ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জুলাইতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩ হাজার কোটি টাকার

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জুলাইতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩ হাজার কোটি টাকার

রহিম শেখ ॥ লাগাম টানতে সুদের হার কমানো হলেও গত অর্থবছর জুড়ে রেকর্ড পরিমাণে বিক্রি হয়েছে সঞ্চয়পত্র। বিক্রির এই ধারাবাহিকতা চলতি অর্থবছরেও দেখা গেছে। অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের জুলাই মাসের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। যার পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ার বাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন সবাই। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সুদের হার কমানোর পরও গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই উল্লম্ফনে সরকারের ঋণের বোঝা আরও বেড়েছে। ফলে সরকারকে এখন ঋণ পরিশোধে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এদিকে গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার ১১০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ এবং মেয়াদ পূর্তির পর আসল শোধ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এ হিসেবে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার। এই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকবে। প্রয়োজন পড়লে সরকার এই অর্থ খরচ করবে। সরকার এই টাকা খরচ করুক বা না করুক গ্রাহকদের সুদ বা মুনাফা দিতে হবে। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই মাসে এ খাতে নিট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি আসে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও ব্যাংকের আমানতে সুদহারের তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গেল অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র রেকর্ড পরিমাণে বিক্রি হয়েছে। জুলাই মাসের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরেও এই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, শেয়ার বাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন সবাই। তিনি বলেন, ব্যাংক আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। তাই এর বিক্রি যত বাড়বে সরকারের ঋণের বোঝাও তত বাড়বে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার আরেক দফা কমানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই ঋণের বোঝা কমাতে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসের আগ পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে প্রতি মাসে ১ হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পেতেন একজন গ্রাহক। সুদের হার কমায় এখন পাচ্ছেন ৯১২ টাকা। তারপরও বিক্রি কমছে না। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে এই লক্ষ্য ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি তার চেয়েও ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বেড়ে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকায় পৌঁছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার উল্লেখযোগ্য অংশ সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে খরচ হবে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে সরকারকে। জানা যায়, দেশে ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে। এর মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ বছর মেয়াদী ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ৫ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ২ শতাংশ কমানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণের সুদ বাড়িয়েছে দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া মানে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া। সুদ পরিশোধের কারণে সরকারে উন্নয়ন বাজেট কমে আসবে। সুদ হার কমানোর পরও ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকেই ঝুঁকছে মানুষ বলে মনে করেন তিনি।
×