু সমান কাপড় উঁচিয়ে এখন আর বাজারটিতে আসতে হয় না সাধারণ মানুষকে। বাবলাতলা বাজারটির চারদিকের দশটি গ্রামের এমন দৃশ্য। ধুলাসার এবং বালিয়াতলী ইউনিয়নের মাঝখানে বাজারটির চারদিকে অন্তত দশ কিলোমিটার এলাকায় এসব গ্রামের মানুষ এখন উৎফুল্লচিত্তে স্বস্তিদায়ক মানসিকতায় পাকা সড়কে জুতা পায়ে চলাচল করছে ১২ মাস। কাউকে জুতা হাতে নিয়ে চলতে হয় না। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষাÑ সব কালই তাদের কাছে এখন সমান। সকাল, দুপুর কিংবা রাত কখনই তাদের কাছে সমস্যার নয়। বিদ্যুতও পৌঁছে গেছে। গভীর রাত অবধি বাজারে গিয়ে এখন তারা ডিস এন্টেনার বদৌলতে বেসরকারী চ্যানেলের তাঁজা খবর দেখেন। জমান আড্ডার আসর। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমন যুগান্তকারী উন্নয়নে সাগরপারের কলাপাড়ার দুর্গম জনপদের মানুষকে স্বস্তি এনে দিয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মুহূর্তেই যানবাহনে চড়ে আসছে। শুধু বাবলাতলা বাজার নয়। চরচাপলী বাজার থেকে আশপাশের অবস্থাও এক। পাকা রাস্তা দিয়ে গার্ডার ব্রিজ পেরিয়ে যানবাহন নিয়েই মানুষ যেতে পারছে পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি সৈকতে। সেখানে দেখতে পারে লাল কাঁকড়াদের ভোঁ-দৌড়। দেখছেন সৈকতের নৈসর্গিক দৃশ্য-সাগরের উত্তাল জলরাশি। চরধুলাসার বেড়িবাঁধ থেকে যেখানে সংলগ্ন বাবলাতলা বাজারে আসতেই এক ঘণ্টা সময় লাগত, এখন মাত্র দশ মিনিটেই তারা পৌঁছে যান। ধুলাসার এবং বালিয়াতলীর ঢোঁস এলাকা হচ্ছে ইলিশের ভাল মোকাম। এখান থেকে ইলিশ কিনে কলাপাড়া আনতে লাগত বরফ। এখন তাজা ইলিশ সেখান থেকে কলাপাড়ার বাজারে অনায়সে আসছে। কারণ সময় লাগছে মাত্র আধা ঘণ্টা। মাত্র চারটি বছরে পাল্টে গেছে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। ধানখালীর ছইলাবুনিয়া গ্রাম থেকে কলাপাড়ায় আসতে লাগত নানান প্রস্তুতি। সময় লাগত অন্তত চার ঘণ্টা। সাত বছর আগের অবস্থা ছিল এটি। গ্রামের পাশে খালপাড়ের কাঁচা সড়ক দিয়ে এক কিমি পথে বেড়িবাঁধে আসতেই সময় লাগত অন্তত এক ঘণ্টা। আর বর্ষাকালে তো কাদামাটিতে নাস্তনাবুদ। জামা-কাপড়, হাত-পা সব কাদায় একাকার হয়ে যেত। বর্ষকালে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পর্যন্ত অর্ধেক কমে যেত। সকলের ওই দুঃখও কেটে গেছে। আঁকাবাঁকা খালপাড়ের সড়কটি এখন পিচঢালা পথ। শুধু হাঁটা-চলার সুবিধা হয়নি। গ্রামের সকল চাষী তাদের উৎপাদিত পণ্যশস্য বাজারজাত করছে স্বস্তিতে। কৃষক হানিফ আকন জানালেন, এ সড়কটি পাঁকা করায় তাদের মূল উন্নয়ন হয়ে গেছে। একই মন্তব্য স্কুলের শিক্ষকসহ সচেতন মানুষের। ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে গেছে এ সড়কটি।
×