ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ হয়ে গেল নিজ ঘরে ঈদের আনন্দ, এবার কর্মস্থলে ফেরার পালা...

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শেষ হয়ে গেল নিজ ঘরে ঈদের আনন্দ, এবার কর্মস্থলে ফেরার পালা...

সমুদ্র হক ॥ প্রিয়জন, আপনজন, নিকটজন ও স্বজনদের ক্ষণিকের ধরে রাখার সময় শেষ হয়ে এলো। দিনকয়েকের আনন্দের ধারা শেষে বেহালায় আরেক সুর। চোখের ওই কোণ থেকে অশ্রুর স্রোতরেখা ঠোঁটের প্রান্তে এসে যেন বৈশাখী নদী। ঈদের আগে ঘরে ফেরার কি-ই না ঝক্কি! তবু আনন্দ। নিজের ঘরে ঈদ। ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরা। দিনকয়েকের মধুময় স্মৃতি। ফিরে যাওয়ার ক্ষণগুলো জীবনের ক্যানভাসে আঁকা চিরন্তন হয়ে ওঠার একেকটি ছবি। কবিগুরুর কবিতার ছন্দ ‘দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি বেলা দ্বিপ্রহর... গভীর ক্রন্দন যেতে নাহি দিব, হায় তবু যেতে দিতে হয় তবু চলে যায়...’। সন্তান যত বড় হোক মা-বাবার কাছে সব সময় সেই ছোট্ট শিশুটি রয়ে যায়। ঈদে ঘরে ফেরার পর সন্তানকে দেখে চোখে আনন্দের অশ্রু। শরীরটা কী শুকিয়ে গেছে। কী মলিন দেখাচ্ছে মুখটা। সন্তান ঘরে এলে মা-বাবা তাকে এভাবেই দেখেন। এ যেন স্বর্গীয় স্নেহ-মমত্বের অপার আবেগের কণ্ঠ। ঈদের দিনকয়েক সে আবেগে সন্তানকে কাছে পাওয়া। কাজে ফেরার সময় হলে চোখের কোণে জমে থাকা আবেগের জল একটু করে গড়াতে থাকে। সন্তানের ব্যাগে যতটা পারা যায় কিছু দেয়া। বাটিতে প্যাকেটে পুঁটলিতে কত খাবার কত কী ব্যাগে এঁটে দেয়া। তারপর সন্তানের আবেগ- মা এত কী দিচ্ছ। ব্যাগ ভারি হয়ে যাবে। প্রত্যুত্তর, মায়ের দেয়া জিনিস কখনও ভারি হয় না। স্নেহের এ অর্ঘ্যে অপার শ্রদ্ধায় সন্তান অদৃশ্যেই মাথা ঠেকায় তাতে। মায়ের এ মমতা স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলে যায় উপরে। ঈদের ক্ষণগুলো ছেলেমেয়ে, পুত্রবধূ, জামাই, নাতি-নাতনিদের আগমনে বাড়ি এতটাই শোরগোলে মুখরিত হয়ে থাকে যে, বাইরের শব্দগুলো চাপা পাড়ে যায়। এ কোলাহল যেন স্মৃতিময় অধ্যায়, যা কখনও ভুলে যাওয়ার নয়। আজ যারা প্রবীণ ও মধ্যবয়সী মা-বাবাকে নিয়ে তাদের জীবনের ঈদগুলো মনের মুকুরে যেমন গেঁথেছিল, প্রজন্মের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের জীবনেও সঞ্চয়ের একেকটি ধাপ। চলমান ধারা। সন্তান ফিরে যাওয়ার সময় ঘর থেকে বের হলে মায়ের দৃষ্টি সন্তানের দিকে যতদূর কুলায় ততদূর যায়। তারপর সেলফোনে যোগাযোগ না পৌঁছা পর্যন্ত। বর্তমানের প্রযুক্তির দ্রুত এগিয়ে চলার অবারিত ধারায় দূরকে করেছে নিকট। যারা বিদেশ-বিভুঁইয়ে আছে তারাও ঈদের আনন্দে যোগফল হয়ে ঘরে ঢুকেছে ল্যাপটপ, নেটবুক, ট্যাব, স্মার্টফোনের মনিটরে। প্রযুক্তি কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। তবে কেড়ে নিতে পারেনি স্বর্গ থেকে ত্রিভুবনে আলোকিত হয়ে আসা মা-বাবার অপার স্নেহ ও মমতার বাঁধন। জল কেটে যেমন ভাগ করা যায় না এ মমতাও তেমনই। কোন ভাগ নেই। বাস্তবে সন্তানকে কাছে পাওয়া ও স্কাইপে, ভাইবার ইত্যাদি দিয়ে সন্তানকে দূর থেকে নিকটে আনার পার্থক্য শুধুই প্রযুক্তিটি। একটি হাতে ছুঁয়ে কাছে পাওয়া আরেকটি বিজ্ঞানের রশ্মিতে ছবিতে কাছে পাওয়া, যেখানে কোন কাঁচের দেয়ালও নেই। হৃদয়ের অপার স্নেহ এ দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে। ঈদ আসে, তা চলেও যায়। ফের আসে বছর ঘুরে। এ আনন্দকে হৃদয়ের গভীরে ধরে রাখতেই ঈদ বারবার আসে প্রিয়জন, নিকটজন, আপনজন, স্বজনদের নিয়ে। তুলে ধরে স্বর্গীয় স্নেহ-মমত্বের ভুবন। এ খেলা চলছে নিরন্তর...।
×