ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘গণবক্তৃতা’ দেবেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট

দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করবে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করবে বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সামনে এক অনুকরণীয় নাম। এ কারণে সরকার এ বছর উদযাপন করবে দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। আগামী ১৭ অক্টোবর দিনব্যাপী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে এ দিবস। ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এ দিবসের কর্মসূচী। এ উৎসবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা যোগ দেবেন বলে প্রত্যাশা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বাংলাদেশের এই উৎসবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম উপস্থিত থাকবেন বলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস সূত্রে জানা গেছে। তিনি উৎসবের একদিন আগে অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর ঢাকা আসবেন। এরপর দিন ১৮ অক্টোবর ঢাকা ছেড়ে যাবেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল বলেন, এ উৎসবের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ বছরে কিভাবে আমরা এ দেশ থেকে দারিদ্র্য বিমোচন করছি, তা বিশ্ববাসীকে জানানো হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ দিবসের কি নোট স্পীকার হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে তিনি অন্য একটি কাজে ব্যস্ত থাকবেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আশা করা হচ্ছে, সব কিছু ঠিক থাকলে হয়ত তিনিই দারিদ্র্য বিমোচন উৎসবে কি নোট স্পীকার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি ‘গণবক্তৃতা’ দেবেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্বব্যাংক তথা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অভিভূত। তাই নিজের আগ্রহেই বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’। বাংলাদেশে এবার দিবসটি ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হবে। ঢাকায় তিন দিনের সফরে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গেও সাক্ষাত করার পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। তিনি বলেন, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অর্জন শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, অনুকরণীয় হয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু আয় কম হওয়ার পরও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ দেখিয়েছে প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র অবলম্বন নয়, স্বল্প আয় নিয়েও অনেক অর্জন সম্ভব। এ সাফল্য দেখতেই বাংলাদেশ সফরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্বব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঢাকা আসছেন জিম ইয়ং কিম। সর্বশেষ ২০০৭ সালের নবেম্বরে দু’দিনের সফরে ঢাকা এসেছিলেন তখনকার বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর দারিদ্র্য বিমোচনে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৮ শতাংশ। পরে এমডিজি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে তা ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এ সময়ের আগেই বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য অর্জন করে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০০৫ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, সে বছর পর্যন্ত দারিদ্র্য হার নেমে আসে ৪০ শতাংশে। পরে ২০১০ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে তা সাড়ে ৩১ শতাংশে নামে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাস পর্যন্ত দেশের দারিদ্র্যের হার সাড়ে ২২ শতাংশ। এটি বিদ্যমান দারিদ্র্য বিমোচন হারকে ধরে তৈরি একটি অনুমিত হিসাব। ২০২১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে বলেও জানিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। ২০১১ ও ১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এ প্রকল্পে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত জানায় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েন পেছনে ফেলে সামনে এগুতে চায় বিশ্বব্যাংক। এর অংশ হিসেবে প্রতিবছরই বাংলাদেশে অর্থায়ন বাড়ানো হচ্ছে। এবারের দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা হবে বলেও জানান বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এ ধরনের ইতিবাচক বক্তব্য এলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের সামনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালন করে আসছে জাতিসংঘ। সাধারণত যেসব দেশের দারিদ্র্যে হার কমিয়ে আনা প্রশংসনীয়, সেসব দেশেই দিবসটি উদযাপন করা হয়।
×