ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিলেসের বিরুদ্ধে ড্রাগ গ্রহণের অভিযোগ!

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিলেসের বিরুদ্ধে ড্রাগ গ্রহণের অভিযোগ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার রিও ডি জেনিরো অলিম্পিক শুরুর আগেই ছিল বিশ্বব্যাপী তোলপাড়। রাশিয়াকে রিও থেকে বহিষ্কার করা হবে এমন অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রাশিয়া পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা পায়নি। সবমিলিয়ে ১১৮ রাশিয়ান ক্রীড়াবিদ নিষিদ্ধ হন অবৈধ ড্রাগ গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য। তবে রাশিয়া বরাবরই দাবি করে আসছিল ঢালাওভাবে শুধু তাদের দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তোলার অর্থ রাজনৈতিক ঈর্ষা। এবার বুঝি তাদের সেই দাবিই সত্য হতে চলেছে। বিশ্ব জিমন্যাস্টিকসে বর্তমানে একক আধিপত্যকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণকন্যা সিমোন বিলেসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ড্রাগ গ্রহণের। চিকিৎসার জন্য উদ্দীপক হিসেবে তিনি যে মিথাইলফেনিডেট ব্যবহার করেন সেটা অলিম্পিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ড্রাগসমূহের মধ্যে অন্যতম। এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বিলেস টুইটারে দাবি করেছেন তিনি বিষয়টি নিয়ে বিন্দুমাত্র লজ্জিত না। আর বিশ্ব ডোপবিরোধী সংস্থা (ডব্লিউএডিএ-ওয়াডা) দাবি করেছেন এ তথ্যগুলো ফাঁস হয়েছে রাশিয়ান হ্যাকাররা তাদের সিস্টেম হ্যাক করার মাধ্যমে। এমনকি এটি নিয়মিত ব্যবহার করেন দুই টেনিস সেনসেশন ভেনাস ও সেরেনা উইলিয়ামসও। ১৯ বছর বয়সী বিলেস গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্ব জিমন্যাস্টিকসে একতরফাভাবে নিজের প্রাধান্য ধরে রেখেছেন। একাধারে জিতেই চলেছেন তিনি। মাত্র ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার খর্বাকায় শরীর নিয়ে তিনি বিমোহিত করে চলেছেন সারা বিশ্বের মন্ত্রমুগ্ধ, সৌন্দর্য পিপাসু দর্শকদের মোহনীয় শারীরিক কসরত দেখিয়ে শৈল্পিক জিমন্যাস্টিকসে। এবার রিও অলিম্পিকে তাই নিশ্চিতভাবেই বিলেস ছিলেন তার ইভেন্টগুলোয় হট ফেবারিট। কাউকে হতাশ করেননি তিনি। সামান্য ভুলের জন্য এক ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতলেও ৪ স্বর্ণ ছিনিয়ে এনেছেন। খর্বাকায় হলেও প্রতিপক্ষের জন্য ধ্বংসাত্মক বলেই তার নাম ‘পকেট রকেট’। সেটার স্বার্থকতাও রক্ষা করেছেন। কিন্তু বিলেস কিভাবে এতটা অপ্রতিরোধ্যভাবে অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছেন? বিস্মিত অনেকেরই প্রশ্ন সেটা। এবার হয় তো অনেকেই সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কারণ বিলেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে রক্তে উদ্দীপনা আনা ড্রাগ মিথাইলফেনিডেট ব্যবহারের। চিকিৎসকদের পরামর্শেই উচ্চমাত্রার কর্মক্ষমতায় যে স্বাচ্ছন্দ্যের ঘাটতি (এডিএইচডি- এটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিসঅর্ডার) তৈরি হয় সেখান থেকে উপশমের জন্যই এই ওষুধটি দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। রাশিয়ান হ্যাকাররা ওয়াডার সিস্টেম হ্যাক করার পর নিশ্চিত হয়েছে এই দ্রব্যটি গ্রহণ করেন জিমন্যাস্ট বিলেস ছাড়াও ইতিহাসের অন্যতম দুই টেনিস সহদোরা ভেনাস উইলিয়ামস ও সেরেনা উইলিয়ামস। অথচ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) নিষিদ্ধ ড্রাগগুলোর তালিকায় অনেক আগে থেকেই মিথাইলফেনিডেট অন্যতম একটি। অথচ রাশিয়ান টেনিস তারকা মারিয়া শারাপোভাকে মেলডোনিয়াম নেয়ার অপরাধে আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (আইটিএফ) ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। সে কারণে তিনি এবারও রিও অলিম্পিকেও অংশ নিতে পারেননি। অথচ, মেলডোনিয়াম নিষিদ্ধ ড্রাগের তালিকায় উঠেছে গত ডিসেম্বরে। এমনকি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাশিয়ান এ্যাথলেটরা ব্যাপক হারে অবৈধ ড্রাগ গ্রহণের ঢালাও অভিযোগে এবার রিও অলিম্পিকে রাশিয়ার ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড দল পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়। ফলে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের কোন ইভেন্টে রাশিয়ান এ্যাথলেটরা ছিলেন না। জোর দাবি উঠেছিল রাশিয়ার পুরো দলটিকেই এবার রিও থেকে বহিষ্কারের। সেটা অবশ্য না করে আইওসি স্বীয় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছিল পরীক্ষণের মাধ্যমে বাছাইয়ের। সবমিলিয়ে ১১৮ রাশিয়ান ক্রীড়াবিদ বাদ পড়েন রিও অলিম্পিকগামী দল থেকে। এবার বিলেসের বিপক্ষেই নিষিদ্ধ ড্রাগ ব্যবহারের অভিযোগ উঠল। এ বিষয়ে বিলেস অবশ্য টুইটারে লিখেছেন- আমি এই পরিস্থিতি নিয়ে বিন্দুমাত্র লজ্জা বোধ করছি না। মেডিক্যালে যদি কাউকে অবশ্যই মিথাইলফেনিডেট নিতে হবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের অনুমোদন আছে। এটা এডিএইচডির ক্ষেত্রেই অনুমোদন করা হয়। ধারাবাহিকভাবে এটি চিকিৎসাক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যেকোন এ্যাথলেটকেই অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে প্রতিযোগিতায় নামার। মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ বিষয়ে বলছেন যে কেউ চাইলে মিথাইলফেনিডেট নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ব্যবহার করতে পারেন অথবা না করলেও তেমন সমস্যা তৈরি হয় না। এটি এ্যাজমার জন্যও ব্যবহার করা হয়, তবে এটি বহুমূত্রের কারণ হয়ে ওঠে। মিথাইলফেনিডেট নিয়ে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অর্থোপেডিক সার্জন ও ক্রীড়া মেডিসিন শারীরবিদ ডেনিস কার্ডন বলেন, ‘এটা নিষিদ্ধ ড্রাগের তালিকায় আছে। এ্যাথলেটরা যারা কোন ড্রাগ নেবেন তার অবশ্যই নিশ্চিতভাবে জানতে হবে সেটি নিষিদ্ধ তালিকায় আছে কিনা।’
×