ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জলপ্রপাত দেখতে কাঁকড়া নদী

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জলপ্রপাত দেখতে কাঁকড়া নদী

দেখে মনে হতে পারে জলপ্রপাত। প্রায় ১০ ফুট উঁচু হাওয়ায় ফুলানো রাবারের বেলুনের ওপর দিয়ে প্রচ- গজর্নে তীব্র বেগে আছড়ে পড়ছে জলধারা। জলপ্রপাত যারা দেখেনি, তারা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীতে এসে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারে। সেচ কাজে নির্মিত রাবার ড্যামের অবিরাম জলবর্ষণকে তারা জলপ্রপাত মনে করতে পারে। এই রাবার ড্যাম প্রকল্প শুষ্ক নদীর দু’কূলের পাঁচ হাজার কৃষক পরিবারের ৫০ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ১০ হাজার মানুষের। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এলাকায় এনেছে নান্দনিক সৌন্দর্য। যা কেউ দেখে হয়ত মনে মনে দেশের গানের দু/এক কলি গুন গুন করে গেয়ে উঠতে পারে। চাষাবাদের বিষয়টি চিন্তা করে কাঁকড়া নদীর ওপর এলজিইডি আট কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩০ ফুট দীর্ঘ রাবার ড্যাম নির্মান কাজ শুরু করে। ২০০১ সালের প্রথমে দেশের দ্বিতীয় এই রাবার ড্যাম প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। এই রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে চিরিরবন্দর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর ১০ কিলোমিটার এবং পাশের ১২ কিলোমিটার কয়েকটি শাখা খাল বছরের পুরো সময় পানিতে ভরা থাকে। এতে দুই হাজার ২০৫ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। কুশলপুর, খোচনা, পশ্চিম সাইতাড়া, দক্ষিণ পলাশবাড়ী, উত্তর ভোলানাথপুর, আন্দারমুহা, অমরপুর, ভিয়াইল, কালিগঞ্জ, তালপুকুর, পুনট্টি, উচিতপুর, তুলসীপুর, নারায়নপুর ও গোবিন্দপুর গ্রামের চার হাজার ৯৫০ কৃষক ড্যামের পানি তাদের জমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হয়েছে। এ অঞ্চলের জমি উবর্রা হওয়া সত্বেও সেচের অভাবে অনাবাদি ছিল। রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়ায় এখন নিয়মিত চারটি ফসল হচ্ছে। আমন, ইরি, আলু, সরিষা, ভুট্টা, গমসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। নদী ও খাল থেকে পানি তুলে কৃষক অনায়াসে জমিতে সেচ দিতে পারছে। আগে এক বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান উৎপন্ন হত। রাবার ড্যাম হওয়ায় সেচ সুবিধার কারণে এখন প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান উৎপন্ন হচ্ছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা সুখে দিন কাটাচ্ছে। এসব কথা জানালেন কৃষক সাধন চন্দ্র রায়, উৎপল চন্দ্র রায়, বেলাল উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম। দেখা গেছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বহমান কাঁকড়া নদীর উপর রাবার ড্যামটি নির্মিত হওয়ায় নদীর উত্তর দিকে যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। কোথাও ১৫ ফুট আবার কোথাও ২০ ফুট গভীর। দেখে মনে হয় যেন বর্ষাকালের পানিতে টইটম্বুর নদী। গাঢ় সবুজ রঙের পানিতে ছুটে চলছে ছোট-বড় নৌকা। এসব নৌকায় চেপে মানুষ ঘাটে ঘাটে পারাপার হচ্ছে। মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করছে। রাবার ড্যামের ওপরে ফুট ব্রীজ ও পাশে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সিমেন্ট কংক্রিটের মনোরম ছাতা, বসার বেঞ্চ ও বাংলো টাইপ ঘর নির্মিত হয়েছে। -সাজেদুর রহমান শিলু দিনাজপুর থেকে
×