ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ গ্রেডের চামড়া পেয়ে খুশি ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এ গ্রেডের চামড়া পেয়ে খুশি ব্যবসায়ীরা

এম শাহজাহান ॥ উৎকৃষ্ট মানের ‘এ’ গ্রেডের চামড়া এসেছে এবার পোস্তার আড়তগুলোতে। দেশী জাতীয় বড় সাইজের গরু কোরবানি হওয়ায় খুশি চামড়া ব্যবসায়ীরা। প্রতিপিস ২৫ বর্গফুট গরুর চামড়ার বিশেষ ‘কদর’ রয়েছে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে। এছাড়া এসব চামড়ার রফতানি মূল্যও ভাল পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত পোস্তার আড়তগুলোতে যত চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে তার বেশির ভাগের সাইজ হচ্ছে ২৫ বর্গফুটের মধ্যে বা তারও উপরে। তাই উচ্চমূল্যে কিনে তা পানির দরে বিক্রি করায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ধরা খেলেও পোস্তার আড়তদাররা এবার চামড়ায় ভাল মুনাফা করতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে রাজধানীর ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো থেকে কোরবানির প্রায় ৮০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন আড়তমালিকরা। জানা গেছে, কাঁচা চামড়ার দাম কমাতে বছরের শুরু থেকে ট্যানারি মালিকরা নানা ধরনের ফন্দিফিকির ও কৌশল নিয়ে আসছিল। আড়তদারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, ‘এ’ গ্রেডের হলেই কেবল লবণযুক্ত চামড়া প্রতিবর্গফুটে ৫০ টাকা দাম দেয়া যাবে। এতে করে পোস্তায় সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের প্রতিপিস গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২৫০ টাকা। লবণহীন এই চামড়া কিনে নেয়া হয়েছে পানির দরে মাত্র ৫০০-৬০০ টাকায়। লবণযুক্ত প্রতিবর্গফুট এই চামড়া আড়ত থেকে ট্যানারিতে বিক্রি হবে ৬৫-৭০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিপিস গরুর চামড়ায় এবার আড়তমালিকরা ৩২৫ থেকে ৫০০ টাকা মুনাফা করতে যাচ্ছেন। যদিও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে লবণহীন প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়ার এখন বাজারমূল্য হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে কাঁচা চামড়ার আড়তমালিকদের বড় সংগঠন বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজী মোঃ টিপু সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিপিস উৎকৃষ্টমানের গরুর চামড়ায় এবার ১০০-১৫০ টাকা মুনাফা করতে পারবেন আড়তদাররা। এবার দেশী জাতীয় গরুর সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের চামড়া আড়তগুলোতে এসেছে। এসব চামড়া বায়ারদের খুব পছন্দ এবং রফতানি মূল্যও বেশি। তিনি বলেন, হুটহাট করে কারও এই ব্যবসায়ে আসা উচিত নয়। শত বছরে তিলে তিলে পোস্তায় চামড়া ব্যবসা গড়ে উঠেছে। যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারাও পুরনো। তাই না জেনে শুনে কারও এই ব্যবসায় আসা উচিত নয়। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তো ব্যবসায়ী নয়। তাই না বুঝে বাড়তি দাম দিয়ে তারা ধরা খেয়েছেন। এখানে আড়তদারদের কিছু করার নেই। এদিকে, বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস এ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, চামড়া খাত সংশ্লিষ্ট তিন সংগঠনের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে চামড়া কিনে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লোকসান করেছেন। তাদের দাবি, পোস্তায় এবার গড়ে প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়া কেনা হয়েছে ৪০-৫০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, পোস্তায় এবার ৫০০শ’ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকা দর পর্যন্ত প্রতিটি গরুর কাঁচা চামড়া কেনা-বেচা হয়েছে। পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ী, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকারী এবং রফতানিকারক মেসার্স হালিম এ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী হাজী মোঃ হালিম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা গড়ে ৪০-৫০ টাকা দরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছি। গড়ে প্রতিটি চামড়ার ক্রয়মূল্য পড়েছে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি জানান, কোরবানির প্রথম দিন তিনি দুই হাজার পিস চামড়া কিনেছেন। এছাড়া এখনও চামড়া কেনা হচ্ছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে কিনে লোকসান করলেও আড়তদাররা এবার সেই ভুল করেনি। ফলে আড়তমালিকরা এবার ভাল মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মন্দের ভাল, এবার ট্যানারি মালিকরা সেইভাবে টাকা ছাড়েনি। মাঠে টাকার সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলে চামড়ার দাম কিছুটা বাড়ত। সেই ক্ষেত্রে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও কিছু মুনাফা করতে পারতেন। এদিকে, পোস্তায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আড়তদাররা গোডাউনগুলোতে চামড়া লবণ দিয়ে স্তূপ করে রেখেছেন। তবে লবণের দাম বাড়ার কারণে এবার প্রক্রিয়াকরণের খরচ বেড়েছে। হাজী সমীর এ্যান্ড সন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ৭০ কেজি লবণের বস্তা এবার ১,৫০০-১,৬০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। গত বছর এই লবণ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে লবণের চড়া দাম আর গরমের কারণে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হওয়ার যে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিল, তা অনেকটাই দূর হয়েছে। দাম বেশি হলেও লবণ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির পর মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া দ্রুত আড়তে নিয়ে আসায় এবার তারা নষ্ট চামড়া পাচ্ছেন কম। তবে লবণের দাম স্বাভাবিক হলে চামড়া সংরক্ষণে আরও সুবিধা হতো বলে মনে করেন তারা। এদিকে, সারাদেশের মতো, ময়মনসিংহেও পানির দরে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির চামড়া। ময়মনসিংহ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেকে বাজারে নিয়ে আসা চামড়া ড্রেনে ও ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক দামেও এই জেলায় চামড়া বেচাকেনা হয়নি। তবে নির্ধারিত দাম না পেয়ে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের চোখে পানি এলেও খুশি পোস্তার আড়তদার ও হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা। কারণ, লবণের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অজুহাতে অনেকটা পানির দরে চামড়া কিনে নিলেন তারা। আর বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনলেন। এছাড়া এবার ট্যানারি মালিকরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ টাকায় এবং ঢাকার বাইরে এর ৪০ টাকায় কেনার ঘোষণা দেন। এছাড়া সারাদেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকায় সংগ্রহ করা হবে বলে জানান তারা। সাধারণত বড় গরুর একটি চামড়া ২৫ বর্গফুট এবং খাসির চামড়া ৪ বর্গফুট হয়ে থাকে। সেই হিসাবে একটি খাসির চামড়া ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা কেনা হয়েছে মাত্র ৩০-৪০ টাকায়। এ নিয়েও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
×