ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিকম্প সহিষ্ণু দশ তলা ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে ॥ ৯৮২ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাইকা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর যাচ্ছে মিরপুরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর যাচ্ছে মিরপুরে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গুলিস্তান থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় নেয়া হচ্ছে মিরপুর ১০ নম্বরে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং কমপ্লেক্স ভেঙ্গে সেখানে করা হবে নতুন এই অধিদফতর। গড়ে তোলা হবে ভূমিকম্পসহিষ্ণু ১০ তলা ভবন। পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়াতে ঢাকা জেলার মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি স্টেশন সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। এ জন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ হারে ঋণ সহায়তা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে সামাজিক ঝুঁকি উন্নয়নের লক্ষ্যে জাইকার সহায়তায় ‘আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্ট (ইউবিএসপি)’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারী (জিওবি) তহবিলসহ এ প্রকল্পের মোট তহবিলের আকার প্রায় দেড় হাজার কোটি ইয়েন। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ সহায়তা ১ হাজার ২০৮ কোটি ৬০ লাখ ইয়েন। আর বাংলাদেশ সরকারের অংশ বাকি প্রায় ১৯৫ কোটি ইয়েন। এই তহবিল থেকে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকম্পসহিষ্ণু প্রধান কার্যালয় নির্মাণ, নয়টি ফায়ার স্টেশন সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন এবং তিনটি আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কিনতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ জন্য ৫৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিলের সম্পূর্ণ টাকা ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা উন্নয়নে খরচ করা হবে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ সহায়তার অংশ ৪৭৪ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা সরকারের অংশ থেকে নেয়া হবে। প্রস্তাবে প্রথমে এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটির মেয়াদ কমিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পের আওতাধীন সকল কাজ শেষ করতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয় গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। এর কিছুদিন পরেই জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই হয়। একনেকে প্রকল্পটি পাস হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আর সরকারী আদেশ জারি হয়েছে মার্চে। বর্তমানে প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। সূত্র মতে, মিরপুর ১০ নম্বরের যে স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্স রয়েছে ওই স্থানেই গড়ে তোলা হবে ভূমিকম্পসহিষ্ণু ফায়ার সার্ভিসের ১০ তলাবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়। এ কার্যালয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হবে যে কোন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় সক্রিয় থাকা। এমনকি বিদ্যুত না থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়টি সক্রিয় থাকবে। অত্যাধুনিক এ প্রধান কার্যালয় গড়ে তুলতে খরচ হবে ২৪৭ কোটি ৫১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। আর মিরপুর ১০ নম্বরে বর্তমানে অবস্থিত ট্রেনিং কমপ্লেক্সটি সরিয়ে ঢাকা শহরের বাইরে নেয়া হবে। ‘আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় ২৭ কোটি ২২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি স্টেশন সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। এ নয়টি ফায়ার স্টেশনের মধ্যে রয়েছে Ñডেমরা, কুর্মিটোলা, মোহাম্মদপুর, বারিধারা, মিরপুর, পোস্তগোলা, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই ফায়ার স্টেশন। এ নয়টি ফায়ার স্টেশন আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি প্রতিটির দুটি করে ফ্লোর সম্প্রসারণ করা হবে। একই সঙ্গে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনটি আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কেনা হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ তাদের পছন্দ অনুযায়ী এ আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি যে কোন ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দ দিতে পারবে। এ প্রসঙ্গে ‘আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্টে’র প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ বলেন, জাইকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-সহযোগী। জাইকা থেকে নামমাত্র সুদে ঋণ সহায়তা নিয়ে ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে সামাজিক ঝুঁকি উন্নয়ন করতে আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোন দুর্যোগ দেখা দিলে সবার আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে যায়। তাই নিরাপত্তার জন্য সবার আগে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে ফায়ার সার্ভিস উপযুক্ত থাকে। এ জন্য প্রকল্পের অর্থ দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, আশা করছি, ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকল্পের আওতায় নেয়া সকল কাজ শেষ করতে পারব। বর্তমানে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। আর আধুনিক যে তিনটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা চলতি বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত অপর এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের যে কোন ডিজাস্টারে সহায়তা করতে ফায়ার সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি অরক্ষিত থাকি তাহলে কাজ করব কী করে। সবার আগে আমাদের (ফায়ার সার্ভিসের) সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। জাইকার সহায়তায় যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। ট্রেনিং কমপ্লেক্স ভেঙ্গে প্রধান কার্যালয় নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ তলাবিশিষ্ট ফায়ার সার্ভিসের যে প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হবে তা দেশের প্রথম ভূমিকম্পসহিষ্ণু ভবন হবে। এখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। আর ট্রেনিং কমপ্লেক্সটি শহরের বাইরে সরিয়ে নেয়া হবে। সাধারণত প্রশিক্ষণকেন্দ্র শহরের বাইরেই হয়। মিরপুর থেকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি সরিয়ে নিয়ে ঢাকা শহরের আশপাশেই নতুন করে স্থাপন করা হবে।
×