ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসে দুই ‘হাইপ্রোফাইল কর্মকর্তা’ নিখোঁজের পর লাশ

কড়া পাহারা তবুও অনিরাপদ ধানমণ্ডি

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কড়া পাহারা তবুও অনিরাপদ ধানমণ্ডি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘কড়া পুলিশ পাহারার’ পরও তিনমাসের ব্যবধানে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে দুই ‘হাইপ্রোফাইল’ ব্যক্তি নিখোঁজের পর লাশ হয়েছেন। দুটি হত্যাকা-ের কোনটিরই রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। দুজন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি এভাবে নিখোঁজের পর লাশ হওয়ার ঘটনায় ধানম-ি এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বন্ধ করা হয়েছে কিছু সড়ক। তাতেও আস্থা পাচ্ছেন না সেখানের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, দুটি ঘটনারই তদন্ত চলছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে। গত ২ এপ্রিল ধানম-ির ৮ নম্বর সড়কের ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে নিখোঁজ হন দৃক পিকচার লাইব্রেরির প্রশাসনিক ও হিসাব কর্মকর্তা ইরফানুল ইসলাম। এ ঘটনায় ওই দিনই দৃকের জেনারেল ম্যানেজার এসএম রেজাউর রহমান বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (জিডি)। ওইদিন বিকেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুঁড়ি এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে লাশটি ইরফানুলের বলে শনাক্ত করেন। এই ঘটনায় কলাবাগান থানায় নিহতের ভাই একটি মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। অপরদিকে, গত ২৩ জুলাই ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট হাসান খালিদ ধানম-ির বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিনদিন পর ২৬ জুলাই বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই মাসের মাথায় দুটি ঘটনার একটিরও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে নিহতদের পরিবারে ক্ষোভ রয়েছে। দুটি নিখোঁজের ঘটনার সময়ই প্রকাশ্য দিন। দিনের বেলায় ধানম-ির মতো একটি ব্যস্ত এলাকা থেকে দুজন মানুষ নিখোঁজ হয়ে লাশ হয়ে যাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিহত ইরফানুলের বড়ভাই ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন বেলা আড়াইটার দিকে আমার ছোট ভাইয়ের ছেলে ফোনে বিষয়টি জানায়। বাবা বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। পরে আমি ধানম-ি যাই। আমাদের পরিচিত পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্য সবাইকে বিষয়টি জানাই। তারা যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেভাবেই কাজ করেছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না। কারণ, ইরফানুল খুবই নীরব একটা ছেলে ছিলেন। তার কোন শত্রু নেই। আমার ধারণা, এটা ছিনতাইয়ের ঘটনা। তবে তাকে ঢাকা থেকে কীভাবে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গেল এটা বুঝতে পারছি না। পথে কারও চোখে পড়ল না! গত তিনমাসেরও বেশি সময় হয়ে গেল এখনও কোন অগ্রগতি হলো না। ইমদাদুল বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়েকবার এসেছিলেন। তিনি কথা বলেছেন আমাদের সঙ্গে। কথা বলেছেন দৃকের সঙ্গেও। দৃক কর্মকর্তারা জানান, অফিসের জন্য টাকা তুলতে প্রাইভেটকার নিয়ে ধানম-ি ৮ নম্বর সড়কের ডাচ-বাংলা ব্যাংকে গিয়েছিলেন ইরফানুল। ব্যাংক থেকে তিনি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংকের সামনে গাড়িচালক তাকে নামিয়ে দিয়ে পাশের ৭ নম্বর সড়কে গিয়ে পার্কিং করেন। ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, টাকা তুলে ইরফান স্বাভাবিকভাবেই বেরিয়ে যান। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, ব্যাংকের সামনে ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারী চক্রের কোন দল ইরফানকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় ফিরোজ ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন একটি বিলের পাশের রাস্তায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, এটি নিখে৭াজ ইরফানুলের লাশ। বর্তমানে দৃক কর্মকর্তার এই মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি আছে কিনা, তা খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে। অপরদিকে, নিখোঁজের তিন দিন পর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিবিসিসিআই) সভাপতি হাসান খালেদের লাশ। খোলামোড়া লঞ্চঘাট এলাকায় মাঝ নদীতে ভাসমান লাশটি উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। খবর পেয়ে ছোট ভাই মুরাদ হাসান থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ ধারণা করছে, অপহরণের পর পরই হাসান খালেদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। আর লাশ গুম করতে ফেলে দেয়া হয় বুড়িগঙ্গায়। নিহতের ভগ্নিপতি আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসান খালেদ স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে রাইফেলস স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রী জেবাকে নিয়ে ধানম-ির ৪/এ নম্বর রোডে ৪৫ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন। সকালে নাস্তার আগে তার ওষুধ খেতে হয়। নাস্তার টেবিলে বসার সময় তিনি দেখতে পান সকালের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। এরপর নাস্তা না করেই তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছে ওষুধ আনার কথা বলে নিচে নামেন। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরিচিত ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে খোঁজ নেয়া হয়। সারাদিন কোন খোঁজ না পেয়ে রাতে তারা ধানম-ি থানায় জিডি করেন। জিডিতে তিনি হাসান খালেদকে অপহরণ করা হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ঘটনার দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত ব্যবসায়ী হাসান খালেদের মোবাইল ফোনের লোকেশন ছিল ধানম-ির ২৪/এ নম্বর রোড। এর পরপরই মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ধানম-ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। এই মামলাতে কোন অগ্রগতি নেই।
×