ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন মামলার তদন্তও শুরু

মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত তদন্ত সংস্থা ৪২ মামলায় ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছে। আরও নতুন মামলার তদন্তে হাত দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ২৬ মামলায় ৫২ জনকে দ- প্রদান করেছে। এর মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যুদ-, এক জনের যাবজ্জীবন, একজনের ৯০ বছরের কারাদ- এবং ২৫ জনকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পলাতক আছে দ-প্রাপ্ত ২১ জন। তা ছাড়াও দ-প্রাপ্ত ও তদন্ত চলছে এমন মামলায শতাধিক আসামি পলাতক রয়েছে। আপীল নিষ্পত্তি শেষে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে ৬ জনের। অন্যদিকে আপীল বিভাগে ৭ মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। ৬ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে আপীল বিভাগে ১৭ জনের মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ২৪টি মামলা বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। ৩২২৯ আসামির বিরুদ্ধে সর্বমোট ৫৮৫টি অভিযোগ আসায় মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে পর্যায়ক্রমে নতুন মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমানে ২৪টি মামলায় বিচার চলছে। এ সমস্ত মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ৭০ জন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশ পলাতক রয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা পুলিশের কাজ। আমাদের কাজ তদন্ত করার পাশাপাশি মামলা পরিচালনা করা। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালে যে সমস্ত মামলা তদন্ত শেষে আসছে সেগুলো দ্রুত যাচাই বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেছেন, তদন্ত সংস্থা মামলাগুলো পর্যাযক্রমে তদন্ত শেষে প্রসিকিউশনে পাঠায়। সেগুলো যাচাই বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে একের পর এক নতুন মামলা আসছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শেষে দ- কার্যকর করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি ট্রাইব্যুনালে যে সমস্ত মামলা আসছে তা সাক্ষী প্রমাণ শেষে দ্রুত শেষ করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করাটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের এখানে নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় তিন হাজার আসামির বিরুদ্ধে ৬ শতাধিক অভিযোগ এসেছে। এ সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে ৪২টি মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেছি। আরও নতুন মামলা তদন্তে হাত দেয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ বিভাগকে এ বিষয়ে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২৬টি মামলার রায় ঘোষণার পর ৭টি মামলা আপীলে নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। যাদের দ- কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামাতের খাজাঞ্চি মীর কাশেম আলীর আপীল নিষ্পত্তি শেষে তাদের দ- কার্যকর করা হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দুই পক্ষের করা রিভিউ আবেদন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তদন্ত সংস্থায় এ পর্যন্ত ৩২২৯ আসামির বিরুদ্ধে সর্বমোট ৫৮৫টি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এই ৫৮৫টি অভিযোগ থেকে পর্যাক্রমে মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। বর্তমানে ২৬টি মামলার মধ্যে কোনটি তদন্তাধীন, ফরমাল চার্জ দাখিলের দিন, অভিযোগ গঠনের অপেক্ষা, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আবার কোনটার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মৌলবীবাজারের আলাউদ্দিন চৌধুরী, লালমিয়া, মোঃ মতিন মিয়া, নেত্রকোনার মহসীন হায়দার চৌধুরী, সালামত উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর পাচাইয়া রাজাকার, আব্দুল খালেক তালুকদার, আলবদর কমান্ডার সামছুল হক, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী, রাজাকার কমান্ডার ইউনুস মৌলবী, রাজাকার আজিজ হাবলু, রাজাকার আব্দুল মতিন, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ফকির, গাইবান্ধার আবু ছালেহ মোঃ আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া আজিজ, হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান বড় মিয়া, ময়মনসিংহের আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজুল্লাহ, হবিঞ্জের লিয়াকত আলী, ঢাকার সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন হোসেন, গোপালগঞ্জের এনায়েত মোল্লা, নোয়াখালীর আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, পটুয়াখালীর আয়নাল খাঁ, মোঃ আশ্রাব আলী খাঁ, বাহ্মণবাড়িয়ার এমদাদুল হক, সাতক্ষীরার আব্দুল খালেক ম-ল, ময়মনসিংহের এম এ হান্নান, শামসুল হোসেন তরফদার, মোঃ এছাহাক সিকদার, সোলায়মান মোল্লা ও আহম্মেদ আলী। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর শতাধিক আসামি পলাতক রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দ-প্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হলো- আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আশরাফুজ্জামান খান, চৌধুরী মঈনুদ্দিন, জাহিদ হোসেন খোকন, হাসান আলী, ফোরকান মল্লিক, আশরাফ হোসেন, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া, নাসির উদ্দিনসহ ২১ জন। বিচার ও তদন্ত চলছে এমন পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছে, অধ্যাপক শরীফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারী, হারুন ও আবুল হাশেম। গাজী মোঃ আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আযহারুল ইসলাম, ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবুর, আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইমসলাম, আব্দুল খালেক মোড়ল ও মশিয়ার রহমান, আবুল কালাম, মোঃ ইউসুফ, আব্দুল কুদ্দুস, সৈয়দ মোঃ হুসাইন ও জয়নাল আবেদীন, কক্সবাজারের মৌলভী জকরিয়া সিকদার, অলি আহমদ, জালাল উদ্দিন প্রকাশ, সাইফুল প্রকাশ সাবুল, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান, আমজাদ আলী, আব্দুল মজিদ প্রকাশ, আ. শুক্কুর, জাকারিয়া, মৌলভী জালাল, আব্দুল আজিজ ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ আরও অনেকে। এদিকে কয়েকটি মামলায় পলাতক আসামিদের বিচার শুরু হচ্ছে। নোয়াখালী জেলার সুধারামের পাঁচজন আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, মোঃ ইউসুফ, মোঃ জয়নাল আবদিন ও মোঃ আব্দুল কুদ্দুস এবং পলাতক আছেন আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর। কক্সবাজারের মহেশখালীর ১৯ জন আসামির মধ্যে গ্রেফতারকৃত পাঁচজন হচ্ছেন- এলডিপির নেতা কক্সবাজার চেম্বারের সাবেক সভাপতি সালামত উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর ওরফে ‘পঁচাইয়া রাজাকার’, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ রশিদ মিয়া, ওসমান গণি, নুরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া। পলাতকরা হচ্ছেন- রমিজ হাসান, জকরিয়া শিকদার, অলি আহমদ, মোঃ জালাল উদ্দিন, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাবুল, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান, আমজাদ আলী, আব্দুল মজিদ, আব্দুল শুক্কুর, মোঃ জাকারিয়া এবং আব্দুল আজিজ। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচ আসামির একটি মামলায় গ্রেফতার আছেন ইউনুস আহমেদ ও ওজায়ের আহমেদ চৌধুরী এবং পলাতক আছেন শামসুল হোসেন তরফদার, নেসার আলী ও মোবারক মিয়া। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের একটি মামলার পলাতক ছয়জন আসামি হচ্ছেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, মোঃ রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, মোঃ আবদুল লতিফ, আবু মুসলেম মোঃ আলী, মোঃ নাজমুল হুদা ও মোঃ আব্দুর রহিম মিয়া। একটি মামলার পলাতক দুই আসামি হচ্ছেন- হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী।
×