ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালাসের অপেক্ষায় বহিঃনোঙ্গরে ১৪ কন্টেনারবাহী জাহাজ

বন্দর জেটিতে আবারও কন্টেনার জট

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বন্দর জেটিতে আবারও কন্টেনার জট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানি ঈদে সাপ্তাহিক ও সরকারী ছুটি মিলিয়ে টানা ৬ দিন প্রায় সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও পণ্য খালাস কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে বন্দরের জেটিতে আবারও দেখা দিয়েছে কন্টেনার জট। এখন অনেকটা ধীরগতিতে চলছে বন্দরের কার্যক্রম। কন্টেনার রাখার জায়গা খালি না থাকায় এখন জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪টি কন্টেনারবাহী জাহাজ বন্দরে বন্দরের বহিঃনোঙরে অপেক্ষারত ছিল। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে সাধারণত দিনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার একক কন্টেনার খালাস হয়। অথচ কোরবানির ছুটি শুরুর পর বন্দর থেকে ১ হাজার ৭২৫ একক কন্টেনার খালাস হয়েছে। একইসঙ্গে কন্টেনার এবং পণ্য খালাসের জন্য বেশ কয়েকটি জাহাজ বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে অপেক্ষায় রয়েছে। এতে আমদানিকারকদের ব্যয় অনেক বাড়ছে। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে কন্টেনার জটের সৃষ্টি হয়েছে- এমনটি নয়। মূলত ঈদের কারণে মহাসড়কগুলোতে টানা ৬ দিন ট্রাক, লরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে পণ্য খালাস করা সম্ভব হয়নি। ফলে বন্দরে এ জট দেখা দিয়েছে। আমদানিকারকরা জানান, কন্টেনার খালাসের জন্য বহিঃনোঙরে অপেক্ষায় থাকা জাহাজগুলোর পরিচালন ব্যয় প্রতিদিনই বাড়ছে। এ অর্থ আমদানিকারককে বহন করতে হবে। একইসঙ্গে বেশি সময় কন্টেনার আটকে থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কন্টেনার মালিককে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে। এসব অতিরিক্ত ব্যয়ের ফলে আমদানি করা পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে চাপ কমাতে ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য বেসরকারি কন্টেনার ডিপোগুলোতে নিয়ে খালাসের বাধ্যবাধকতা জারি করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে নির্ধারিত কন্টেনারগুলো বন্দর থেকে সময়মতো স্থানান্তর করতে পারছেন না ডিপো পরিচালনাকারীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। বেসরকারী ডিপোগামী কন্টেনার বন্দর থেকে দ্রুত খালাস না করার কারণেও বন্দরে কন্টেনার জট বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যায়, বন্দরে প্রায় ২৬ হাজার একক কন্টেনার রাখার জায়গা থাকলেও সেখানে প্রায় ৩২ হাজার কন্টেনার রাখা হয়েছে। এছাড়া খালাসের অপেক্ষায় বহিঃনোঙরে অপেক্ষা করছে ১৪টি কন্টেনারবাহী জাহাজ। বন্দর চত্বরের ২০টি ইয়ার্ডে কন্টেনার আনা-নেয়ার জন্য ব্যবহৃত জায়গায় নতুন করে কন্টেনার রাখা হচ্ছে। এতে বেশ বড় কন্টেনার জটে পড়তে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, শুধু ঈদের দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এছাড়া অন্যান্য দিনে কন্টেনার ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল। কিন্ত ঈদের ছুটির সময় আমদানিকারক ও কন্টেনার ডিপো পরিচালনাকারীরা কন্টেনার খালাস না নেয়ায় বন্দরে কন্টেনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফলে বন্দরে কন্টেনার জট সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে খুব বেশি পণ্য খালাস হবে না। তবু দ্রুত জট সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষে কাস্টমসে শুল্কায়নের কাজ শুরু হওয়ায় বন্দর থেকে পণ্য খালাস করছেন আমদানিকারকরা। এছাড়া বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহারকারীদের নিয়ে দ্রুত বৈঠকের কথা জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আকতার হোসেন বলেন, ছুটির সময় পণ্য খালাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পণ্য খালাসের হার কমেছিল। গতকাল থেকে সব অফিস খুলেছে। ইতোমধ্যে পণ্য খালাসও শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরু থেকে নানা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। জানুয়ারি ও মার্চ মাসে দুই দফায় প্রায় ১৬ দিন এবং আগস্ট মাসে ৬ দিন বিভিন্ন দাবি নিয়ে ধর্মঘট করেছিল নৌ শ্রমিক ও মালিক পক্ষ। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বেশ কিছুদিন পণ্য খালাস ও অন্যান্য কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম বার বার ব্যাহত হওয়ায় ব্যাঘাত ঘটেছে আমদানি-রফতানিতে। আর ক্ষতির মুখে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস।
×