ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে ৬০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে ৬০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অবকাঠামোর মতো উৎপাদনশীল ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক প্রকল্পে নমনীয় অর্থায়নের পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণে অনমনীয় ঋণসহ মোট ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার চিন্তা করছে সরকার। সম্প্রতি অর্থ বিভাগের ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (আইপিএফএফ) প্রকল্প শেষে পরবর্তী ফলো-অন প্রকল্পের সুদের হার নির্ধারণ সংক্রান্ত এক কার্যপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সাল থেকে আইপিএফএফ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প হিসেবে অর্থবিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত হলেও অর্থবিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত একটি প্রশাসনিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো অবকাঠামো উন্নয়নে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন করা, যাতে স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্যরে ঘাটতি রয়েছে। আইপিএফএফ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের ৫০ মিলিয়ন ডলার ও সরকারের কাউন্টারপার্ট ফান্ডসহ মোট ৬০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল, যার ৯৮ শতাংশ প্রথম তিন বছরে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বেসরকারী খাতে সাতটি পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়, যা জাতীয় গ্রিডে ১৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত সংযোজন করে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের সাফল্য মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সুপরিসর লক্ষ্য তথা সরকার অনুমোদিত পিপিপিভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারী খাতের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য আর্থিক সহায়তার পরিমাণ প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি করে। মোট ৩০৭ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বর্তমানে প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় চলমান রয়েছে, যা আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। অতিরিক্ত অর্থায়নের আওতায় এ পর্যন্ত ৩৬৫ মেগাওয়াট ক্ষতাসম্পন্ন চারটি পাওয়ার প্লান্ট, তিনটি পানি শোধনাগার, একটি ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো ও দেশব্যাপী একটি ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পে প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারের প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ কাউন্টারপার্ট ফান্ড রয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে এখন পর্যন্ত সুদ ও আসল বাবদ প্রায় ৮১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার রিপেমেন্ট পাওয়া গেছে, যা সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এ প্রকল্পের মাধ্যমে বেসরকারী খাতে বিতরণ করা ঋণের কোন রিপেমেন্ট কিস্তি অপরিশোধিত নেই। সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বিশ্বব্যাংক নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। যা অর্থবিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা করে দেখছে। দেখা গেছে, ২০০ মিলিয়ন ডলারের স্কেল আপ ফ্যাসিলিটিজ (এসইউএফ) এবং ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আইডিএ ঋণ ব্লেন্ড করা হলে সর্বমোট ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে ওয়েটেড এ্যাভারেজ ইন্টারেস্ট রেট দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা প্রহণযোগ্য প্রস্তাব। ফলে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থবিভাগ থেকে এ ধরনের একটি প্রস্তাব তাদের জানানোর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বেসরকারী অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ও পিপিপি বিষয়ে কারিগরি সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আইপিএফএফ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে এ প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে আইডিএ ঋণের মতো নমনীয় অর্থায়ন ধীরে ধীরে কমে আসবে এমনটাই স্বাভাবিক। এ প্রেক্ষিতে, অবকাঠামোর মতো উৎপাদনশীল ও প্রবৃদ্ধি সহাযক প্রকল্পে নমনীয় অর্থায়নের পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণে অনমনীয় ঋণ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ।
×