ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নেপাল ও ভুটানে বিনিয়োগে নতুন বিদ্যুত কোম্পানি করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নেপাল ও ভুটানে বিনিয়োগে নতুন বিদ্যুত কোম্পানি করা হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ নেপাল এবং ভুটানে বিনিয়োগ করতে নতুন একটি বিদ্যুত কোম্পানি করতে যাচ্ছে সরকার। জলবিদ্যুত উৎপাদনে দেশ দুটিতে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে নতুন এই কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের আলোচনার পর দুই দেশই বাংলাদেশের বিনিয়োগের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্র করা হবে প্রয়োজনে তৃতীয় কোন অভিজ্ঞ কোম্পানি থাকবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে। বিদ্যুতের একটি অংশ বাংলাদেশ পাবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনাতেও ছয় হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত আমদানির লক্ষ্য রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে সচিব কমিটি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের খসড়া নিয়ে আলোচনা করেছে। শীঘ্র এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন চাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে নতুন এই কোম্পানি গঠন করা হবে। এর পরই নতুন এই কোম্পানি নেপাল ও ভুটানে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ আলোচনার পর ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড এ সার্কভুক্ত দেশগুলো সম্মত হয়েছে। এর আগেই বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির মাধ্যমে একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যুত আদান-প্রদানের বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে ধরে সার্ক দেশগুলো নিজেদের জ¦ালানি চাহিদা মেটাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন রাষ্ট্রগুলো সেই কার্যক্রম শুরু করছে। বাংলাদেশের এই কোম্পানি গঠনও সেই প্রক্রিয়ার অংশ। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, ভারত, নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশ মিলে একটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে সকল দিনক চূড়ান্ত হবে। তবে এর আগে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা করে যে কোন দুই দেশ সম্মত হলে তারা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবে। কোন দেশে বিদ্যুত নিতে তৃতীয় কোন দেশের সহায়তা প্রয়োজন হলেও তা করার বিষয়ে দেশগুলো নীতিগতভাবে সম্মত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভুটানে একটি জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রাথমিক আলোচনা অনুসারে কুড়ি-১ নামের এ বিদ্যুত প্রকল্পটি হবে এক হাজার ১২৫ মেগাওয়াটের। এজন্য বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সইয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এমওইউ-এর একটি খসড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ এবং ভারতে পাঠায় ভুটান। খসড়া নিজেদের মতামত যুক্ত করে তা আবার থিম্পু ও দিল্লীতে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, শীঘ্রই ওই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করবে দেশগুলো। বর্তমানে ভুটান দেড় হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদন করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি হলো তালা ১ হাজার ২০ মেগাওয়াটে ক্ষমতার। ভুটানের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো অধিকাংশই ভারতের অনুদানে ও বিনিয়োগে নির্মিত। উৎপাদিত বিদ্যুতের বেশি অংশই ভারতে রফতানি হয়। অন্যদিকে নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে মাত্র ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগের সঙ্গে মিয়ানমারকে যুক্ত করতে পারলে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশটিতে প্রায় ৪০ হাজার মেগাওয়াটের জলবিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার এরই মধ্যে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে। যারা এসব বিষয়ে আগে থেকে পারদর্শী। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। তবে চীনা কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকটি চুক্তি করেছে। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুত কেন্দ্র রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত। বর্ষা মৌসুমে ২৩০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুত পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে জলের অভাবে কেন্দ্রটি পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন করতে পারে না। এছাড়া দেশের মধ্যে আর কোন জল বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই। কাপ্তাইতে আরও দুটি ইউনিট বসানোর বিষয়ে আলোচনা হলেও তাকে অলাভজনক বলেই মনে করছে পিডিবি। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, নেপাল ও ভুটানের জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগাতে চাই। এর বাইরে মিয়ানমারও সম্প্রতি জলবিদ্যুত উৎপাদনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে বড় ধরনের জলবিদ্যুত প্রকল্প সকরার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। এজন্য পৃথক কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। এই কোম্পানি দেশে জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা যাচাইয়ের পাশাপাশি বিদেশেও বিনিয়োগ করবে। তিনি বলেন, ভুটান ও নেপালে জলবিদ্যুত খাতে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে। কোম্পানিটি এসব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
×