ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে সামাজিক প্রতিরোধে

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে সামাজিক প্রতিরোধে

ইভটিজিং এখন কোমলমতি শিশু-কিশোরী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে একটি আতঙ্কিত শব্দ। আমাদের মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার পথে প্রতিনিয়ত বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ। কেউ প্রতিবাদ করে কাউকে বলতেও পারে না। এমনকি বাবা মাকেও না। যদি তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়! কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমন যেন সব দোষ মেয়েদের। অনেক মেয়ে আছে যারা বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানসম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নেয়- এমন নজিরও আছে। আর যারা একটু প্রতিবাদ করে তাদের পরিণতি হয় ভয়াবহ যার উদাহরণ রিশা, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে জীবন দিতে হলো। এই নিষ্ঠুরতা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এভাবে আর কত বাবা-মার বুক খালি হবে? এভাবে কি চলতে দেয়া যায়? আর কত রিশাদের জীবন দিতে হবে বখাটেদের হাতে? এর কি কোন প্রতিকার নেই? ৪-৫ বছরের একটি শিশুকন্যাকেও রেহাই দিচ্ছে না ওইসব বখে যাওয়া কুলাঙ্গাররা। যারা এই কুকর্মটি করছে তারা বয়সে তরুণ। যে বয়সে তারা ব্যস্ত থাকবে লেখাপড়া নিয়ে, অথচ ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদের যাওয়া আসার পথে বাধা সৃষ্টি করছে উত্ত্যক্ত করার মাধ্যমে। রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষ হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু বখাটেদের কেউ কিছুই বলছে না। নিজে বাঁচলে বাপের নাম এমনি অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে, তারা তো আমাদেরই মেয়ে। তবে কেন আমরা এর প্রতিবাদ করছি না? আসলে ওই যে, প্রতিবাদ করতে গেলে যদি আমার মেয়ে বা বোনের কোন ক্ষতি করে! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই সব বখাটের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু কিছু দিন পরেই আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা ঠিকই বেরিয়ে আসছে এবং আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তবে অভিভাবক হিসেবে বাবা মা, ওইসব বখে যাওয়া ছেলে-সন্তানদের দায় কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। কারণ পরিবার হচ্ছে আসল শিক্ষালয় যেখান থেকে সন্তানরা অনেক ভাল কিছু শিখতে পারে। মানবতা-মমত্ববোধ, স্নেহ-ভালবাসা, আন্তরিকতা। কিন্তু একটি পরিবার থেকেই আয়ত্ত করা সম্ভব যা অন্য কোন মাধ্যম থেকেই শেখা যায় না। অথচ বাবা-মা হিসেবে ছেলে কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, সে ঠিকমতো স্কুলে ক্লাস করছে কিনা সে বিষয়গুলো অনেক অভিভাবকই খেয়াল রাখেন না, ছেলের প্রতি অন্ধ বিশ্বাসের ফলে। অভিভাবক হিসেবে বাবা-মা যদি সঠিকভাবে ছেলে-সন্তানদের গাইড করেন তাহলে সেই ছেলে কখনও বখে যাবে না। আজ বাবা-মার একটু উদাসীনতার ফলে তাদের বখে যাওয়া ছেলেদের জন্য কত বাবা-মার বুক খালি হচ্ছে, তার হিসাব কেউ কি রাখছি? এই তো কিছুদিন আগে কুমিল্লার মেয়ে সোহাগী জাহান তনুকে কি নির্মমভাবে খুন হতে হয়। এই নিয়ে ইলেক্ট্রনিক-প্রিন্ট মিডিয়াসহ সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয় । তারপর সব নীরব। সবাই সব ভুলে যায় শুধু ভুলতে পারে না রিশা-তনুর বাবা-মা। সারা জীবন সন্তান হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। বিচারহীনতাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। বখাটে ওই সব খুনীকে যদি দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়, তাহলে মেয়েদের প্রতি সহিংসতা অনেকটাই কমে আসবে। তবে এটাও সত্যি শুধু আইনের আওতায় এনে ওদের সুপথে আনা যাবে না। এখন দরকার শুধু সামাজিক প্রতিরোধ। সমাজকেই এসব বখে যাওয়া ছেলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। একবার রুখে দাঁড়ালে ওরা পার পাবে না। তাই আসুন সবাই মিলে বখাটেদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। সঞ্চিতা পোদ্দার বাসস্ট্যান্ডপাড়া, মেহেরপুর
×