ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘ ছুটি!

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দীর্ঘ ছুটি!

কর্মজীবীর ব্রত হচ্ছে কর্ম বা কাজ করা। কর্মজীবী যেহেতু রোবট নন, মানবসন্তান- তাই তার মেজাজ-মর্জির ওপর কাজের গতি নির্ভর করা অস্বাভাবিক নয়। সবার আগে প্রয়োজন কর্মীর সুস্থতা- শারীরিক ও মানসিক দুটোই। ছোটখাটো মানসিক সমস্যাকে লোকে গ্রাহ্য করে না। সে কর্মীই হন, বা হন কর্মীর নিয়োগদাতা, মানে মালিক। পুরোপুরি অপ্রকৃতিস্থ না হওয়া পর্যন্ত কর্মজীবীর রেহাই নেই। শারীরিক অসুস্থতার জন্য বাৎসরিক ছুটি বরাদ্দ থাকে। কিন্তু কর্মী সুস্থ রয়েছেন ষোলোআনা, অথচ কর্মস্থলে অনুপস্থিত- তাহলে কি অফিসের কাজ হবে? হবে না। ছুটি চাই নানা কারণে। শুধু বিশ্রাম বা বিনোদনলাভের জন্য চাই ছুটি এমন নয়। সারাবছর একজন কর্মী কর্মস্থলে যে কাজ করে চলেন, সেই কাজটি থেকে কয়েকটা দিন দূরে থাকাটাও জরুরী। জরুরী এ জন্য যে এতে নিজের কাজটি সম্পর্কে দূর থেকে মূল্যায়ন করারও সুযোগ মিলে। নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও উদ্যম, সম্ভাবনাগুলোও দৃষ্টিতে এসে ধরা দেয়। ছুটি থেকে ফিরে নতুন উদ্যমে নতুন ভাললাগা নিয়ে পুরনো কাজটির হাল ধরার সুযোগ মিলে। ঈদ মৌসুমের ছুটির ব্যাপারটি অবশ্য আলাদা। এ জন্য বিধিবদ্ধ ছুটি বরাদ্দ থাকে তিন দিন। যিনি রাজধানীর বাইরে কয়েক শ’ কিলোমিটার দূরে পৈত্রিক বাড়িতে ছুটি কাটাতে মানে ঈদ করতে যান, তার কাছে এই তিন দিন একেবারে কড়াকড়ি হিসেবে মাপা। তাছাড়া এবার দূরপাল্লার যাত্রায় মানুষ যে বিবিধ বিড়ম্বনা ও কষ্ট সহ্য করেছেন, যে মাত্রাতিরিক্ত সময় লেগেছে তাতে তিনটে দিন যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। যদিও সবাই সরকারী চাকরি করেন না। যারা সরকারী চাকুরে তারা বড়ই ভাগ্যবান। তারা শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কল্যাণে এবং সরকারের বদান্যতায় পাওয়া একদিন অতিরিক্ত ছুটি- সবমিলিয়ে টানা ছয় দিন ছুটি পেয়ে যান। বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। ঈদের আগে রবিবার ছিল অফিস খোলা। সরকারের পক্ষ থেকে সেদিন ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। তবে এটি বিনিময়যোগ্য ছুটি। শুক্র-শনিÑ এই দু’দিন প্রাপ্য ছুটি থেকে একটি দিন চাকুরেদের অফিস করতে হবে। তাদের অফিস করতে হবে তার পরের শনিবার। ফলে ঈদসংলগ্ন শুক্র-শনিবার জড়িয়ে ঈদের ছুটি আরও দীর্ঘতর করতে (নয় দিন!) কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি বড় অংশ ঈদের পরে বৃহস্পতিবার দিনও ‘অনির্ধারিত’ ছুটি করছেন। অফিসের তালা খুললেও বেশিরভাগ টেবিল থাকছে শূন্য; অফিসে উপস্থিতির হার অতিসামান্য। বেসরকারী-স্বায়ত্তশাসিত-ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র ঈদ-পরবর্তী লাগাতার ছুটি পালিত হতে দেখা যায়। এটা যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। সংবাদপত্রও ছুটি করে। কাগজ তিন দিন বেরোয়নি; সম্পাদকের কলম তিন দিন বন্ধ থাকলেও অনলাইন চালু ছিল। তবে কলম বন্ধ থাকা মানেই কর্মরুদ্ধ থাকা নয়, বরং ছুটির মধ্যেও সাংবাদিকের চোখ-কান-মগজ সচল রাখতে হয়। ঈদের ছুটি শেষে সাংবাদিকেরা কর্মস্থলে যান, দেশের চালিকাশক্তি ঠিক রয়েছে কিনা, ঈদের ছুটির আলস্য থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে কার্যালয়ের কর্মকুশলীরা কাজে যোগ দিতে পারলেন কিনাÑ তার খোঁজ নেয়াও সংবাদমাধ্যমের কর্তব্য বৈকি! এই কাজে বরাবর হতাশাই প্রাপ্তি। কর্মবীর জাতি হিসেবে নিজেদের গৌরবম-িত দেখতে চাইলে বাঙালীকে এই সংস্কৃতি থেকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। আর সে জন্য ছুটির ফাঁদ পাতা এবং তাতে জড়িয়ে থাকার বিলাসিতা তথা কর্মবিমুখতা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার জন্য দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হতে হবে।
×