ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আহত তিন নারীর মধ্যে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড মারজানের স্ত্রী রয়েছে

আজিমপুরে নিহত জঙ্গীর প্রকৃত নাম তানভীর কাদেরী

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজিমপুরে নিহত জঙ্গীর প্রকৃত নাম তানভীর কাদেরী

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর আজিমপুরে নিহত জঙ্গীর নাম প্রথমে পুলিশ আবদুল করিম জানালেও পরে জানানো হয় তার নাম জামশেদ ওরফে শমসের। এখন তার প্রকৃত নাম জানানো হয়েছে তানভীর কাদেরী। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা, বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের পশ্চিম বাটিকামারি গ্রামে। আহত অবস্থায় গ্রেফতারকৃত তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে মিরপুর রূপনগরে নিহত মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা নেই, জঙ্গীবিরোধী অভিযানের কয়েক ঘণ্টা আগে এক বছরের শিশুপুত্রসহ বাড়ির বাইরে যাওয়ায় গ্রেফতার হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। তবে আহত অবস্থায় গ্রেফতারকৃত তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড পলাতক নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি রয়েছে। এ ছাড়াও আহত অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া অপর দুই নারী জঙ্গী হচ্ছে, পলাতক আরেক শীর্ষ জঙ্গী নেতা জামান ওরফে বাসারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন ও নিহত জঙ্গী তানভির কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা। তিন নারী জঙ্গীর আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া তিন শিশু সন্তানের মধ্যে দুই জনকে তাদের দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং একজনের বয়স বারোর উর্ধে হওয়ায় তাকে ভিকটিম সাপোর্টে রাখার পরিবর্তে রাখা হয়েছে পুলিশ হেফাজতে। নিহত জঙ্গী তানভীর কাদেরী উচ্চ শিক্ষিত এবং আহত অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে দুই নারী জঙ্গীও উচ্চ শিক্ষিত বলে জানা গেছে। আজিমপুরের নারী জঙ্গী আস্তানায় জঙ্গীবিরোধী অভিযানে হতাহত, গ্রেফতার, অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজিমপুরের জঙ্গী বিরোধী অভিযানে নিহত জঙ্গীর প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে তানভীর কাদেরী। নিহতের বাবা এস এম বাতেন কাদেরী। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের পশ্চিম বাটিকামারি গ্রামের বাড়ি। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে সবার ছোট। মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পর আজিমপুরে নিহত হয় সে। নিহত জঙ্গী তানভীর কাদেরীর বাবা, বড় বোন ও ভগ্নিপতিকে সোমবার গাইবান্ধা সদর থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নিহত তানভীরের বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, তার ছেলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২৭ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়া যাবে বলে জানিয়েছিল। এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের আর কোন যোগাযোগ হয়নি। নিহত তানভীরের সাংগঠনিক নাম আব্দুল করিম। তবে জামশেদ নামে আজিমপুরের বাড়িটি ভাড়া নেয় সে। আবদুল করিম নামের আড়ালে জামশেদ নামে ঢাকার আজিমপুরে বাড়িভাড়া নিয়ে নিহত জঙ্গীর প্রকৃত নাম তানভীর কাদেরী। তানভীরের ইতিবৃত্ত সম্পর্কে তার বাবা বাতেন কাদেরী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক। পরে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে। এরপর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে চাকরি পায়। তানভীর কাদেরীর বাবা ও তাঁর পরিবারের লোকজন গ্রামের মানুষের সঙ্গে খুব একটা মিশত না। ঈদের সময় তানভীর দামী গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসত। বেশি বেতনের ভাল চাকরি করত বলেই স্থানীয়রা জানতেন। তার স্ত্রীও বেশি বেতনের চাকরি করতেন। তানভীরের বাবা আগে চাকরি করতেন। এখন জর্দার ব্যবসা করেন। তানভীরের যমজ ছেলে সন্তান রয়েছে। নিহত তানভীরের নামে গাইবান্ধা কিংবা অন্য কোন থানায় এ পর্যন্ত কোন মামলা ছিল না বা পায়নি বলে পুলিশ জানান। আটককৃত তিন নারী জঙ্গীর পরিচয় ॥ আজিমপুরের নারী জঙ্গী আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় তিন নারী জঙ্গী। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে একজন হচ্ছে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড নব্য জেমএবির শীর্ষ জঙ্গী নেতা পলাতক নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি (২৫)। আফরিন ওরফে প্রিয়তীর গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীর দাপুনিয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে। মারজানের বাড়িও পাবনার হেমায়েতপুরের আফুরিয়া গ্রামে। প্রিয়তির বাবার নাম আব্দুল জলিল। মারজান তার খালাত ভাই। গত জানুয়ারি মাসে মারজান খালাত বোন প্রিয়তিকে বিয়ে করে। এরপর মারজানের সঙ্গে সে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। প্রিয়তী স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেছে। এরপরে আর পড়াশুনা করেনি। অভিযানের সময় জঙ্গী নেতা নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তী ওরফে শারমিন ছুরি নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে ছুরি হাতেই রাস্তায় বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় জনতা ও পুলিশ মিলে শারমিনকে আটক করে। আরেকজন নারী জঙ্গী হচ্ছে, আজিমপুরে নিহত জঙ্গী তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিমের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা (৩৫)। তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিমের স্ত্রী আবেদাতুল আফরিন ওরফে খাদিজা। পরিবারের সদস্যরা তাকে আশা নামে ডাকত। তার বাবার নাম কাউসার আহম্মেদ। আবেদাতুল আফরিন উচ্চশিক্ষিত। স্বামীর পাশাপাশি সেও একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করত। স্বামী তানভীর জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার পর তার হাত ধরে সেও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। এরপর দুজনই একসঙ্গে চাকরি ছেড়ে দেয়। আরেক পলাতক জঙ্গী নেতা জামান ওরফে বাসারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন (২৩)। জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের ঘটনায় লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে এই তিন নারী জঙ্গীর নাম স্বামীর নাম। জঙ্গী বাশারুজ্জামানের স্ত্রী স্নাতকে পড়া অবস্থায় বছর দুয়েক আগে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। তার বাবার নাম আবুল হাসেম। এ ঘটনায় শায়লার পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি জিডিও করা হয়েছিল। বাশারুজ্জামান ওরফে জামান ওরফে চকলেটের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে সে। জঙ্গী আস্তানা থেকে উদ্ধার করা রুহী নামে এক বছর বয়সী শিশুটি তার। ওই শিশুকে আস্তানায় রেখেই সে অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যদের ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া নারী জঙ্গীদের মধ্যে মিরপুরের রূপনগরে নিহত শীর্ষ জঙ্গী নেতা মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা নেই। মিরপুরের রূপনগরে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী পলাতক থাকা জেবুন্নাহার শীলাও উচ্চশিক্ষিত। স্বামীর মাধ্যমেই জঙ্গীবাদে জড়িয়েছে শীলা। শীলা জঙ্গী বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে আজিমপুরের ভাড়া বাড়ি থেকে কোলের এক বছরের সন্তান নিয়ে বাইরে যান। জঙ্গীবিরোধী অভিযান শুরু না হলে তার ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু জঙ্গী বিরোধী অভিযান শুরু হয়ে যাওয়ায় গ্রেফতার হওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে যায় নারী জঙ্গী শীলা। আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানার ঘটনায় লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিট। স্বামীর হাত ধরে জঙ্গী কার্যক্রমে ॥ ঈদের আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় তানভীর কাদেরী ছুরিকাঘাত করে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আত্মহত্যা করেন বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় তিন নারী জঙ্গীকে। তিন নারী জঙ্গীই তিন শীর্ষ জঙ্গীর স্ত্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিস্তারিত পরিচয় উদ্ধার করেছে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। কর্মকর্তারা বলছেন, তিন নারী জঙ্গী একে অপরের পূর্ব-পরিচিত। একজন বাদে বাকিরা উচ্চশিক্ষিত। তিন জনই স্বামীর হাত ধরে জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে আটককৃত তিন নারী জঙ্গী বর্তমানে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসা শেষে তাদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর তাদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টার করা হচ্ছে। নিহত জঙ্গীর ছেলেও জঙ্গী, আসামিও ॥ আজিমপুরে নিহত জঙ্গী তানভীর কাদেরীর দুই যমজ ছেলে রয়েছে। বাবা তানভীর কাদেরী ও আহত অবস্থায় আটক মা আবেদাতুল আফরিন ওরফে খাদিজার হাত ধরে তারাও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এক ছেলে তাহরীম কাদেরী ওরফে রাসেল। আজিমপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের সময়ে জঙ্গী আস্তানা থেকে আটকের পর ওই মামলায় ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে রাসেলকে। আরেক ছেলেকে আগেই কথিত ‘জিহাদের পথে’ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাহরীম ধানম-ির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের লেভেল ‘এইট’-এর ছাত্র ছিল। তবে সে গত কয়েক মাস ধরে স্কুলে অনিয়মিত ছিল। বাবা-মা দু’জনই জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার কারণে জমজ দুই ছেলেকেও মোটিভেট করে জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাহরীম কাদেরী কেন পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং সে প্রকৃতই বাবা-মায়ের মতো জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। তাহরীমের একটি যমজ ভাই রয়েছে। তবে ওই জঙ্গী আস্তানায় তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাহরীমের ওই জমজ ভাইকে ‘জিহাদে’র পথে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সে এখন কোথায় আছে তা জানার চেষ্টা চলছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, কাদেরীর পুরো পরিবারই জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত। রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গীদের আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় নিহত জঙ্গী তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিমের ১৪ বছর বয়সী ছেলে পুলিশের ওপর ছুরি হাতে আক্রমণও করেছিল। এই অভিযানের ঘটনায় রবিবার রাতে লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। জঙ্গী আস্তানা থেকে আটকের পর বর্তমানে সে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হেফাজতে রয়েছে। গত শনিবার রাতে লালবাগ থানাধীন আজিমপুরের ২০৯/৫ নম্বর পিলখানা রোডের একটি ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আহত অবস্থায় তিন নারী জঙ্গী আটক করার সময়ে নিহত করিমের ১৪ বছর বয়সী এই ছেলে জঙ্গী রাসেলকেও আটক