ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কম দামে পশু কিনে খুশি মনে হাট থেকে ফিরেছেন ক্রেতারা

শেষ মুহূর্তে দেশী গরুর যোগান বেশি হওয়ায় বেপারিদের মাথায় হাত

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শেষ মুহূর্তে দেশী গরুর যোগান বেশি হওয়ায় বেপারিদের মাথায় হাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারত থেকে গরু আসছে না, গরুর দাম বাড়বে- এমন প্রচার শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। ঈদ-উল-আযহার কয়েক মাস আগে থেকেই গণমাধ্যমসহ খামারি পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা ছিল ভারত থেকে গরু আসছে না, তাই এবার গরুর দাম বেশি পড়বে। এমনটি ভেবেই হয়ত গরু ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দাম হাঁকিয়েছিলেন হাটে। কিন্তু তারা খেয়াল করেননি বাংলাদেশের প্রান্তিক কৃষক থেকে খামারিরা নিজেরাই কোরবানির পশু পালন করেছেন চাহিদার বেশি। এরই প্রভাব পড়েছে কোরবানির ঠিক আগ মুহূর্তে। ঈদ-উল-আযহার ঠিক আগের দিনই হাটগুলোতে গরুর যোগান বেশি থাকায় চাহিদা কমে যায়। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে ব্যবসায়ীদের গরু বিক্রি করতে হয়েছে। তাই শেষ দিনে যারা কোরবানির পশু কিনেছেন তারা জিতেছেনই। উল্টো মাথায় হাত গরুর ব্যাপারীদের। অনেকটা পানির দামেই শেষ দিনে তাদের গরু বিক্রি করতে হয়েছে। বাসিরুল ইসলাম পাবনা থেকে তিনটি গরু নিয়ে এসেছিলেন রাজধানীতে অধিক দামের আশায়। দুটি দুই দিন আগেই বিক্রি করেছেন। আর তৃতীয় গরু যেটি সবচেয়ে বড় সেটি বিক্রি করেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি। সোমবার খিলক্ষেত বনরূপা হাটে তার কান্নার দৃশ্য দেখছিলেন আশপাশের উৎসুক মানুষ। কারণ জানতে চাইলে আরও সজোরে কাঁদলেন তিনি। পরে বাসিরুল জানান, গরু বিক্রি করে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে তার। গত রাতে (রবিবার মধ্যরাতে) যে গরু দাম করেছে চার লাখ টাকা, সোমবার সকাল থেকে সেই গরু এক লাখ আশি হাজার টাকার ওপর কেউ দামই বলেনি। বিভ্রান্ত গরু ব্যাপারী না পারছেন বিক্রি করতে, না পারছেন ফেরত নিতে। ঈদ শেষে এমন বড় গরু নিয়ে আরও মহাবিপাকে পড়বেন। সেই সঙ্গে বড় গরু লালন-পালনের খরচও নেহাত কম নয়। সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করে লোকসান দিয়ে হলেও গরুটি বিক্রি করেছেন তিনি। সর্বশেষ ভাগ্যবান ক্রেতা দুই লাখ পঁচিশ হাজার টাকায় কেনেন আগের রাতে চার লাখ টাকা দাম ওঠা গরুটি। তবে ওই গরুর ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গরু বিক্রেতার আফসোস রবিবার রাতেও এক ক্রেতা চার লাখ টাকা নিয়ে ঘুরছিল গরুটি কেনার জন্য। ওই সময়ে গরুটি বিক্রি করলে আজ কাঁদতে হতো না। এমন ঘটনা ঘটেছে অন্যান্য পশুর হাটেও। রাজধানীর গরুর হাটে বড়-ছোট কিংবা মাঝারি সব ধরনের গরু নিয়েই অনেকটা বিপাকে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। গরুর দাম কম, কোন কোন বাজারে ক্রেতাও কম। কোন বাজারে আবার ক্রেতারা শুধুই ঘুরে ঘুরে দাম দেখছেন। ইতোমধ্যেই অনেকেই গরু কিনে নিয়েছেন। আর যারা বাকি আছেন তারাও কেনার জন্য এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ছুটছেন। তবে গরু কিনে অধিকাংশ ক্রেতার মুখেই স্বস্তির হাসি। উল্টো হাসি নেই বিক্রেতার। বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকেই অনেকটা কমতে থাকে গরুর দাম। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, রবিবার রাতে সকল বাজারে অনেক গরুর ট্রাক এসে পৌঁছেছে। যে সকল গরুর ট্রাক রাস্তায় বিভিন্ন জটে আটকে ছিল প্রায় সবই রাতের মধ্যে ঢাকায় প্রবেশ করেছে। আর বাজারে পর্যাপ্ত গরু থাকায় ক্রেতারা এক গরু দেখে ছুটছেন অন্য গরু দেখতে। শুক্রবার অনেকেই শুধু গরু দেখেছেন আর শনিবার কেউ দেখেছেন কেউ কিনেছেন। তবে দাম তখনও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নাগালের মধ্যেই ছিল। যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল বিক্রেতারা গরুর দাম কমাচ্ছে না। এরপরও শনিবার অনেক হাটেই গরু বেচাকেনা ছিল জমজমাট। রবিবার সারাদিন এবং বিশেষ করে রাতে বেচাকেনাটা হয় অনেক বেশি। শেষ দিনে গরুর সঙ্কট হতে পারে কিংবা ভাল ও পছন্দের গরু নাও পাওয়া যেতে পারেÑ এমন আশঙ্কায় যারা হাটে প্রবেশ করেছেন অধিকাংশই গরু কিনেই ফিরেছেন। রবিবার রাতে মাঝারি একটি গরু বিক্রি হয়েছে সত্তর হাজার, পঁচাত্তর হাজার বা আশি হাজারে। অথচ সেই ধরনের গরুই সোমবার ষাট হাজারের বেশি দাম বলছেন না ক্রেতারা। অনেকেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করেছেন। কেউ কেউ আশায় বুক বেঁধে থাকেন ভাল দাম পাবেন সে আশায়। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের আশাতেই থাকতে হয়েছে। কারণ শেষের দিকে ঢাকার বাইরে গরুভর্তি আটকে থাকা ট্রাকগুলো বাজারে ঢোকে।
×