ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড়ে ঠাসা বাস-ট্রেন লঞ্চ টার্মিনাল

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড়ে ঠাসা বাস-ট্রেন লঞ্চ টার্মিনাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ঢাকামুখী চাপ বাড়ছে ঘরে ফেরা মানুষের। শুক্রবার ছুটির দিন ভোর থেকেই নৌ-রেল-সড়কপথে সমানতালে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে টিকেট পেতে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন সবাই। এদিকে, বাড়ি ফিরতে ভোগান্তি হলেও ঢাকায় ফিরতে সড়কপথে বা ফেরিঘাটে কোন যানজট নেই। বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণ গেছে অনেকের। নগরীতে মানুষের চাপ বাড়লেও এখনও ফাঁকা রাস্তাঘাট। সিগন্যাল ছাড়াই চলছে সকল যানবাহন। ফাঁকা রাস্তায় ভ্রমণপিপাসু মানুষদের ঘোরাফেরার দৃশ্য খুবই লক্ষণীয়। ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীবাসী। বাস, ট্রেন আর লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে তাই ঈদফেরত মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঈদের নির্ধারিত ছুটির বাইরে ১১ সেপ্টেম্বর সরকারী ছুটি ঘোষণা করায় এবার ঈদে ছয় দিনের টানা ছুটি মিলেছে। আনুষ্ঠানিক ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার প্রথম কর্মদিবসেও ঢাকা ছিল ফাঁকা। সেদিন ঐচ্ছিক ছুটি কাটিয়ে সরকারী কর্মচারীদের অনেকেই পরিবার নিয়ে ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন শুক্রবার থেকে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রবিবার থেকে রাজধানী তার পুরনো চেহারায় ফিরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সড়কপথে ফিরতিযাত্রার চাপ বেড়েছে। সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গত দু’দিনের তুলনায় বেশি বাস বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তারা। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় বেড়েছে। অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেটে ঢাকায় ফিরছেন। তবে ঢাকা থেকে বিভিন্ন শহরে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যাও কম নয় বলে জানান তিনি। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, চাঁদপুর থেকে যাত্রী বেশি আসছে। কুমিল্লা থেকে আসা যাত্রী সংখ্যাও কম নয়। শরিবার ভিড় আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। শুক্রবার সকালে কমলাপুর স্টেশনেও ঈদফেরত মানুষের ভিড় দেখা গেছে। দুপুর বারোটায় স্টেশনে আসা নোয়াখালী এক্সপ্রেসে ছিল উপচেপড়া ভিড়। পরিপূর্ণ কামরার বাইরেও ট্রেনের ছাদ ও বগির করিডর ছিল ভিড়ে ঠাসা। বিকেল তিনটার দিকে মোহনগঞ্জ থেকে আসা হাওড় এক্সপ্রেসেও ভিড় ছিল ব্যাপক। যাত্রীরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, শুক্রবার দুপুর একটা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে বাইশ ট্রেন ছেড়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে আঠারো ট্রেন কমলাপুরে পৌঁছেছে। সবগুলো ট্রেনই যাত্রীতে ভরপুর ছিল। বিভিন্ন ট্রেনে নতুন বগি সংযোজিত হওয়ার পর এবার ঈদযাত্রা ‘আরও নির্বিঘœ’ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা নামের দুটি ট্রেন নতুন করে যুক্ত হয়েছে এবার। পাশাপাশি চিত্রা, ধূমকেতু, সিল্কসিটিসহ আরও কয়েকটি কোচে বগি সংযোজিত হয়েছে। যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হান্নান চৌধুরী। তিনি জানান, রাত একটার দিকে চট্টগ্রামের অলঙ্কার মোড় থেকে বাসে উঠে ভোর সাড়ে চারটার মধ্যে ঢাকার পান্থপথে বাসায় পৌঁছে যান তিনি। পথে কোন যানজট ছিল না। প্রশস্ত রাস্তায় চলতে গিয়ে যাত্রাবিরতি ছাড়া কোথাও তেমন দাঁড়াতে হয়নি। ভোরে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে বগুড়া থেকে এসে ঢাকার কল্যাণপুরে নামেন আবু হানিফ। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। শনিবার নতুন চাকরিতে যোগ দেব বলে আগেভাগে চলে এলাম। দিনাজপুর থেকে হানিফ পরিবহনে আসা যাত্রী বিল্লাল হোসেন জানান, ঢাকায় ফিরতে কোন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। নিরাপদে আসতে পেরেছি। একুশে পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ঢাকায় ফিরতে অনেক যাত্রীই আগাম টিকেট কিনে রেখেছিলেন। সে অনুযায়ী তাদের বাসগুলো নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসছে। সদরঘাটে এখনও ঘরমুখো যাত্রীর ভিড় রয়েছে। তেমনি ঈদ কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড়ও বেড়েছে। চাঁদপুর থেকে নৌপথে সদরঘাটে এসেছেন আদনান। তিনি বলেন, আসতে কোন ভোগান্তি হয়নি। যাত্রীর চাপ ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। সদরঘাটে দায়িত্বরত নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত দেড় শতাধিক লঞ্চ ঘাটে ভিড়েছে আর ছেড়ে গেছে গোটা ত্রিশের মতো নৌযান। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, সাধারণত যে হারে নৌযানগুলো স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় সেভাবেই আসছে ও ছেড়ে যাচ্ছে। তবে দেশের ৪১ গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা নৌযানে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক বাড়েনি। তবে আগামীকাল থেকে রাজধানীমুখী যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করছেন। যাত্রা বাতিল ॥ ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে এমভি জাহিদ-৪ লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে তিনজন আহত হওয়ার ঘটনায় নৌযানটির শুক্রবারের যাত্রা বাতিল করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। দুপুরে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সকালে সদরঘাটের ১২ নম্বর পন্টুনে ভিড়ে থাকা এমভি জাহিদ-৪ লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয় এমভি সাব্বির ও কর্ণফুলী-১৪। এ সময় এমভি জাহিদ-৪-এর দড়ি ছিঁড়ে পড়ে তিনজন আহত হন। ঘাটে ভেড়ানো বা নোঙর করার পর অন্য লঞ্চ ঘাটে ভেড়ার সময় ধাক্কা লাগবে। তাই বলে পন্টুনের মঠ (যাত্রী ওঠানামা করার পথ) থেকে দড়ি ছিঁড়ে যাবে- এটা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য এমভি জাহিদ-৪-এর যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে লঞ্চটির ম্যানেজার মোঃ লাবলু বলেন, দুর্ঘটনায় এমভি জাহিদ-৪-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো। কিন্তু অন্য দুটি লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না, সেটা অন্যায়। আর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার (লঞ্চ মালিক সমিতি) প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, যদি ঘাটে ভিড়ে থাকা কোন নৌযানের দড়ি ছিঁড়ে যায়, তার বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে অন্যদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হবে না সেটা কিন্তু নয়। এ ঘটনায় যদি এমভি সাব্বির ও কর্ণফুলী জড়িত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×