ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্যাসিস্ট সিস্টেমের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগ্রাম সহজ নয় ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফ্যাসিস্ট সিস্টেমের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগ্রাম সহজ নয় ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই না। শুক্রবার সকালে রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মধ্যবর্তী নয়, আমরা এখনই নির্বাচন চাই। সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যদিও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ একমত হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা সে জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে গেছেন। বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে কিভাবে বিরোধী দলকে ধ্বংস করা যায়, নিশ্চিহ্ন করা যায়, এখন তারা সে কাজটি করছেন। বিএনপি কি আন্দোলন থেকে সরে এসেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট সিস্টেমের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগ্রাম সহজ নয়। তাই এখন আন্দোলনের কৌশল এবং প্যাটার্ন চেঞ্জ হয়েছে। আপনারা হয়ত দৃশ্যমান কিছু দেখতে পারছেন না। তবে আমরা কাজ করছি। সবকিছু গুছিয়ে পুনরায় গণসংযোগে নামব। সেখানে ম্যাডাম খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা থাকবেন। নিশ্চয়ই একদিন দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে এবং এ অবস্থার পরিবর্তন করবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে ফাঁসি হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁসের ঘটনায় সাইবার ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে তার আইনজীবীর সাজার আদেশ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আইসিটি মামলায় ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম সাহেবকে দশ বছর জেল দেয়া হয়েছে। তার অপরাধ কী? সত্য কথা বলার অপরাধ? সত্য কিছু কাগজ তিনি তুলে ধরেছেনÑ এটাই অপরাধ? বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে স্বৈরাচারী কায়দায় ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। ওয়ান-ইলেভেনের মতো আওয়ামী লীগ দেশে বিরাজনীতিকরণ করছে। কিন্তু একটি কথা খুব স্পষ্টÑ জনগণ একদিন এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেই। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হলে বিএনপিকে লাগবে। বিএনপিকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হবে না। আওয়ামী লীগ অনৈতিকভাবে কৌশলে ক্ষমতা দখল করে আছে। কিন্তু বেশি দিন এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদে আজ রামপাল নিয়ে কোন আলোচনা হয় না। যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকত তাহলে এমনটা হতো না। দেশের গণতন্ত্র কোন পথে? আমরা কি সিরিয়া-লিবিয়া হতে যাচ্ছি? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অন্য রাজনৈতিক দলকে কথা বলতে দিচ্ছে না। রাজনৈতিক নেতাদের হেয়প্রতিপন্ন করছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এ কারণে গোটা দেশে অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী যখন পাস হয়, তখনই আমরা বলেছিলাম, একটা বিষবৃক্ষ বপন করা হলো। এটা সারাদেশে অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা ও সহিংসতা সৃষ্টি করবে। কারণ আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতিতে মানুষ একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। নির্বাচনটা এখানে উৎসবের মতো হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই অধিকার থেকে দেশের মানুষ আজ বঞ্চিত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন মানুষের সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মূল সঙ্কট এখানেই। বর্তমান সরকার উল্টো পথে চলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এতে শুধু বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। যে শোলাকিয়ায় আগে লাখ লাখ মানুষ ঈদের নামাজ পড়তে যেত, সেখানে এবার এক হাজার মানুষও যায়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ডাকা জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐক্যের ডাকে কয়জন এলোÑ সেটা কোন ব্যাপার নয়। আমরা মনে করেছি, জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া ওই মুহূর্তের জন্য প্রয়োজন ছিল। তাই খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সরকারকেও তিনি এ ঐক্যে শামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু তারা সে ডাকে তো সাড়া দেয়ইনি, উল্টো বলছে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হবে না। দেশে ‘বাক্স্বাধীনতা নেই’ অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ৩৫টি অনলাইন পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয় এক কথায়। এটা কি একটা গণতান্ত্রিক দেশ? তিনি বলেন, ভারতের জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একবার কাশ্মীর নিয়ে কিছু বলল। সরকার কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করল। ভারতের সুপ্রীমকোর্ট রায় দিল কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা হয় না। তাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নেয়া ও কবর সরিয়ে নেয়ার ঘোষণায় সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান তাদের কাছে বড় একটা সমস্যা। কারণ যখনই নিরপেক্ষ ও নির্মোহ ইতিহাস রচিত হয়, তখনই দেখা যায় স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণাটা সত্যিকার অর্থেই জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে এসেছিল। এমনকি ইন্ডিয়ান আর্কাইভসের হিস্টোরিতে পরিষ্কার উল্লেখ আছে জিয়াউর রহমানের ঘোষণাটা সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ‘দ্যাট ইজ আওয়ার পয়েন্ট।’ আমরা তো কাউকে খাটো করতে চাই না। দীর্ঘকাল ধরে দেশের স্বাধীনতার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন করেছেন। আওয়ামী লীগ আন্দোলন সংগ্রাম করা একটি দল। এটা তো আমরা অস্বীকার করি না।
×