করা হয়। ওই জঙ্গী আস্তানা থেকে তার পাসপোর্ট ও ব্যাংকের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরের দিন রবিবার রাতে লালবাগ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় : আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানোর পর লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, বাসার ভেতরে ঢোকার পর একটি কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সোয়াট টিমকে খবর দেয়া হয়। সোয়াট টিমের সদস্যরা ওই কক্ষের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। অভিযানের সময় দু’নারী জঙ্গী ও এক পুরুষ জঙ্গী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পুরুষ জঙ্গী সফল হলেও অপর দু’নারী জঙ্গীকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে ওই বাসায় নক করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমেই পুলিশকে লক্ষ্য করে মরিচের গুঁড়া ও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আরেক নারী জঙ্গী। পরে সাধারণ মানুষের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। শিশু সন্তান হস্তান্তর ॥ আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া তিন শিশুর মধ্যে দুই মেয়ে শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। যে দুই শিশু সন্তানকে হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হচ্ছে, জুনায়রা নুরানী ওরফে পিংকি (১০) এবং সাবিহা জামান (১)। অপর ১৪ বছর বয়সী ছেলে শিশু তাহরিম কাদেরী ওরফে রাসেল মামলার আসামি হওয়ায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া জঙ্গীদের শিশু সন্তানদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গী মেজর জাহিদের বাবা মমিনুল হকসহ স্বজনরা রবিবার বিকেলে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে জাহিদের শিশু কন্যাকে দেখতে যান। সেখান থেকে তারা মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান। জাহিদের শিশু কন্যাকে তারা নিয়ে যাওয়ার জন্যেও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানান। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই মেয়ে শিশুকে নেয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। পুলিশ সেটি যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ওই দুই মেয়ে শিশুকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। দুই শিশুর যারা বৈধ অভিভাবক এবং যাদের সঙ্গে তাদের রক্তের সম্পর্ক আছে তাদের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে। জুনায়রা নুরানী পিংকি রাজধানীর রূপনগরে পুলিশের গুলিতে নিহত জঙ্গী জাহিদের বড় মেয়ে। তার স্ত্রী জেবুন্নেসা শিলা পিংকিকে আজিমপুরের ওই জঙ্গী আস্তানায় তানভীর কাদেরীর কাছে রেখে অভিযানের আগে ছোট মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযানের দিন পিংকিকে উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠায় পুলিশ। পরে তার দাদা-দাদি তাকে নেয়ার জন্য আবেদন করে। সেটি যাচাই-বাছাই করে ঈদের আগের দিন ১২ সেপ্টেম্বর পিংকিকে তাদের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। আরেক শিশু সন্তান হচ্ছে সাবিহা জামান। পলাতক আরেক জঙ্গী নেতা বাসারুজ্জামান ওরফে জামানের মেয়ে। তার স্ত্রীর নাম শায়লা আফরিন। যিনি অভিযানের সময় পুলিশের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। এরপর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সাবিহার নানা-নানি ও দাদা-দাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ উভয় পরিবারকে ডেকে তাকে তাদের তুলে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ সন্তুষ্ট হয়ে দুই শিশুকে হস্তান্তরের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবে বলে জানা গেছে। উদ্ধার হওয়া সাবিহা জামানকে এর আগে নিহত তানভীর কাদেরী ওরফে জামশেদের সন্তান বলা হলেও আসলে ওই শিশুট শায়লার। তার বাবার নাম পলাতক জঙ্গী বাসারুজ্জামান ওরফে জামান। তিনি একজন জঙ্গী নেতা। গোয়েন্দারা এই জঙ্গী নেতাকেও খুঁজছে। পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ঈদের আগে ওই দুই শিশুকে তাদের বৈধ অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুই শিশু সন্তানকে হস্তান্তরের সময় অভিভাবক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার মেয়র, চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে লিখিত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভোটার আইডি কার্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্রও নেয়া হয়েছে। জেবুন্নাহার শীলাকে খুঁজছে পুলিশ ॥ আজিমপুরের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া নব্য ধারা জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষক মিরপুরের রূপনগরে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহারকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, জেবুন্নাহারকে খুঁজতে গিয়েই তারা আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পান। জঙ্গী জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলাও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত। কারণ, স্বামীর মৃত্যুর পর সে স্বজনদের কাছে না গিয়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে অন্য জঙ্গীদের স্ত্রীদের সঙ্গে থাকতে শুরু করে। আজিমপুরে অভিযান শুরুর দু’তিন ঘণ্টা আগে এক বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে কোন কাজে বেরিয়েছিল সে। এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়ে গেলে সে আর ওই বাসায় ফেরেনি। তবে জাহিদের স্ত্রীর অবস্থান জানা গেলে আরও একটি গোপন জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা ।
×