ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সানন্দা স্বাচ্ছন্দ্য

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সানন্দা স্বাচ্ছন্দ্য

ছবিটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ভারি প্রাণময়, নান্দনিক এক ছবি যাতে বাংলার গ্রামীণ নারীর জীবনচিত্র চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। আলোকচিত্রটি তুলেছেন আমাদের নড়াইলের আলোকচিত্রী, ছাপা হয়েছে জনকণ্ঠে। চিত্রা নদীর পাড়ের নড়াইল রীতিমতো নড়েচড়ে উঠেছে সেখানকার কৃতী সন্তান দেশবরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান স্মরণে আয়োজিত সুলতান মেলায় জীবনের জয়গানে। সেখানে নারীর সানন্দা স্বাচ্ছন্দ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ স্থানীয় মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। নৌকা বাইচে সাধারণত পুরুষদের অংশগ্রহণ দেখা যায়। কিন্তু নড়াইলে নারীরা এই ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে এলাকাবাসীকে মাতিয়ে রাখে। বৈঠার টান, ঢাকঢোলের শব্দ ও কাঁসা-পিতলের ঝংকারে চিরচেনা চিত্রার রূপ বদলে গিয়েছিল। মাঝিমাল্লাদের ‘হেইয়্যা’ ‘হেইয়্যা’ হর্ষধ্বনির আওয়াজ ছিল আরও বেশি ছন্দময়। নৌকা বাইচ উপলক্ষে নড়াইল জেলাসহ পাশর্^বর্তী জেলাসমূহের বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ চিত্রা নদীর দুই পাড়ে ভিড় করেন। নৌকাবাইচ শুরুর আগেই চিত্রা নদীর দুই পাড়, বাসাবাড়ি ও রূপগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদসহ গাছে গাছে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। উল্লেখ্য, চিত্রা নদীর ফেরিঘাট এলাকা থেকে এসএম সুলতান সেতু পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় নারীদের ৫টি ও পুরুষদের ২২টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীরা যথানিয়মে অবদান রেখে চলেছেন। এখন পুরুষ আর নারীর জন্য আলাদা আলাদা খেলা বলে কিছু আর নেই। কী ক্রিকেট, কী ফুটবল কী অন্যান্য খেলাÑ সর্বত্রই নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় নৌকা বাইচ নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় সংযোজন। তাছাড়া অনুর্ধ ১৬ মহিলা ফুটবল দল অনেক আশা জাগাচ্ছে। বাফুফে দলটির জন্য এক বছরের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নারীর কর্মপরিধি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যে সমাজ এক সময়ে নারীকে পিছনে ঠেলে রাখত এখন সেই সমাজে নারী তার নিজেরই ক্ষমতাবলে সর্বস্তরে স্থান করে নিচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের পথে তার অগ্রযাত্রা এখন শুধু দেশবাসীরই নয়, বিশ্ববাসীরও বিস্ময়। রাজধানীর যানবাহনে ভারাক্রান্ত ব্যস্ত সড়কে নীল পোশাক পরিহিতা সপ্রতিভ নারী সার্জেন্ট লাল মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটছেনÑ এমন দৃশ্য চাক্ষুস করা এখন আর কল্পনা নয়। দেশে নারীর মানবাধিকারের নিশ্চয়তা সামগ্রিকভাবে অর্জিত না হলেও তারা অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। দেশের অর্থনীতির তিনটি প্রধান খাত- গার্মেন্টস শিল্প, কৃষি এবং বিদেশে শ্রমদানÑ তিন খাতেই সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন সাধারণ নারী। সহস্রাব্দের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ যে সকল সূচকে এগিয়ে বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে, সেখানে নারী শিক্ষার অগ্রগতি বিশেষভাবে সমাদৃত। রোকেয়া নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেটি বিবেচনায় রেখে আমরা বলতে পারিÑ আজকের বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক অবদান অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল। এক দশকে নারীকর্মী ১২ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪০ লাখে। লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নতির লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। নারী সাহসী হয়েছে, কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলেছে এবং নিজের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নিজেও সচেষ্ট হয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ব্যাপক উপস্থিতি প্রত্যাশিত।
×