ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনিশ্চয়তায় সামিট পাওয়ারের বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অনিশ্চয়তায় সামিট পাওয়ারের বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে জ্বালানি খাতের কোম্পানি সামিট পাওয়ারের বন্ধ হয়ে যাওয়া লেনদেন কবে শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। একীভূতকরণ সংক্রান্ত জটিলতায় উভয় স্টক একচেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে অনিশ্চতা। তাদের অনেকেই জরুরী প্রয়োজনে কোম্পানিটির শেয়ার কেনা-বেচার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উভয় পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি গঠন এবং ঢাকা স্টক একচেঞ্জের এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের পরও জট খোলেনি। এছাড়া কোম্পানিটির একীভূতকরণ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে কিছুটা মতভেদ বেড়েছে। একইসঙ্গে কোরাম সঙ্কটের কারণে কমিশন বৈঠক করতে না পারায় অভিযোগ তুলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। সবমিলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারী। আরও কতদিন তাদের ভুগতে হবে সেটিও বলা যাচ্ছে না। কারণ ইস্যুয়ার কোম্পানি, স্টক একচেঞ্জ এবং কমিশনের কোন কিছু আসবে যাবে না, ভুগবে কোম্পানিটির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। জানা গেছে, সামিট পাওয়ারের সঙ্গে একই গ্রুপের তিন কোম্পানির একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারকে তালিকাচ্যুত করার ক্ষেত্রে আগের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছিল উভয় স্টক একচেঞ্জ। তবে আগের ঘটনায় কোন প্রশ্ন না তোলা হলেও এবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। দেখা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির সঙ্গে পাঁচ দফায় মোট নয়টি কোম্পানি একীভূত হয়েছে। আগের প্রতিটি ক্ষেত্রে একীভূত হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা এ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের তিন সপ্তাহ থেকে আড়াই মাস পর শেয়ার পেয়েছিলেন। এমনকি ২০১৩ সালে সামিট এ্যালায়েন্স পোর্টের সঙ্গে তালিকাভুক্ত ওশান কনটেইনার কোম্পানিটি একীভূত হয়েছিল। এ একীভূতকরণ প্রক্রিয়া কার্যক্রর সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি। এর তিন সপ্তাহ পর ৪ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সামিট এ্যালায়েন্স পোর্টের মূলধন বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছিল। এরও প্রায় এক সপ্তাহ পর শেয়ার পেয়েছিলেন ওশান কন্টেনারের শেয়ারহোল্ডাররা। জানতে চাইলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা বলেন, একীভূতকরণ নিয়ে আইন না থাকায় আগের দৃষ্টান্ত সামিট পাওয়ারের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করেন তারা। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আদালতের নির্দেশনা মেনে সামিট পাওয়ারের একীভূতকরণ করার বিষয়টি যাচাই না করেই সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারকে তালিকাচ্যুত করা হয়। তিনি বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ বেশ রক্ষণশীল আচরণ করলেও এ ক্ষেত্রে অনেকটাই উদার ছিল। এ কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পারাবারিক কারণে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন দেশের বাইরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন হেলাল উদ্দিন নেজামী। তিনি জরুরী বৈঠক করে সামিট পাওয়ারের একীভূতকরণকে বেআইনী মনে করেন। জরুরী বৈঠকে উভয় স্টক একচেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাময়িক চাকরিচ্যুতি এবং লেনদেন বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এমনকি বৃহস্পতিবার জন্মাষ্ঠীর ছুটি ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও জরুরী বৈঠক করতে দেখা গেছে কমিশন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ তড়িঘড়ি করে তদন্ত কমিটি গঠন এবং এক কর্মকর্তাকের সাময়িক বরখাস্ত করে। তবে চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ শুধু কমিটি গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তারা কোন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেনি। তবে কোরাম সঙ্কটের কারণে কমিশনের শুক্রবারের বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এরই অংশ হিসেবে এক কমিশনারের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অর্থ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। এই নিয়ে উভয় স্টক একচেঞ্জ এবং কমিশনের মতো কিছুটা টানাপোড়েনও সৃষ্টি হয়েছে। যেটির সুরাহা এখনও হয়নি। কবে কোম্পানিটি স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরবে তাও নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। কমিশনের অভিযোগ একীভূতকরণের আগে সামিট পাওয়োরের পরিচালনা পর্ষদ মূলধন বাড়ানোর আবেদন করেনি। কিন্তু ঈদ-উল-আযহার আগে কোম্পানিটি বিএসইসিতে মূলধন বাড়ানোর আবেদন করে। এতে হয়ত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে ডিএসইর একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একীভূতকরণে কোন আইন বা নীতিমালা না থাকার কারণে বারবারই কমিশন আদালতে কোম্পানিগুলোর কাছে হেরে যায়। কারণ কোম্পানি আইন অনুসারে আদালতের রায় কোম্পানির পক্ষে গেছে। একাধিকবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আদালতে কোম্পানির কাছে হেরে এসেছে। তাই সবার আগে জরুরি একীভূতকরণ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট আইন। যেটি নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই আইনের দিকেই নজর দেয়া উচিত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর অন্য এক পরিচালক বলেছেন, আগের পদ্ধতি অনুসরণ করেই সামিট পাওয়ারের একীভূতকরণ হলেও কিছুটা বিচ্যুতি হয়ত থাকতে পারে। তবে এ ঘটনা নিয়ে যতদূর পর্যন্ত জল গড়িয়েছে, তার পেছনে স্টক একচেঞ্জের প্রভাবশালী সদস্যদের কিছুটা দায় রয়েছে। কারণ প্রভাবশালী একাধিক সদস্যও কমিশনে এই একীভূতকরণ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে আকার ধারণ করেছে।
×