ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবিদ্যুতে বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জলবিদ্যুতে বিনিয়োগ

সার্কভুক্ত দেশগুলো নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যুত আদান-প্রদানের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। এরই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুত উৎপাদন করতে যাচ্ছে। এই দুটি দেশে বিনিয়োগের জন্য নয়া একটি বিদ্যুত কোম্পানি গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জলবিদ্যুত উৎপাদনে এই খাতে বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত বিদ্যুত কেন্দ্র করা হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজনে তৃতীয় কোন অভিজ্ঞ কোম্পানিকে সংযুক্ত করা হতে পারে। উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি অংশ পাবে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনাতেও ছয় হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সার্কভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা চালায় এবং ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেডের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। অবশ্য এই আলোচনার আগেই বাংলাদেশ-ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করছে। যা দৃষ্টান্ত হিসেবে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। কোন দেশে বিদ্যুত সরবরাহ করতে তৃতীয় কোন দেশের সহায়তার প্রয়োজন হলেও তা করা বিষয়ে দেশগুলো নীতিগতভাবে সম্মত রয়েছে। এর বাইরেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভুটানে একটি জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছে। কুড়ি-১ নামের এ বিদ্যুত প্রকল্পটি হবে এক হাজার এক শ’ পঁচিশ মেগাওয়াটের। এ জন্য বাংলাদেশ; ভারত ও ভুটানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি সই হতে যাচ্ছে। গত জানুয়ারিতে এই চুক্তির খসড়া বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে ভুটান। এর ওপর দুটি দেশই তাদের মতামত দিয়েছে। ভুটান এখন তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। দেশগুলো অচিরেই এই সমঝোতা স্মারকে সই করবে। সইয়ের পর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। বর্তমানে ভুটানের উৎপাদিত বিদ্যুতের অধিকাংশই ভারতে রফতানি হয়। অবশ্য এই বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই ভারতের অনুদানে ও বিনিয়োগে নির্মিত। পাশাপাশি নেপালে বর্তমানে আট শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হয়। অথচ ত্রিশ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির। ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে নেপালে। বাংলাদেশ অবশ্য চাইছে মিয়ানমারও সংযুক্ত হোক। তাতে আরও বেশি সুবিধা পাবে দেশগুলো। মিয়ানমারের প্রায় চল্লিশ হাজার মেগাওয়াটের জলবিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলো দেশে কেন্দ্র স্থাপনে কয়েকটি চুক্তিও করেছে। জলবিদ্যুত উৎপাদন খাতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সার্ক দেশগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী। এ নিয়ে আলোচনাও চলছে। বাংলাদেশ জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে অধিক আগ্রহী। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুত কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে বর্ষা মৌসুমে দুই শ’ ত্রিশ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায় না। দেশে নতুন করে জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে বিনিয়োগে আগ্রহী। দুটি দেশের জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনাকে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে চায়। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলেও বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ অবশ্যই যুগান্তকারী।
×