ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস, পথে বসেছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস, পথে বসেছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

এম শাহজাহান ॥ সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজির কারণে সারাদেশে কাঁচা চামড়ার দামে রীতিমতো ধস নেমেছে। প্রতিবর্গফুট চামড়ায় নির্ধারিত ৫০ টাকা দাম কার্যকর না করে ১৫-২০ টাকা কম দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পানির দরে কোরবানির চামড়া কিনে নিয়েছেন ট্যানারি মালিক ও পোস্তার আড়তদাররা। এখন মূলধন হারিয়ে বিপাকে মাঠ পর্যায়ের এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয়, গত বছরের চেয়ে অর্ধেক বা তার চেয়েও কম দামে এ বছর কাঁচা চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। কেনা দামের চেয়ে প্রতিপিস গরুর চামড়ায় ৫০০-৬০০ টাকা লোকসানে বিক্রি করায় বড় ধরনের ‘ধরা’ খেয়েছেন তারা। আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ীকে চোখের পানি ফেলতেও দেখা গেছে। এবারের শিক্ষা নিয়ে অনেকেই বলেছেন ‘ভবিষ্যতে এই ব্যবসায় আর করব না।’ এদিকে, চামড়ার দাম ঘোষণায় এবার ‘লবণযুক্ত’ শব্দটি জুড়ে দেয়ায় সারাদেশে নির্ধারিত দামের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে কাঁচা চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সাধারণত লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করেন না। জবাইকৃত পশু থেকে চামড়া সংগ্রহের পরই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বেপারি ও আড়তদারদের কাছে ছুটে যান সেই চামড়া বিক্রির জন্য। লবণ দিয়ে সাধারণত আড়তেই ওই চামড়া সংরক্ষণ করা হয়। আর তাই প্রতিবর্গফুট চামড়া ৫০ ও ৪০ টাকা নির্ধারিত হলেও সেই দামে ঢাকাসহ দেশের কোথাও চামড়া বেচাকেনা হয়নি। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ঢাকায় প্রতিবর্গফুট লবণহীন চামড়া কেনাবেচা হয়েছে ৩০-৩৫ টাকায়। ফলে মাঠ পর্যায়ে ১২শ’ টাকায় কেনা ২৫ বর্গফুটের একটি গরুর চামড়া ঢাকার আড়তে বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকায়। এই বাস্তবতায় সারাদেশের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এবার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লোকসানের এই বিষয়টি স্বীকার করে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠন বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজী মোঃ টিপু সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, আসলেই এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ধরা খেয়েছেন। আড়তদার, ফড়িয়া এবং বেপারিরা এবার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে এবার এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা ছিল। তাই সব খরচ বাদ দেয়ার পরও আড়তদাররা এবার প্রতিপিস চামড়ায় ১০০ থেকে দেড় শ’ টাকা লাভ করতে পারবেন। আর তারা (মৌসুমী ব্যবসায়ী) লোকসান করলেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন মধ্যরাতের আগ পর্যন্ত যারা পোস্তায় চামড়া এনেছেন তারাও মোটামুটি দাম পেয়েছেন। এরপর যারা লবণহীন চামড়া এনেছেন তারা সত্যিই বড় ধরনের লোকসান করেছেন। কারণ, লবণহীন চামড়া নিতে আড়তদাররা মোটেও উৎসাহিত নয়। প্রতিবর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ঢাকায় ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লবণহীন চামড়া কিনেছেন ৫০ টাকার উপর। তাই তারা যে দামে চামড়া কিনেছেন তার চেয়ে প্রতিবর্গফুট ১৫-২০ টাকা কমে বিক্রি করেছেন। এটাই তাদের লোকসানের বড় কারণ। জানা গেছে, এবার লবণের দাম চড়া। আর কাঁচা চামড়ার প্রাণ হচ্ছে লবণ। আড়তদাররা জানিয়েছেন, গত বছর যে লবণ (প্রতিবস্তা) ৫৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে এবার তা ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। যদিও চামড়ার দর পতনের জন্য আড়তদাররা লবণের মূল্যকেই দায়ী করেছেন। তাদের মতে, লবণের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে চামড়ার দাম কমাতে হয়েছে। তবে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় কাঁচা চামড়া শেষ পর্যন্ত পাচারেরও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ঢাকায় ন্যায্য দাম পাওয়া না গেলে কয়েকটি দেশে চামড়া পাচার হতে পারে। এজন্য চামড়া পাচাররোধে বিজিবি ও পুলিশকে সতর্ক থাকা এবং নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শও দেয়া হয়েছে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, শীঘ্রই আমদানিকৃত লবণ দেশে আসবে। ওই লবণ দেশে আসার পরই দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এছাড়া ভারত থেকে গরু আমদানি হওয়ায় এ বছর কোরবানির সংখ্যাও শেষ পর্যন্ত কিছুটা কমার আশঙ্কা রয়েছে তাদের। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক গরু অবিক্রীত অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কোরবানি কম হতে পারে। সব মিলিয়ে এ বছর ৯০-৯২ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশন। লবণের দাম কমে আসার আশ্বাস বাণিজ্যমন্ত্রীর ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, লবণের দাম কমে আসবে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে দেড়লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়েছে। আরও একলাখ টন আমদানি করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোরবানি সামনে রেখে লবণ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আগে থেকেই প্রচেষ্টা ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ আমদানি করে না, আমরা অনুমতি দেই। চাহিদা নিরূপণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন)। তিনি বলেন, দেশে যারা লবণ চাষ করে তারা যাতে দুটো পয়সা পায়, তাদের স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত হয় সেজন্য লবণ আমদানি উন্মুক্ত নয়। আমরা চাইলে তো পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দিতে পারি। তবে লবণের দাম যাতে আর না বাড়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
×